পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লকডাউন কি আদৌ জরুরী ছিল?

  • 28 April, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1547 view(s)
  • লিখেছেন : নীতিন শেঠী ও সম্ভব শ্রীবাস্তব
আর্টিকেল ১৪ বলে একটি ওয়েব পত্রিকাতে এই লেখাটি বেড়িয়েছে কিছু দিন আগে, যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে লকডাউন কি আদৌ জরুরী ছিল? আর কোনও উপায় কি ছিল না? সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য আর কি করণীয় ছিল আইসিএমআর কি বলেছে? গবেষণা কি বলেছে? লিখেছেন নীতিন শেঠী। আমরা সহমনের পক্ষ থেকেও একই প্রশ্ন রাখলাম।

নীতিন শেঠি এবং সম্ভব শ্রীবাস্তব নামে দুজন সাংবাদিক কেন্দ্রের কোভিড টাস্ক ফোর্সএর মিটিং এর মিনিটস হাতে পেয়েছে।কেন্দ্রীয় করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের অভ্যন্তরীণ মিটিংএর মিনিটস হাতে আসার পর বোঝা যাচ্ছে যে ভারত সরকার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে করোনা ভাইরাসের বিপদের কথা জেনেও পদক্ষেপ নিতে প্রায় দেড় মাস দেরী করেছে।

"সব কিছু ঠিক থাকবে যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়", নভিত ওইগ এই কথাগুলো ২৯ মার্চ এ হওয়া টাস্ক ফোর্সএর মিটিং এ বলেন।তিনি এইমসএর মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের হেড। " অনেকদিন ধরে শুধু আলোচোনাই চলছে , কোন কাজের কাজ হচ্ছে না। এবার আমাদেরকে সত্যিটা বলতেই হবে।"

"যদি আমরা দিল্লী,পুনে, মুম্বাইএর লোকদেরকেই না বলতে পারি যে তাদের শহরে কি চলছে তাহলে আমরা ৭০০টি জেলার লোকদের কি বলব?" আরেকজন এই মিটিং এ প্রশ্ন তোলেন। ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশব্যাপী লকডাউনের নির্দেশ দেওয়ার চারদিন পরে, তাঁর সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের টাস্কফোর্স দিল্লির অল ইন্ডিয়ান মেডিকেল সাইন্সেস এ মিটিং করে।

বৈঠকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) –এর এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজ বিভাগের প্রধান রমন গঙ্গাক্ষেদকার উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে আরও বৈজ্ঞানিকরাও ছিলেন সেই মিটিং এ।

সেদিনের মিটিংএর রেকর্ড দেখে বোঝা যায় যে তখন ও অবধি করোনা ভাইরাস এর টেস্টিং পদ্ধতি ঠিক করার ব্যাপারে ও পর্যন্ত তৈরী ছিল না ভারত সরকার। অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন যে সরকারকে আগে থেকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

রেকর্ড থেকে এও দেখা যায় যে লকডাউন করায় সরকার তার শীর্ষ বিজ্ঞানীদের উপদেশ মানেনি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের গবেষণার মাধ্যমে বর্তমান লকডাউনের পরিবর্তে, এই বিজ্ঞানীরা "সম্প্রদায় এবং নাগরিক-সমাজের নেতৃত্বে স্ব-কোয়ারেন্টাইন এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ" করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সাবধান করেছিলেন যে ভারতেও বড় মাত্রায় সংক্রমণ হতে পারে এবং সেই সময় অবধি সরকার যেইসব পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা দেশব্যাপী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন এবং স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা মূলক জিনিসের সংস্থান করা, পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং পৃথকীকরণের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।

যে বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা করেছিলেন তাদের অনেকেই এই টাস্ক ফোর্সে নিযুক্ত হয়েছেন।

এক মাসের ও বেশী সময় ধরে তাদের কথা শোনা হয়নি। শেষপর্যন্ত কোন বৈজ্ঞানিক কৌশল তৈরী না হওয়ার ফলে সরকার চার ঘনটার নোটিসে লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয় যার ফলে কোটি কোটি মানুষের জীবিকা চলে গেছে এবং বহু মানুষ আজ ক্ষুধার্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। বহু মানুষের প্রাণহানিও হয়েছে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কেপল, যিনি এই টাস্ক ফোর্সের সভাপতি, বলেছিলেন যে লকডাউন করা হয়েছে যাতে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা করার সময় পাওয়া যায়। পরিকল্পনার মধ্যে জনবহুল এলাকায় আক্রান্তদের আলাদা করা, তাড়াতাড়ি টেস্ট করা,দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো, হাসপাতালে বেড বাড়ানো উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মিটিংএর রেকর্ড থেকে জানা যায় এসব নতুন কিছু নয়। ফেব্রুয়ারিতে বিজ্ঞানীরা যেই সব কথা বলেছিলেন উনি সেগুলোই এপ্রিলে বলছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্রে দেখিয়েছিলেন যে যদি দুজন আক্রান্তের মধ্যে একজনকে ৪৮ঘণ্টার মধ্যে কোয়ারেন্টাইন করা হয় তো কেসের সংখ্যা ৬২% কমে যাবে।

