পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আগ্রাসী অজগর : বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্যহীনতার অশনি সংকেত

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 204 view(s)
  • লিখেছেন : কৌশিক সেন
একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্রে (ecosystem), অজগরের মতো শিকারী প্রাণী খাদ্যশৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা তৃণভোজী প্রাণীদের, যেমন হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদকুলকেও রক্ষা করে। এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি অংশ যেখানে দুর্বল বা অসুস্থ প্রাণীগুলি শিকার হয়, যা প্রজাতির সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পাথরপ্রতিমা বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে, ফরেস্ট ঘাট। সাইকেল নিয়ে খেয়া ধরার পথে ঘাটের আগেই বন দপ্তরের অফিস। হৈ হৈ, রৈ রৈ শুনে এবং অঞ্চলের মানুষের ভিড় দেখে, লোভ সামলাতে পারলাম না। ভিড়ের কাছে পৌঁছে গেলাম, গিয়ে দেখি – বন দপ্তরের কর্মীদের ধরা, এক সাড়ে দশ ফুটের কুণ্ডলী পাকানো অজগর। খাঁচায় ভিতরে তার ফোঁস ফাঁস শোনা যাচ্ছে। দেখে শুনে তো চোখ স্থির আমাদের। এরপর তড়িঘড়ি অজগর কে বিরক্ত করার বিষয়টি এড়াতে মানুষজন কে দূর করে দেওয়া হলো। তবে বন্যেরা খাঁচাতেও ভয়ানক সুন্দর। মাটির নদী বাঁধ পেরিয়ে কুমির ঢুকে পড়ছে পুকুরে। তিন মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি কুমির ধরা পড়ল গ্রামবাসীদের চোখে তারপর বন কর্মীদের জালে। চল্লিশটি ডিম পেড়েছে এক মা কুমির। ধরা পড়ছে বাঘরোল। এবার অজগরের পালা।

সেই ছোট্টবেলার বর্ণচেনার সময়কাল, অ এ অজগর আসছে তেড়ে, লেখক যোগীন্দ্রনাথ সরকার। তারপর অনেক দশক পর, প্রেক্ষাপট আমাজন। লুইস লোসা পরিচালিত ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র অ্যানাকোন্ডা, জীবজন্তু – মানুষ গিলে খেতে দেখা গেল প্রকাণ্ড মাপের সাপকে। তবে আমাদের সিজিআই না থাকলেও, হাতি গিলতে না পারলেও, অনায়াসে হরিণ গিলে ফেলে বেমালুম হজম করে ফেলতে পারে, এমন সাপ ভূ-ভারতের অনেক জায়গাতেই আছে।

অজগরের ইতিবৃত্ত ও খাদ্যাভ্যাস

অজগর বা ময়াল মূলত বিষহীন আদিম সাপ, যা ‘Boidae’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। অ্যানাকোন্ডা ও বোয়া এই একই পরিবারের সদস্য। ফ্রাঁসোয়া মারি দাউডিন ১৮০৩ সালে অ-বিষাক্ত সাপের জন্য ‘অজগর’ নামটি প্রস্তাব করেন। এরা গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বাস করে এবং ‘পাইথনিডি’ পরিবারের সদস্য।

২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি আফ্রিকান রক পাইথনের ছোট ছেলেকে গিলে ফেলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়, যা ‘মানুষ খাওয়ার’ প্রথম ঘটনা। হারপেটোলজিস্টদের মতে, অজগরটি শীতকালীন দীর্ঘ নিদ্রা থেকে জেগে উঠে এই শিকার করেছিল। যদিও গণমাধ্যমে মানুষখেকো সাপের গল্প প্রায়শই অতিরঞ্জিত হয়, মানুষের ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশ, বনের আবাসস্থল হ্রাস এবং এই প্রকাণ্ড সাপগুলির খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ‘সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট’ নীতিকেই যেন সত্য প্রমাণ করছে। ভারতের বাইরে ২০ ফুটেরও বেশি মাপের বার্মিজ অজগর পাওয়া যায়, যার ওজন ৫৫ কিলো পর্যন্ত হতে পারে।

