আরএসএসের দ্বিতীয় সঞ্চালক এম এস গোলওয়ালর তাঁর ‘বাঞ্চ অফ থটস' বইতে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকার সমালোচনা করেছিলেন। আপত্তি করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে আরএসএস মুখপত্র অর্গানাইজারে পরিষ্কার বলা হয়েছিল এই তেরঙ্গা পতাকাকে হিন্দুরা কখনো সম্মান করবে না । তিন একটি অশুভ সংখ্যা ইত্যাদি বলে। ২০১৫ সালে আরএসএস আরও বলেছিল যে জাতীয় পতাকায় একমাত্র গেরুয়া রং থাকা উচিত। আজ মুদ্রায় যাঁকে ভারতমাতা বলা হল ও তাঁর হাতে যে ঝাণ্ডা তুলে দেওয়া হল তা যে ভারতের ঝাণ্ডা নয় তা সবাই জানেন।
ইসরায়েলি শাসকদের দ্বারা ফিলিস্তিনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রতিবাদ বাড়ছে দেখা যাচ্ছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে কিছুটা দূরেই টাইমস স্কোয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে র্যালি করে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছিল। সেই কারণেই কি গাজায় আপাতত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলো?
পুজো শেষ হয়েছে, কিন্তু পুজোর রেশ এখনও আছে। এবারের সহমনের গল্পে থাকলো সেইরকম একটু ছোঁয়া। আজকের সহমনের গল্প ফতোয়া লিখলেন নির্মলেন্দু কুণ্ডু।
দেখা যাচ্ছে মাধ্যমিক বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের মাধ্যমেই একমাত্র কিছু সংখ্যক লোক ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও নাম তোলার প্রশ্নে বিশাল বৈষম্য রয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রথাগত শিক্ষা কুক্ষিগত: আর্থিক সচ্ছলতা, জাত ও লিঙ্গের ভিত্তিতে। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল, সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এবং মহিলাদের নাম বাদ পড়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।
পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি অসুররা বছরের দুবার অসুর পুজো করেন -একবার ফাল্গুন মাসে, আরেকবার দশেরার সময় ৷কোচবিহার জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত শুকানুকুটি " অসুর গ্ৰাম " বলে পরিচিত৷ পুরুলিয়া ভেলাগড়া গ্ৰামে নবমীর দিন পালন হয় " অসুর উৎসব"৷ এখানে অসুরের বড় মূর্তি নির্মাণ করে স্মরণ সভা চলে ৷ এরপর ঝুমুর, ছৌ, কাঠি নাচের অনুষ্ঠান৷ ছৌ নাচেও উঠে আসে অসুরবধের আখ্যান৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি অঞ্চলের কেন্দাশোল গ্রামে ও ঝাড়খন্ড এবং উত্তরাখন্ডের সীমান্তের আলিপুরদুয়ারা জেলার মাঝেরডাবরি এলাকার একটি গ্রাম ‘অসুর গ্রাম’-এ অসুরদের পূজা করা হয়৷
উচ্চবর্ণ-জমিদারশ্রেণির ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব সমাজ প্রতিষ্ঠার সাংস্কৃতিক সংগঠন আর.এস.এস, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে দুটি দিক স্পষ্ট করে; এক, ব্রিটিশের ভারত ছেড়ে যাওয়ার বিরোধিতা; দুই, ভারতকে উচ্চবর্ণ-বিত্তবানশ্রেণির জাতি রাষ্ট্র, ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এই কারণেই আগে থাকতে 'অকাল বোধন'-এ বিদেশি আর্যদের দেবতা রামচন্দ্র ও দেবী দুর্গার এদেশীয় অসুর জাতি, আদিবাসী বা অনার্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পরের দিনটি, বিজয়ের দশমীকে আর.এস.এস-এর প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সোনাম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁর খোঁজ অবধি পাওয়া যাচ্ছে না, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁকে নিয়ে হিবিয়াস করপাস মামলা অবধি হয়েছে। বড় পর্দায় তো সোনাম ওয়াংচুক আমাদের সবার পছন্দের মানুষ তাহলে সত্যিকারের জীবনে যখন তিনি লড়ছেন, তাঁর পাশে, তাঁর মুক্তির দাবীতে আমরা সরব হবো না কেন ?
