শ্রীলঙ্কার রোগগুলি ভারতের শরীরেও বাসা বেঁধেছে। সারের দাম উর্ধ্বমুখী। নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র যে সাধারণের আওতার মধ্য একথাও আর বুক ঠুকে বলা যাচ্ছে না। আর ভাবনার কথা হল – আমরা জানি আমাদের খাদ্য উৎপাদন, জীবন যাপনকে প্রকৃতি বান্ধব করে তুলতেই হবে – আর কোন রাস্তা নেই। তার জন্য সার্বিকভাবে সঠিক পরিকল্পনা করে এখুনি বদল প্রয়োজন। চোখ বন্ধ রেখে প্রাকৃতিক চাষের সমালোচনা করলে তো আর প্রলয় থেকে দূরে থাকা যাবে না!
যুদ্ধ শেষ, নাৎসি বাহিনী পরাজিত, কিন্তু নাৎসিবাদের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে না সহজে। বহু তরুণের নবীন চেতনা আর বুদ্ধিকে বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা তারা আজও রাখে। নাৎসিবাহিনীর থেকে কিছু কম ভয়ঙ্কর নয় নাৎসি মতাদর্শ। জার্মানি ইয়ার জিরো, রবার্তো রোজেলিনি’র এই ছবিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখা যাবে আজকের ভারতবর্ষ যখন এই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি আরএসএসের কবল থেকে মুক্তি পাবে, তখন কি থাকবে? কি অদ্ভুত সাদৃশ্য। আলোচনা করলেন মানস ঘোষ।
হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা দেশজুড়ে মসজিদের সামনে মিছিল করে যাচ্ছে ও দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জ্ঞানবাপি মসজিদের ভিতরে পুরাতত্ব বিভাগ আদালতের নির্দেশে মন্দিরের অবশেষ খুঁজে বেড়াচ্ছে, মথুরাতেও সেই মর্মে মামলা চলছে, তাজমহলকে তেজো মহালয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রথম দাপ হিসেবে আদালতে মামলা হয়েছে। দেখাতে চেষ্টা করা হচ্ছে যে মুসলিম শাসকরা মন্দিরের পর মন্দির ভেঙেছে, হিন্দু ধর্মের উপরে আঘাত করার জন্য। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলছে।
দিবাকরের পিতামহ রাইচরণ শিউলির দাপুটে জমিদারের কাচারীতে ফাই ফরমাস খাটার কাজ করতেন। সেই সময় শিউলির জমিদার বাবুরা এতটাই দাপুটে ছিলেন, ঠিক যেন বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর মতো ভয়ঙ্কর।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনের আগে ক্ষমতা জাহির করার প্রতিযোগিতায় নামে। পেশি শক্তি ও অর্থ শক্তির আস্ফালন— টাকা দিয়ে ভোটারকে প্রভাবিত করার মতো অনৈতিক কাজও এখন বেশ স্বাভাবিক। আর সরকার গড়ার জন্য বিপক্ষের বিধায়ক বা সাংসদ কেনার জন্য বিপুল অর্থ। তার যোগান আসে নির্বাচনী বন্ডের মতো একটা কালো টাকা সাদা করার রহস্য ঘোরা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে।