কিন্তু ভারত সরকার ১ মাসের বেশী সময় লাগিয়ে দেয় তাদের নিজেদের বিজ্ঞানীদের কথা শুনতে।

ঘটনার সময়রেখা

জানুয়ারি- WHO র সতর্কবার্তা পেতেই আইসিএমআর বিজ্ঞানীরা অন্য সংগঠনের বিজ্ঞানীদের সাথে মিলে কাজ শুরু করে দেয়। তারা বোঝার চেষ্টা করে যে ভারতের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।

ফেব্রুয়ারি- মাসের শেষের দিকে আইসিএমআর দুটো পেপার বার করে।একটির নাম “The 2019 novel coronavirus disease (COVID-19) pandemic: A review of the current evidence”, সেখানে বলা হয় যে ওপর থেকে চাপানো লকডাউনের থেকে তৃণমূল স্তরে পাড়া বা গ্রাম ভিত্তিক মানুষ বা কমিউনিটির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টাইন কাজ করবে। করোনা রোগীদের তাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে।

আরেকটি পেপারের নাম : “Prudent public health intervention strategies to control the coronavirus disease 2019 transmission in India: A mathematical model-based approach”, এই পেপারটি দিল্লী,মুম্বাই,কোলকাতা,বেঙ্গালুরু নিয়ে কাজ করে। তারা বলে যে খুব ভাল অবস্থায় দিল্লীতে ১৫লক্ষ সংক্রমণ হবে।

এটা বলে রাখা ভাল যে এই পেপারে লেখকদের মধ্যে এমন চারজন আছেন যারা কেন্দ্রীয় সরকারে টাস্কফোর্সে আছেন।এদের মধ্যে একজন গঙ্গা ক্ষেদকার যিনি নিয়মিত আইসিএমআরের পক্ষ থেকে প্রেস কনফারেন্স করেন।

এদের একজন নিজের পরিচয় না জানিয়ে আর্টিকেল ১৪কে বলেছেন যে লকডাউন ভারতে খুব একটা কাজ করেনা কারণ লকডাউনের মধ্যে শুধু বড়লোকরাই একে অপরের থেকে দূরে থাকতে পারবে। গরীবদের পক্ষে সম্ভব নয় যাদের থাকার জায়গাই এত ছোট। সেই জন্য ভারতে বেশী জরুরি প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের অসুস্থতা পরীক্ষা করা। যদি কাউকে সংক্রমিত পাওয়া যায় তাকে তাড়াতাড়ি আলাদা করা। তা না হলে খুব তাড়াতাড়ি রোগ সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।

১৮ ই মার্চ অবধি এগুলো ভারত সরকার পাত্তা দেয়নি।

১৮ মার্চ - ২১ জনের টাস্কফোর্স গঠন হয়।

২৪ মার্চে - মোদী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে।

২৮ মার্চ – টাস্কফোর্সের মিটিং। AIIMS এর মেডিসিনের হেড বলেন তিনি বুঝতে পারছেন না যে টাস্কফোর্স হিসেবে তাঁরা নিজেরা কি করছেন? তিনি জিজ্ঞেস করেন যে আমরা কি করতে পেরেছি এখনোঅবধি? আইসিএমআর এপিডেমিওলজি হেড গঙ্গা খেদকার জানান তিনিও বুঝতে পারছেন না। এটা বলা দরকার এই টাস্ক ফোর্সের তিনজন চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন ও এই মিটিং এ আসার সময় পাননি। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন নীতি আয়োগের মেম্বার পাল, হেলথ সেক্রেটারি প্রীতি সুদান, আর আইসিএমআর ডিরেক্টার ভার্গভ। এই মিটিং থেকে পরিষ্কার হয় যে রোগীকে তা বোঝা যাচ্ছে না। সরকারের চোখ থেকে প্রচুর রোগী বেড়িয়ে যাচ্ছে। এই মিটিংএ বোঝা যায় যে টেস্টিংএর নিয়মকানুন ঠিক হয়নি এখনো।

এপ্রিল –প্রথম সপ্তাহ- পাল ফেব্রুয়ারির পেপারগুলোর উপর কাজ শুরু করতে বলেন।

৬ এপ্রিল – গবেষনা টিম বানানো হয় এটা বোঝার জন্য যে আরও বেশী রোগীকে কি করে চিহ্নিত করা যায়।

১৪ এপ্রিল – এখনো রোগী ভাল করে চিহ্নিত হওয়ার পদ্ধতি ঠিক করা যায়নি। টেস্টিং বাড়ানো হচ্ছে ধীরে।লকডাউন বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অনুবাদ ঃ প্রত্যুষ নন্দী

0 Comments

Post Comment