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সৌভাগ্যই বলতে হবে, হিন্দু ধর্ম নিয়ে আজীবন অনেক কুসংস্কার চর্চা, দৃশ্যত অনেক বাড়াবাড়ি করা সত্ত্বেও তিনি যে মনের গভীরে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ছিলেন না, জঙ্গি হিন্দু মৌলবাদীদের অস্ত্রাঘাতে নৃশংস মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ করার সুযোগ পেলেন। ভারতের প্রথম পঞ্জীকৃত (হিন্দু) জঙ্গি নাথুরাম গদসের বন্দুক মোহনদাসকে শুধুই মারেনি, তাঁর সম্মানকে বাঁচিয়েও দিয়েছে।
এত দিন অবধি কেতাব আলি শরীরে তেমন কোনও সমস্যা টের পায়নি। তে-রাস্তার ধারে তার মুদি দোকান ভালো চলেছে। দুই মেয়ের ভিতর ফরজানার বিয়ে নিয়ে কিছু দিন উদ্বেগ ছিল। ফরজানা গ্রাজুয়েট না হয়ে বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত সে ঝামেলাও মিটে গেছে। বিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র ফরজানার পাত্র পাওয়া গেছে আর ফরজানা তাতে আর আপত্তি করেনি। ফলে কেতাব আলি আর তার বউ সালমা এখন অনেক ঝাড়া হাত-পা। চাপ নেই, দেনা-বাকি নেই।
সুপারি পেয়েছিলাম। পেমেন্ট হয়ে গেছিল। গলিটা আলো আঁধারি। মাগরীবের নমাজ সেরে ফিরছিল মালটা। আমি তাক করে ছিলাম অনেকক্ষণ। ফেজটুপি খুলে ফতুয়ার পকেটে ভরে গলিতে খানিকটা এগোতেই বড় বড় পা ফেলে ওর পিছনে পৌঁছে যাই। শর্ট রেঞ্জের পিস্তলটা আজ অবধি কোনোদিনও ফেল করেনি। তিনবার চালিয়েছিলাম। একটা খেয়েই পড়ে গেছিল, কিন্তু শিওর হওয়া দরকার ছিল। তাই বাকি দুটোও পরপর। মালটা টু শব্দ করেনি, তবু পড়ে যাবার শব্দে আর গুলির আওয়াজে হৈহৈ করে দলবল দৌড়ে এল।
সুপারি পেয়েছিলাম। পেমেন্ট হয়ে গেছিল। গলিটা আলো আঁধারি। মাগরীবের নমাজ সেরে ফিরছিল মালটা। আমি তাক করে ছিলাম অনেকক্ষণ। ফেজটুপি খুলে ফতুয়ার পকেটে ভরে গলিতে খানিকটা এগোতেই বড় বড় পা ফেলে ওর পিছনে পৌঁছে যাই। শর্ট রেঞ্জের পিস্তলটা আজ অবধি কোনোদিনও ফেল করেনি। তিনবার চালিয়েছিলাম। একটা খেয়েই পড়ে গেছিল, কিন্তু শিওর হওয়া দরকার ছিল। তাই বাকি দুটোও পরপর। মালটা টু শব্দ করেনি, তবু পড়ে যাবার শব্দে আর গুলির আওয়াজে হৈহৈ করে দলবল দৌড়ে এল।
এত দিন অবধি কেতাব আলি শরীরে তেমন কোনও সমস্যা টের পায়নি। তে-রাস্তার ধারে তার মুদি দোকান ভালো চলেছে। দুই মেয়ের ভিতর ফরজানার বিয়ে নিয়ে কিছু দিন উদ্বেগ ছিল। ফরজানা গ্রাজুয়েট না হয়ে বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত সে ঝামেলাও মিটে গেছে। বিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র ফরজানার পাত্র পাওয়া গেছে আর ফরজানা তাতে আর আপত্তি করেনি। ফলে কেতাব আলি আর তার বউ সালমা এখন অনেক ঝাড়া হাত-পা। চাপ নেই, দেনা-বাকি নেই।
বাড়ি থেকে আমার স্কুল খুব বেশি দূরে নয়, সাইকেল চড়ে মাত্র মিনিট দশেকের পথ। অথচ আজ স্কুল যাব বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দশ মিনিট নয়, আরও আরও অনেক মিনিট পেরিয়ে আমি যে কোথায় চলেছি তা আমার নিজেরই অজানা। আমি দেখছি একটা প্রশ্বস্ত পাকা সড়ক। সেই সড়কে হরেক কিসিমের প্রচুর বাইক, মোটরগাড়ি, বাস, লরি। দু-পাশে সারি সারি গাছ নয়, তার জায়গায় সব একই গড়নের বহুতল আকাশ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে।
হাসপাতাল থেকে ফেরামাত্র মিনি চোখের ইশারায় আমাকে ডাকে। অভিজিৎকে ও ভয় পায়, তাই এড়িয়ে চলে। আমি ঘরে ঢুকতেই তোশকের নীচ থেকে একটা ড্রয়িং খাতা বার করে, আমার হাতে দেয়। পাতা উলটাতে থাকি, এপাতা থেকে ওপাতা, আবার প্রথম পাতা…। মহাবিশ্বের মহাকাশে শুনতে পাই অদ্ভুত সব সুর আর অসুরের খেলা। মধুকৈটভের লড়াই।
এই চরে এত রাতে “ মারা গেল! মারা গেল!”, বলে কে চিল্লায়? দু’বার চিল্লেই চিল্লানোটা হাওয়া হয়ে যায়। এখন চর আবার চুপ। মকদুম মৌলভী খানিক তাজ্জব বনে যায়। এখানে কারো কিছু হলে “ আগগে মা’গে মইরা গ্যাল্লো রে!” বলেই বিলাপের রীতি। ‘বিলাপ’ শব্দটাও এখানে মকদুম ছাড়া কেউ জানে বলে মকদুমের মনে হয় না।
লালকেল্লা, তাজমহল, নিজামউদ্দিন আউলিয়া আজও সংঘের তথাকথিত সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক। তাই আজ সুলতানি ও মুঘল যুগকে মুছে ফেলার এত তৎপরতা। কৌশলটা হল ব্রিটিশ বিরোধী গৌরবময় স্বাধীনতার লড়াইটাকে মুছে ফেলে, মানুষকে সংশয়াকুল করে তোলা এবং এক প্রাচীন, কষ্টকল্পিত সনাতন ভারতের ছবি প্রতিষ্ঠা করা। কাজটা কঠিন কিন্তু সংঘ প্রকল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য জরুরি বটে।