অজগর তাদের উপরের ও নীচের চোয়াল ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত প্রসারিত করতে পারে এমন লিগামেন্ট দিয়ে সংযুক্ত থাকে। এছাড়াও, তাদের পেট ও অন্ত্র প্রসারিত করার ক্ষমতা থাকায় তারা নিজের চেয়েও বড় প্রাণী যেমন বন্য হরিণ বা কুমির শিকার করতে সক্ষম।

আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও, অজগর অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শিকার কামড়ে ধরে এবং কুণ্ডলী পাকিয়ে চাপ সৃষ্টি করে শিকারকে নিস্তেজ করে ফেলে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল থেকে হুগলী পর্যন্ত অজগরের মানুষ খাওয়ার তথ্য বিরল হলেও সত্য। সিঙ্গাপুরের বন্যপ্রাণীর গবেষক মেরি রুথ-লো এর মতে, অজগরের আকার বাড়ার সাথে সাথে ক্যালরির প্রয়োজনও বাড়ে। তাই তারা ইঁদুর ছেড়ে বন্য শুয়োর, গরু ও মহিষ শিকার করে। তবে বনের হরিণ তাদের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য হয়ে উঠেছে।

শিকার ধরার কৌশল এবং বংশবৃদ্ধি

অজগর তাদের স্কিন পিগমেন্টেশন অর্থাৎ চামড়ার রং ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। তারা পছন্দের শিকারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে। তাদের চোখ ও নাকের ছিদ্রের মধ্যে অবস্থিত তাপ সংবেদী গর্ত (heat-sensing pits) গুলি শিকারের দূরত্ব নির্ণয় করতে সাহায্য করে। প্রমাণ মাপের স্ত্রী হরিণ বা পুরুষ হরিণ সম্পূর্ণ গিলে ফেলার পর অজগর সহজে নড়তে পারে না এবং অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় এক বছর না খেয়েও কাটিয়ে দিতে পারে।

২০০৬-১০ সালের মধ্যে গির অরণ্য থেকে নয়টি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। বিশেষ প্রজনন ক্ষমতার কারণে, জন্মের তিন বছর কয়েক মাসের মধ্যেই তারা যৌন মিলনে সক্ষম হয় এবং একবারে প্রায় ১০০টির মতো ডিম পাড়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। অজগর ডিমগুলির অত্যধিক যত্ন নেয় এবং অন্তত ৫০% ডিম থেকে নিরাপদে বাচ্চা বেরোনোর সময়কাল পর্যন্ত সেগুলির চারপাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে পাহারা দেয়। অজগরের বংশবৃদ্ধির এই গতি সাধারণ ধারণার অতীত। প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত এরা বাঁচতে পারে। গির বন কর্তৃপক্ষের কাছে অজগরের এই হারে বৃদ্ধির কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ মেলেনি। বর্তমানে চাষযোগ্য জমি, লোকালয়ের পাত কুয়ো এবং কাঠ চেরাই মিলেও অজগর উদ্ধার করা হচ্ছে। উদ্ধারকারী দলের পক্ষে এই অজগর উদ্ধার করে বনের মাঝে ছেড়ে দেওয়া সহজ কাজ নয়। গুজরাটের সোমনাথ জেলার তালালা, জামবালা, জুনাগড় জেলার সাসান ইত্যাদি অঞ্চল আগ্রাসী অজগরের বহুমাত্রায় বংশবৃদ্ধির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

