বরাবর শুনি যে মেয়েদের উপর অত্যাচার নিয়ে সংবাদ ও সমাজ মাধ্যমে সত্য সরগরম থাকে। কথাটা কি খুব সত্যি? নাকি স্থান, কাল, পাত্র হিসেবে তার তারতম্য হয় । যেমন এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ বিনা কারণে এক আসন্নপ্রসবা বাঙালি মেয়ে সোনালী, স্বামী ও সন্তানের সাথে বাংলাদেশের জেলে আটক। কারণ? সে নাকি বেআইনি ভাবে ভারত থেকে গিয়েছে। কিন্তু সে নিজে যায়নি, যেতেও চায়না। মূল কারণ এই যে ভারতের একটি রাজ্যের সরকার মনে করেছেন তারা যেহেতু মুসলমান এবং বাংলাভাষী অতএব তারা আসলে বাংলাদেশী।ত্রিশ বছর আগে, সোনালীর বাবা ভাদু শেখ সপরিবার কাজের সন্ধানে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সেখানে তিনি তিন দশক ধরে রিকশা চালাতেন, আর তার স্ত্রী কাগজ কুড়োত। সোনালীর বাবার সময় থেকে তারা ভারতের রাজধানীতে কাগজ কুড়িয়ে বাঁচে। ছোট থেকেই সোনালী সেখানে আছে, বিয়েও হয়েছে আর এক বাঙালির সাথে। কিন্তু সরকারের মতে তারা বাংলাদেশী, ফলে যে সোনালী কখনো বিমানবন্দরের ধারে কাছে যাওয়ার কথা ভাবেনি তাকে পরিবার সহ এবং তারই মত আর একটি মেয়েকে সন্তান সহ বিমানে চাপিয়ে অসমের কোনো সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে ধাক্কা দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
এই নিয়ে সত্যিই কি বিরাট আলোড়ন হল! বাংলা ভাষার সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে অন্য ভাষায় এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে মানবাধিকার সংগঠন কিন্তু এই নিয়ে লেখালেখি করেছেন।
সোনালীর বাড়ির অন্যরা নানান উপায়ে, টাকা পয়সা এখানে ওখানে দিয়ে ফিরে এসেছে। সোনালীর খবর পরে যা পাওয়া গেছে তারা বাংলাদেশের জেলে। কাগজপত্র? কয়েক পুরুষের ভিটে মাটির কাগজসহ সরকারের দেওয়া কাগজপত্র সবই আছে। তবু....
সোনালী আসন্নপ্রসবা। পৃথিবীতে তার যে সন্তানটি আসবে, তার কি কোনো দেশ থাকবে?
জানা নেই। সোনালীদের বিপন্ন বাসস্থানে প্রৌঢ় পিতা কোণে বসে কাঁদেন, বারবার তাকে যেতে হয় কলকাতায় আদালতে, যে রাষ্ট্র কোনোদিন তার কোনো কিছুকেই ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি, আজ সেই তাকে সাঁড়াশি আক্রমণ করে চলেছে। সোনালীর মা কথা বলছেন, কাঁদছেন।এই দুর্দিনে বারবার তারা সাংসদ সামিরুল ইসলামের নাম করছেন, যিনি তাদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন । প্রশান্ত ভূষণের মত উকিল তাদের হয়ে সওয়াল করেছেন। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ সদর্থক, এইটুকুই আশার আলো। ভালো লাগল যে স্থানীয় কয়েকজন তাদের সাহায্য করে চলেছেন, নাহলে এ গল্পটাই অন্যরকম হত।
একশ একত্রিশ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে ১৮৯৪ সালে ভারতীয়দের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেখানে ভারতীয়দের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য বিল আনা হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে গান্ধী এই নিয়ে যে লেখাটি লিখেছিলেন তাতে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই নিয়ম গরীব ভারতীয়দের জন্যেই কেন? শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের জন্য তো এই প্রশ্ন ওঠে না।
রাষ্ট্রের কাছে সবাই সমান, এই ভাবনা নিয়েই স্বাধীন ভারতের সংবিধানে জাতি, ধর্ম,বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের একটি ভোটদানের অধিকার সুরক্ষিত। খোদ ইংল্যান্ডে শুধুমাত্র মেয়েদের ভোটাধিকারের জন্যেই লড়তে হয়েছে বহুকাল।