গত দু'বছর লকডাউনে কেটে গেল। এবারের ইদে কোরোনার ভয় তেমন নেই। বুলডোজারের ভয় রয়েছে। তবে ভয় কী আর উৎসবকে মাটি করতে পারে? কথা হচ্ছিল পচার সঙ্গে। পচা একজন দর্জি। ইদে বউ-এর জন্য নাইটি কিনতে এসেছে। নিজে কিনেছে একখানা সাদা থামি(লুঙ্গি)।
মুখোশ ব্যবহার করে আমরা কি বাতাসে ছড়িয়ে থাকা ভাইরাসকে আটকে দিতে পারি? দামি, কম দামি, দেশি, বিদেশী যেকোনও মুখোশে ছিদ্রপথ থাকে; কাপড়ের তৈরি মুখোশের ছিদ্রপথের আকার অনেক বড়। তাছাড়া, যত আঁটসাঁটই হোক, মুখোশ আর মুখমণ্ডলের ত্বকের মধ্যেও ফাঁক থাকা অনিবার্য। সেই ফাঁকের আকার ভাইরাসের তুলনায় কয়েক লক্ষ গুণ বেশি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। খুঁটিতে লাগানো টিমটিমে বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। ইঁট বিছানো রাস্তা ধরে দু একটা করে সাইকেল আসছে ইস্টিশানের দিক থেকে। কোলকাতা থেকে কাজ সেরে ফিরছে ঘরের মানুষ ঘরে। জোছনার পা দুখানি আর যেন চলছে না। বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে। প্রায় সাতটা বাজতে এলো। এখনও মেয়েটা বাড়ি ঢুকলো না। স্কুল থেকে ঐ কারখানার গেট পর্যন্ত তো বিথীকা ছিল সাথে। তারপর কারখানার পাশ দিয়ে দশ মিনিটের আকাবাঁকা ইটের পথটুকু তো বরাবর একাই আসে রোজ। আমবাগানের মধ্যে দিয়ে একটা শর্টকাট আছে বটে তবে জোছনা ও পথে যেতে তো নিষেধ করেছিল।
কয়েকটি অণুগল্প দিয়ে একটি ক্যানভাস সাজানোর চেষ্টা করলেন ফাল্গুনি দে।
গুজরাত গণহত্যা ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বাস্তবিক এক প্রহসন। গোধরা-কাণ্ডের আপতিক ফলাফল যে গুজরাতের এই দুঃসময় নয়, এটা হিন্দুত্ববাদীদের মুসলমান বিরোধী অভিযানের চূড়ান্ত পরিণতি, তা অনেক অনেক হিন্দুর চিন্তা-চেতনে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। কারণ একটা সময় ধরে যখন মুসলমান বিরোধী প্রচার, ঘৃণা-বিদ্বেষের মহড়া চলছিল গুজরাত জুড়ে, তখন গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াগুলো সজাগ হতে পারেনি, হিন্দুত্বের কর্মসূচির বিকল্প নিয়ে ভাবেনি। আজকে কি ভাবছে?
গুজরাত গণহত্যা ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বাস্তবিক এক প্রহসন। গোধরা-কাণ্ডের আপতিক ফলাফল যে গুজরাতের এই দুঃসময় নয়, এটা হিন্দুত্ববাদীদের মুসলমান বিরোধী অভিযানের চূড়ান্ত পরিণতি, তা অনেক অনেক হিন্দুর চিন্তা-চেতনে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। কারণ একটা সময় ধরে যখন মুসলমান বিরোধী প্রচার, ঘৃণা-বিদ্বেষের মহড়া চলছিল গুজরাত জুড়ে, তখন গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াগুলো সজাগ হতে পারেনি, হিন্দুত্বের কর্মসূচির বিকল্প নিয়ে ভাবেনি। আজকে কি ভাবছে?