গির জাতীয় উদ্যানের প্রেক্ষাপট: একটি ভারসাম্যহীনতা

২০১০ সালে, গির জাতীয় উদ্যানের একটি বহুমাত্রিক পর্যবেক্ষণে চিতল হরিণ এবং অজগরের মধ্যে এক উদ্বেগজনক খাদ্য-খাদক (prey-predator) সম্পর্ক দেখা যায়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ‘এপেন্ডিক্স ওয়ান’ অনুসারে অজগর শিকার ও পণ্যসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও, বনের সশস্ত্র প্রহরীদের নজর এড়িয়ে বেআইনি শিকার ও পাচার চলছেই। মানব বসতি ও বন্যপ্রাণীদের সহাবস্থান, সুশিক্ষা এবং খাদ্য-জ্বালানির চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান প্রয়োজন। ক্ষতিকারক রোগবহণকারী কীট পতঙ্গের বেহিসেবী বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সর্পকূলের উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু যেসব স্থানে সবুজ ধ্বংসের সাথে সাথে বৃক্ষবাসী বা আর্বোরিয়াল (arboreal) সর্পকূল নির্মূল করা হয়েছে, সেখানেই জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর বিপদ নেমে এসেছে।

 

ভারতীয় উপমহাদেশে বর্তমানে হালকা রঙের ‘Python m. Molurus’ এবং গাঢ় রঙের ‘Python m. Bivittatus’—এই দুই ধরনের অজগর মেলে। পাথুরে বা ফসলি জমি, আগাছা ভরা বা ফাঁকা বনভূমি, নদীর কিনারে বা ঝিলের ধারে—অজগর সব জায়গাতেই বিচরণ করে। গাছে চড়া থেকে সাঁতার, অজগর যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম। তবে, গির অরণ্যে অজগরের মাত্রাতিরিক্ত বংশবৃদ্ধি বিপদ ডেকে আনছে, যার ফলে হরিণের ওপর তাদের চাপ বাড়ছে।

বাস্তুতন্ত্রে অজগরের নেতিবাচক প্রভাব এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা

তবে, যখন কোনো একটি প্রজাতির সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, যেমনটি গির অরণ্যে অজগরের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তখন বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এই ভারসাম্যহীনতার কিছু সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিচে আলোচনা করা হলো:

বিঘ্ন:  অজগরের সংখ্যা অত্যাধিক হারে বাড়লে তাদের প্রধান খাদ্য হরিণের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। এর ফলে হরিণের সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে পারে। প্রবন্ধটিতে যেমন বলা হয়েছে, “যখন ভোক্তা (consumer) এবং সম্পদ (resource)-এর মধ্যে সম্পর্ক অস্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়া অবশ্যম্ভাবী।“ হরিণের সংখ্যা কমে গেলে, সেই হরিণের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য শিকারী প্রাণীরাও (যেমন বাঘ বা চিতাবাঘ, যদি তারা একই অঞ্চলে থাকে) খাদ্যের অভাবে পড়বে। এটি পুরো খাদ্যশৃঙ্খলকে ব্যাহত করবে।

 

হ্রাস: খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটলে তা পর্যায়ক্রমে জৈববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোনো একটি প্রজাতির সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গেলে বা কমে গেলে, তা অন্যান্য প্রজাতির জীবনচক্রেও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিছু প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হতে পারে, যা বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেবে।

 

বন্যপ্রাণী সংঘাত বৃদ্ধি: অজগরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এবং তাদের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস কমে গেলে তারা লোকালয়ের দিকে চলে আসতে বাধ্য হবে। আপনার প্রবন্ধেও উল্লেখ করা হয়েছে যে অজগর চাষযোগ্য জমিতে, লোকালয়ের পাত কুয়োয় এবং কাঠ চেরাই মিলে ধরা পড়ছে। এর ফলে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাত বাড়বে।

ক্ষতি জীবনহানি: লোকালয়ে অজগরের প্রবেশ পশুপাল, যেমন গরু, ছাগল ইত্যাদির জন্য হুমকি তৈরি করবে, কারণ অজগর বড় প্রাণীও শিকার করতে পারে। এটি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এবং অজগরের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে, যা তাদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে এবং অযথা মানুষ-সাপের সংঘাত ও হত্যার কারণ হতে পারে।

 

 