এই সার্বজনীন ভোটের অধিকার গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত এবং ভারতে সবচেয়ে পিছিয়ে রাখা মানুষটিরও শক্তি। এই সময়ে সেই ভোটের অধিকারের উপর আক্রমণ নিয়েই উত্তাল ভারতের রাজনীতি। কাঠগড়ায় আজ ভারতের নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যেভাবে বিহারে ভোটারদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই নিয়ে সরগরম বিহার তথা ভারতবর্ষ। অন্যদিকে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে কীভাবে ভোট চুরি করা হয়েছে, বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী তা সর্বসমক্ষে তুলে ধরেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আরো নষ্ট করেছে।
একসময় এই দেশে নির্বাচন কমিশন তার স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে গৌরবময় ভূমিকা তৈরি করেছিল। টি এন শেষণকে এখনো আমরা মনে রেখেছি কিন্তু আজ শাসকদলের অঙ্গুলি হেলনে কমিশন চলে, তার সদস্য মনোনয়নের সম্পূর্ণ অধিকার এখন শাসকদল কুক্ষিগত করেছে। এর ফলে গোটা দেশেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশন বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এ দেশ বিদেশী অনুপ্রবেশকারীতে ভরে যাচ্ছে এই প্রচার তুঙ্গে চলছে। এর যে কতটুকু সত্যতা তা কিন্তু কোথাও সরকারিভাবে যাচাই করা হয়নি। এখনো পর্যন্ত জনগণনাও হল না। সম্প্রতি সাবির আহমেদ ও অচিন চক্রবর্তী একটি লেখায় দেখিয়েছেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিংবা রেশন, আধার ও ভোটার কার্ডের অনুপাত কোথাও অস্বাভাবিক হারে অনুপ্রবেশের চিহ্ন নেই। সবচেয়ে বড় কথা যে প্রশ্নটা বারবার মনে হচ্ছে তা এটাই যে এদেশে অনুপ্রবেশই কি এখন প্রধান সমস্যা? অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভয়াবহ বেকারত্ব, চূড়ান্ত আর্থিক বৈষম্য, আর তথাকথিত বিকাশের নামে ক্রমান্বয়ে পুঁজিপতিদের জমি দিতে দরিদ্র মানুষের ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়া, আর একদিকে ভয়াবহ পরিবেশ সংকট, এই সমস্যাকে পাশে সরিয়ে ক্রমাগত ঘুসপেটিয়া মন্ত্রোচ্চারণের উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট। মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ এবং তাদের জীবন বিপন্ন করার এই চক্রান্ত এখন দেশ জুড়ে। পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের জন্য আরো সুস্পষ্ট করে বাংলাভাষী এবং বাংলাদেশীকে এখন সমার্থক করা হচ্ছে। অদ্ভুতভাবে লক্ষণীয় যে এই গল্প বিহারেও শোনানো হচ্ছে। কিন্তু সেখানে SIR এ যারা বাদ পড়লেন যারা সবাই মুসলমান নন। সেখানে স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র ও পরিশ্রমী মানুষদের ব্যাপকভাবে নাম বাদ দিয়ে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। যে যাই ভাবুন বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মানুষেরা বিজেপিকে ভোট দেন না। তাদের ছাঁটাই করার জন্য, নির্বাচন কমিশন এমন কিছু নথি চেয়েছিল যেখানে আধার কার্ড এবং রেশন কার্ড ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর, আধার কার্ড যুক্ত করা হয়েছে। এটি কিছুটা স্বস্তি এনেছে। তবুও, এই প্রক্রিয়ায় অনেক বড় অনিয়ম রয়েছে।দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এবং তার নির্দেশে কাজ করা নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে সংবিধান এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেক অনিয়ম চলছে। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন তাদের সন্তোষজনক উত্তর দেওয়াও প্রয়োজন মনে করেনি। বেঙ্গালুরু লোকসভা নির্বাচনের মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে ভোট চুরির ঘটনাটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিহার জুড়ে ১৬ দিনের ভোট অধিকার যাত্রা বহুকাল বাদে বিরোধী ঐক্যকে সংহত করেছে। বিশাল জনসমুদ্রে বক্তব্য রেখে চলেছেন রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি আর জে ডির তেজস্বী যাদব, সিপিআই এম এল লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিহারের ৩৮টি জেলার ২৫ টি জুড়ে প্রায় ১১০ টি বিধানসভা ছুঁয়ে এই যাত্রা এক অভূতপূর্ব সম্ভাবনাকে সামনে এনেছে। সাধারণ মানুষের বিপুল যোগদান প্রমাণ করে যে এদেশের মানুষ ভোটাধিকার নিয়ে কতখানি সচেতন। অবস্থা বুঝে পাঁচিলে বসে থাকা ওড়িশার একদা শাসকের জোটসঙ্গী বর্তমানে পরিত্যক্ত বিজু জনতা দল পথে নামছে। শাসকের বর্তমান জোটসঙ্গী তেলুগু দেশের মুখেও 'গঠনমূলক সমালোচনা'র কথা হচ্ছে।
আজও, সমাজে এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আছেন যারা সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারকে ভুল বলে মনে করেন। গণতন্ত্রের এই মূলাধারটি তাদের অপছন্দ। তারা মনে করেন শিক্ষিত বিত্তবান মানুষেরই ভোটাধিকার থাকা উচিত । বাকিরা তো স্রেফ mass. কেবলমাত্র এই ধরণের লোকেরাই SIR প্রক্রিয়াটিকে সঠিক বলে মনে করতে পারেন।
এসআইআর-এর বিরুদ্ধে জনমত জাগরণ অভিযানে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংঘটিত অনিয়মের অনেক দিক তুলে ধরা হচ্ছে। আগে নির্বাচন কমিশন ভোটদানের সঠিক পরিসংখ্যান দিত, এখন শতাংশে তা দেয়। এতে ভোটদানকারীর সঠিক সংখ্যা বলা হয় না। আগে ভোটদানের পরিসংখ্যান নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় এবং তারপর গভীর রাতে ঘোষণা করা হত! এতে কখনও এক শতাংশের বেশি পার্থক্য ছিল না। এখন, যখন প্রযুক্তি খুব নির্ভুল হয়ে উঠেছে, তখনও সন্ধ্যা এবং গভীর রাত পর্যন্ত পরিসংখ্যানে পাঁচ শতাংশের বেশি পার্থক্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, আগে সাধারণত গভীর রাত পর্যন্ত ভোটদানের পরিসংখ্যানে কোনও পরিবর্তন হত না। এখন, ভোটদানের দিন রাতে ঘোষিত ভোটদানের শতাংশ ছাড়াও, কয়েক দিন পরে ভোটদানের শতাংশ ঘোষণা করা হয় এবং এতেও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আগে, পরিসংখ্যান, ভিডিওগ্রাফি এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানোর উপর কখনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এখন, এমনকি নিয়মগুলিও পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে সেগুলি লুকানো যায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতিবাচক হস্তক্ষেপ বেড়েছে চূড়ান্ত ভোট গণনা ঘোষণা, বিজয়ের শংসাপত্র প্রদান এবং কখনও কখনও প্রদত্ত শংসাপত্র ফিরিয়ে নেওয়া এবং অন্য পক্ষকে বিজয়ের শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে। মহারাষ্ট্রের মারকারবাড়ি গ্রামটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে উঠেছে। এই গ্রামের মানুষ তাদের ভোটের ফলাফল বিশ্বাস করেনি। তারপর তারা নির্বাচনের পরে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে তাদের বুথে পুনরায় ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, একটি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে। কিন্তু নতুন সরকার পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় তাদের এই ভোটদান কর্মসূচিটি ঘটতে দেয়নি। যদি ভোটদান সত্যিই সঠিক হয় তবে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার কী লাভ ছিল? যাই হোক, সেই ভোটদান ফলাফলে কোনও পার্থক্য আনবে না। স্পষ্টতই, সেই ভোটদানের মাধ্যমে যে সত্য প্রকাশিত হত তা নির্বাচনের ফলাফল থেকে আলাদা হবে, এই ভয় কোথাও ছিল। SIR-এর অধীনে, এটি বিশ্বাস করা হয়েছে যে 2003 সালের পরে সমস্ত ভোটার তালিকা বৈধ নয়। 