পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পদ্মা তীরের ভাঙন কবলিত তারানগরে শুধুই দীর্ঘশ্বাস

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 206 view(s)
  • লিখেছেন : জাহাঙ্গীর আলম
গত চল্লিশ বছর ধরে এই এলাকায় পদ্মার ভাঙন একটা আতঙ্কের কারণ। পদ্মা গিলে খেয়েছে কয়েক হাজার একর জমি, শত শত ঘর বাড়ি সহ বড় বড় জনপদ। তারানাগর গ্রাম পদ্মার গর্ভে চলে যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। ১৯৯৪/৯৫ সালে পদ্মায় তারানগর গ্রামের ভাঙনের পরে মোটামুটি পদ্মার এই পাড় অর্থাৎ তারানাগর এলাকার দিকে পদ্মায় চর পড়ে যায়। তখন বাংলাদেশের দিকে পাড় ভাঙতে থাকে।

পদ্মা তীরের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম তারানগরে এখন শুধুই হাহাকার, চোখের জল এবং বিষন্নতার ছবি। আজন্ম লালিত নিজের ঘর বাড়ি একটা দুটো করে পদ্মা গর্ভে প্রতিদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  তারপর  সব হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সরকারি স্কুলের ছোট্ট ঘরে অন্যান্যদের সাথে। বাথরুম থেকে শুরু করে শোয়ার জায়গা সব কিছুই ভাগ করে নিতে হচ্ছে। কেউ কেউ পদ্মা তীরেই ভাঙা তাঁবু খাটিয়ে পোষা দু একটা ছাগল মুরগি সাথে নিয়ে থাকছে। সে এক মন খারাপ করা দৃশ্য। ওদের দীর্ঘশ্বাস এবং অসহায়তা আকাশ বাতাসকে ভারী করে রেখেছে।

২০২৪ এবং ২০২৫ সালে তারানগর ও রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের দুই শত পরিবারের বাড়ি ঘর পদ্মা গর্ভে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বিঘার পর বিঘা কৃষি জমি, পাকা রাস্তা। ভাঙন এখনও অব্যাহত।

পদ্মা তীরে গড়ে ওঠা খান্দুয়া, শেখালিপুর, রাধাকৃষ্ণপুর, কালীনগর তারানগর ইত্যাদি ছিল বর্ধিষ্ণু গ্রাম। তারানাগর গ্রামের সামনে ছিল বড় সড় কালিনগর গ্রাম। সেই গ্রাম পদ্মার গর্ভে চলে যায় নব্বই এর দশকের পূর্বে। বর্তমান খান্দুয়ার শেখালিপুর গ্রামও চলে যায় পদ্মা গর্ভে সেই সময়। হারিয়ে যায় রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বড় অংশ। 

গত চল্লিশ বছর ধরে এই এলাকায় পদ্মার ভাঙন একটা আতঙ্কের কারণ। পদ্মা গিলে খেয়েছে কয়েক হাজার একর জমি, শত শত ঘর বাড়ি সহ বড় বড় জনপদ। তারানাগর গ্রাম পদ্মার গর্ভে চলে যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। ১৯৯৪/৯৫ সালে পদ্মায় তারানগর গ্রামের ভাঙনের পরে মোটামুটি পদ্মার এই পাড় অর্থাৎ তারানাগর এলাকার দিকে পদ্মায় চর পড়ে যায়। তখন বাংলাদেশের দিকে পাড় ভাঙতে থাকে। এপারের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, পদ্মা আর তারানগর গ্রামের দিকে এগিয়ে আসবে না। তারানাগর গ্রামের আর্থিকভাবে দুর্বল অধিবাসীগণ  গ্রামে থেকে গেলেন। পদ্মাকে বুকে নিয়ে। নতুন করে বাড়ি ঘর বানালেন।  তাঁদের বেশিরভাগই  খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। আর্থিক কারণে বিকল্প কোন জায়গা বাড়ি করবার জন্য ক্রয় করে রাখতে পারলেন না। 

ইতিমধ্যে পদ্মাপাড়ের উল্টো দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশ তাঁদের পদ্মা পাড় কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে নিয়েছে। ওই পূর্ব পাড়ে ভাঙন বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর পূর্বে। আস্তে আস্তে নদী খাতের পরিবর্তন হয়ে গেছে। পদ্মার পূর্ব পাড়ে (বাংলাদেশের দিকে ) পদ্মার প্রবাহ কমে গেলো। বালির চড়া পড়ে গেলো। এই মুহূর্তে মূল পদ্মার ৬০% বুকে বালির চড়া পড়েছে। ভরা পদ্মায় চড়া ঢেকে গেলেও পদ্মার মূল প্রবাহ পদ্মার পশ্চিম পাড়ের ( তারানগর রাধাকৃষ্ণপুর গ্রাম) দিকে। খুব জোর ২০০ মিটার প্রশস্ত সেই প্রবাহ। ফলে ভরা বর্ষায় পদ্মার ভয়ঙ্কর স্রোত আঘাত হানছে এই তারানগর রাধাকৃষ্ণপুর এর পাড়ে। শুখা মরসুমে দেখা যায় নদী তল থেকে পদ্মা পাড়ের উচ্চতা প্রায় একশো থেকে দেড়শো ফুট।