কীটপতঙ্গের ভারসাম্যহীনতা (পরোক্ষ): “ক্ষতিকারক রোগবহণকারী কীট পতঙ্গের বেহিসেবী বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্পকূলের উপস্থিতি দরকার।“ যদি অজগরের সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে বাস্তুতন্ত্রে সাপের সামগ্রিক ভারসাম্য ব্যাহত হয় (যেমন, অন্যান্য সাপ প্রজাতির সংখ্যা কমে যায়) তাহলে রোগবাহী কীটপতঙ্গের সংখ্যা বাড়তে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

 

বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্টের কিছু বিশ্বব্যাপী উদাহরণ

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে, যা অজগরের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সম্ভাব্য সংকটের গুরুত্বকে তুলে ধরে:

 

  • এভারগ্লেডস জলাভূমিতে বার্মিজ অজগর (Burmese Python) একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি (invasive species) হিসেবে প্রবেশ করেছে। প্রাথমিকভাবে পোষা সাপ হিসেবে আনা হলেও, পরে এদের প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয় বা তারা পালিয়ে যায়। এভারগ্লেডসে এই অজগরগুলোর কোনো প্রাকৃতিক শিকারী না থাকায় এবং উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় তারা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে। এর ফলে সেখানকার স্থানীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন র‍্যাকুন, অপোসাম, ববকেট এবং পাখির সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে, যা স্থানীয় খাদ্যশৃঙ্খলকে বিপর্যস্ত করছে। যা দেখায় যে একটি প্রজাতির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কীভাবে পুরো বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

 

  •   আমাজন রেইনফরেস্টে ব্যাপক হারে বন উজাড় (কৃষি, খনিজ সম্পদ আহরণ এবং বসতি স্থাপনের জন্য) একটি ভয়াবহ পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। কোটি কোটি গাছ কেটে ফেলার ফলে শুধু বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে না, বরং অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় ও বৈশ্বিক জলবায়ুতে পরিবর্তন আসছে, বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, এবং মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

 

  • মরুভূমির দক্ষিণে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, সেখানে অতিরিক্ত চারণ (overgrazing), অপরিকল্পিত কৃষিকাজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্যাপক মরুকরণ (desertification) হয়েছে। এর ফলে উর্বর জমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে, এবং স্থানীয় মানুষের খাদ্য ও জলের সংকট তীব্র হচ্ছে।

 

এই উদাহরণগুলো স্পষ্ট করে যে, বাস্তুতন্ত্রের কোনো একটি অংশের পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কীভাবে সামগ্রিক পরিবেশের উপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

 পরিশেষ

 

ঝাড়খণ্ডের পলামু ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশেপাশে লোকালয়ে অজগর ঢুকে পড়ত এবং মানুষের আতঙ্ক ও নির্মম অত্যাচারের শিকার হত। বনকর্তাদের উদ্যোগে দুটি অজগরের প্রাণ বাঁচে। বন দপ্তরের তরফে আশপাশের লোকালয়গুলিতে প্রচার শুরু করা হয়—‘সাপ মানুষের শত্রু নয়, বরং বন্ধু। জীবনচক্রে বাঘের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনই সাপও জরুরি। নচেৎ খাদ্য-শৃঙ্খল নষ্ট হতে পারে।‘ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন (International Union for Conservation of Nature – IUCN) বেশ কয়েকটি অজগর প্রজাতিকে ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপন্ন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছিল। তবে গির অরণ্যের পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে।

সাপ শব্দের অন্তত ৪৭টি প্রতিশব্দ মানুষই খুঁজে বের করেছে। তাই এর একটি সদুপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে হরিণ-অজগর ভারসাম্য বজায় থাকে। ‘তেড়ে মেরে ডান্ডা, করে দেই ঠান্ডা’—এই ধরনের সহিংস উপায় কোনো হুঁশযুক্ত প্রাণীর সমাধান হতে পারে না। একটি টেকসই সমাধানের জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, জনসচেতনতা এবং মানব বসতি ও বন্যপ্রাণীদের সহাবস্থানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান অত্যন্ত জরুরি।

 

0 Comments

Post Comment