2003 সালের পরে তালিকায় থাকা ভোটারদের নাগরিকত্ব অযাচাইকৃত বা অ-প্রমাণিত। লক্ষ লক্ষ বিদ্যমান তরুণ ভোটারকে খাঁটি না বলে সন্দেহজনক ঘোষণা করা আইনগত বা নীতিগত নয়। আজ পর্যন্ত, কোনও সংশোধনে পুরাতন ভোটার তালিকা বাতিল করা হয়নি। কোনও সংশোধনেই কেবল বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হয়নি। সংযোজন এবং বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া একই সাথে করা হয়েছিল। এবার এই দুটি কাজই করা হয়েছিল। এবার নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে ভোটার তালিকা থেকে কর্মসংস্থানের সন্ধানে বেরিয়ে আসা ব্যক্তিদেরও বাদ দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। সকল প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এর সাথে কোনও হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। ভোটার তালিকার পার্থক্যের কারণে, কোনো বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী বা বর্ণের জনসংখ্যার পার্থক্যের যুক্তিও তৈরি করা যেতে পারে। এইভাবে, এটি বর্ণের আদমশুমারিকে দুর্বল করার একটি প্রক্রিয়াও হয়ে উঠতে পারে।
ভোটাধিকারের প্রশ্নের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে আছে নাগরিকতা। ১৯৫০ সালে এ দেশে নির্বাচন কমিশন তৈরি হওয়ার সময় তার প্রধান দায়িত্ব ছিল সকল প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। কেউ যেন বাদ না পড়ে। আজ বাদ দেওয়ার চেষ্টাই যেন প্রধান। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, বৈচিত্র্যের ভারতে সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ বড় ভয়ঙ্কর সময়। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো এলাকায় প্রান্তিক মুসলমান পরিবারের মানুষ স্কুল, পঞ্চায়েত এবং ব্লকে ভীড় করছে কাগজপত্র সংশোধনের জন্য। নামের এক একটি অক্ষর নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। সর্বত্র চাপা আতঙ্ক।
সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি রাজ্য থেকে বাংলাভাষী শ্রমজীবী মানুষদের, বিশেষ করে মুসলমানদের, সোনালীর মত বহুজনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিল্লী , হরিয়ানার পুলিশ দশকের পর দশক ধরে সেখানে খেটে খাওয়া গরীব মানুষদের তুলে নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বিশাল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। না আছে তাদের কোনো সম্পত্তি, না আছে কোনো কাজ। না আছে কোনো ভবিষ্যৎ।
ওদিকে অসমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বাংলাভাষীদের রাজ্য ছাড়া করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় SIR এর বিরোধিতা করতে হবে। ভোটার তালিকা থেকেই যে অন্যায় শুরু হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটি যে সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী হতে চলেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এর সঙ্গেই নাগরিকত্ব এবং অনুপ্রবেশের তত্ত্বকে মিলিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে। Association for Democratic Reform এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকর সদ্য প্রয়াত হলেন। তাঁদের কাজের ফলেই ভারতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বহু বেনিয়ম ধরা পড়েছে। তিনি বলেছিলেন আমরা সত্যিই কি গণতন্ত্রে বাস করছি?
এ প্রশ্নটাই বড় এখন। গণের টুঁটি চেপে ধরছে তন্ত্র,
সোনালীর মত অজস্র হতভাগ্যদের পাশে না দাঁড়ালে গণতন্ত্র বাঁচবে না।