কয়েকটি অণুগল্প দিয়ে একটি ক্যানভাস সাজানোর চেষ্টা করলেন ফাল্গুনি দে।
এই লেখা একটি ডায়েরির কয়েক পৃষ্ঠা৷ ডায়েরির লেখক অতুলকথা বাঙাল৷ কারও কৌতূহল হতে পারে এমন অদ্ভুত নাম কেন? পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জে তিনপুরুষের ভিটে থেকে উচ্ছেদ হবার পর নলিনীকুমার বসু ভারতে আশ্রয় নেন৷ বিখ্যাত কোনো নেতা বা গুরুর আশ্রয় নেওয়ার মতো নয় একেবারেই৷ প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে শেয়ালদা স্টেশনে লক্ষ দেশভিখারির ল্যাপটালেপটি ভিড়ে নিজেদের কোনোরকমে গুঁজে দেওয়া৷ ‘নিজেদের” মানে নলিনীকুমার, তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও নাতি৷ পালানোর সময় নাতির বয়স ছিল চারমাস৷ এই স্টেশনেই দীনভিখারি-অনুষ্ঠানে নামকরণ হয় তার৷ কোটালিপাড়ার ডাকসাইটে ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান অব্যয়ানন্দ শিশুর নাম রাখেন ‘অতুলকথা’৷ আর নলিনীকুমার নতুন পদবি দেন ‘বাঙাল’৷ ছিলেন “বসু’৷ যার দেশ যায়, তার সব যায়৷ পুরোনো পদবি থাকে কীভাবে? তাছাড়া, এরপর তো সবাই “বাঙাল’ ডাকবে, শোনার অভ্যাস হয়ে যাক শিশু থাকতেই৷ অব্যয়ানন্দও খেদা-খাওয়া৷ তিনি ১৯৫২ সালে নলিনীকুমারের কাছ থেকে দু-টাকার পুরোহিত-প্রণাম আদায় করেন এই নামকরণের জন্য৷ ডায়েরিতেই একথা লিখিত আছে৷ অতুলকথার ডায়েরি তিরিশ পরিচ্ছেদের৷ এখানে তার একটি দেওয়া গেল৷ নামকরণ স্বয়ং অতুলকথার৷
যেখানে হরিদ্বারের ধর্মসংসদ থেকে ডাক আসছে হিন্দুদের প্রতি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র তুলে নেওয়ার, ঠিক সেই সময়েই অগ্নিহোত্রী সংখ্যাগুরু জনতার ইউটোপিয়ান ফ্যান্টাসিকে, তাদের স্বপ্নের অন্তর্লীন স্বপ্নকে সিনেমার ভাষায় জীবন্ত করে তুলছেন। যে দেশে 'লাভ জিহাদ'-এর ভুয়ো সংজ্ঞাকে ক্রমশ আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই সিনেমায় উঠে আসা হিন্দুরমণীর আর্তনাদের 'ফলস ট্রুথ' হিন্দু-অস্মিতাকে রক্ষা করার চিন্তাকেই ক্রমশ জনমানসে লালিত করতে সাহায্য করবে।
ইসমাইল দরবেশের ‘তালাশনামা’ বাংলা কথাসাহিত্যে নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এ আখ্যান পাঠককে পৌঁছে দেয় প্রতিবেশীর অন্দর মহলে। ইসলাম আর মুসলমানকে জানার বড় সুযোগ করে দিয়েছেন লেখক। হাজারো উপন্যাসের ভিড়ে কখনও হারিয়ে যাবার নয় অনন্য এ ‘তালাশনামা’।
যেদিন মারা যায় তার আগের দিনও হিরালাল স্কুলে এসেছিল। # আমরা তখন ক্লাস সেভেন, ওই যে বয়েসে মাথাটা একটু উঁচু করে একটু দূরে তাকিয়ে দেখার ইচ্ছে হয়, লোভ হয়, সাহসও হয়। হিরালালের চেহারা ছিল বেতের মতো। রোগা বলে রোগা, মানে, শরীরের কোথাও সামান্য চর্বি অব্দি ছিল বলে মনে হত না। হাতের আঙুলগুলি লম্বা, কিন্তু নখে ময়লা লেগেই থাকত, সময়মতো নখ কাটত না, যেমন কাটত না মাথার চুল, আর সেই চুলের কিছু কপালে এসে পড়ত। গায়ের রঙ কালো। শ্যামবর্ণ বলা যাবে না, আরো একটু কালো। চোখদুটো গভীর আর ভেজা, আর প্রায় গাভীর মতোই শান্ত আর অসহায়। মোটা ঠোঁট, চাপা নাক আর অসম্ভব শাদা দাঁত--- সব মিলিয়ে, আমাদের চেয়ে একটু বেশি লম্বা হওয়ায়, একটু আলাদাই লাগত হিরালালকে।