এখন বাড়িঘর হারানো দরিদ্র পরিবার গুলোর জন্য এখন প্রয়োজন দ্রুত পুনর্বাসন।  আশ্রয় শিবির গুলোতে অসহায় দরিদ্র পরিবার গুলোই আছে। তাঁদের চাল ডাল আলু দেওয়া হলেও বাকি রান্নার সামগ্রী তো লাগবে। সেগুলো কোথায় পাবে। এর জন্য প্রয়োজন নগদ অর্থ। সম্পন্ন পরিবার গুলো আগেই বিভিন্ন জায়গায় চলে গিয়ে বাড়ি ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। এই গৃহহীন পরিবারগুলোকে দিতে হবে এক টুকরো জমি, এবং একটি ঘর বানাবার জন্য অর্থ। গৃহ আবাস যোজনা থেকে এই অর্থ দেওয়া যেতে পারে। 

পুনর্বাসন এর পাশাপাশি প্রয়োজন খান্দুয়া থেকে তারানগর পর্যন্ত পদ্মা নদীর খাড়া পাড়কে কেটে ৩৫ /৪৫ ডিগ্রি ঢালু করা। এই ঢালু পাড়কে কংক্রিটের স্ল্যাব বা বৌল্ডার সিমেন্ট বালি দিয়ে বাঁধাতে হবে। যদি এই খাড়া পদ্মাপাড় না বাঁধানো হয়, তাহলে আগামী বছরও পদ্মা বিধ্বংসী রূপ নিয়ে বাকি গ্রাম গুলোকে গিলে খাবে। কারণ পদ্মার মূল খাত এবং জল প্রবাহ এই পাড়েই।

তারানগর এলাকায় এতো বড় বিপর্যয় হয়ে গেলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো লেখা লেখি হলো। কিন্তু দুঃখের কথা আমাদের জেলা শাসক একবারও পরিদর্শন করবার সময় পেলেন না। জেলা প্রশাসন এত বড় একটি প্রা কৃতিক বিপর্যয়কে গুরুত্ব দিয়ে তা সমাধান করবার চেষ্টা করলেন না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। হয়তো তারানগর রাধা কৃষ্ণ পুর গ্রামে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বা আর্থিক দিক দিয়ে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে প্রভাব শালী ব্যক্তিত্ব বাস করেন না বলেই এই উদাসীনতা।


আমরা আমাদের এম পি এবং এম এল এ মহোদয়গণ দের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। উনারা বার বার তারানাগর রাধাকৃষ্ণ পুর এসেছেন। কিন্তু প্রকৃত কাজের কাজ কিছুই হয় নি। এখন পর্যন্ত কোন বড় কোন ফান্ড বরাদ্দ হয় নি। সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এই বছর। ৪৫% লেস মানি দিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু করে  ভরা পদ্মায়। জনসাধারনের বিরোধিতায় কাজ বন্ধ হয়। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। 

উল্লিখিত পদ্মার পশ্চিম পাড়কে কংক্রিট দিয়ে বাঁধানোর জন্য ফান্ড এর ব্যবস্থা এখনই করতে হবে যাতে সামনের শুখা মরসুমে নদীপাড় বাঁধানো যায়। ভাঙন রোধ করতেই হবে। জুন থেকে অক্টোবর নদী পাড় বাঁধানোর কাজ কোন মতেই হবে না। কিন্তু দুঃখের কথা আমাদের এমপি এম এল এ এবং প্রশাসনিক স্তর থেকে পদ্মা পাড় বাঁধানোর জন্য কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এলাকার মানুষ যাঁরা এখনও ঘর বাড়ি পদ্মা গর্ভে হারান নি, তাঁরা আতঙ্কিত। পুরাতন কালিনাগর গ্রাম থেকে ছিন্নমূল হয়ে যে নতুন কালিনগর বসতি করেছিল তাঁরাও আজ বিপন্ন। যদি সামনের শুখা মরসুমে পদ্মা পাড় না বাঁধানো হয় তাহলে সামনের বর্ষায় আরও কয়েকটা গ্রাম চলে যাবে পদ্মার পেটে। এই জন্য নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। যেহেতু এটা আন্তর্জাতিক সীমান্ত। সীমান্তে যাতায়াত এর রোড ও তলিয়ে গেছে পদ্মা গর্ভে, সেহেতু এই ভাঙনের এলাকাটা বেশ স্পর্শ কাতর হয়ে আছে। সেটাও কেন্দ্রকে বোঝানোর দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

 

 

 

0 Comments

Post Comment