পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

এখনি অন্ধ বন্ধ করোনা পাখা

  • 30 October, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1292 view(s)
  • লিখেছেন : অশোক চট্টোপাধ্যায়
রামমন্দিরের ভিত্তিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় ‘পূজন’ মহোৎসবের ঢক্কানিনাদের আড়ালে কাশ্মিরের ক্ষুব্ধ জনসাধারণের কণ্ঠস্বর যাতে প্রকম্পন তুলতে না পারে তার ব্যবস্থা হয়েছে। সারাদেশ এখন রামমহিমায় ম ম করছে! আগামি দিনগুলোতে হিন্দুত্ববাদিদের নতুন নতুন মহড়ার কলাক্ষেত্র তারই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে চলেছে।

গতবছর অযোধ্যা-রায়ে আমাদের সর্বোচ্চ বিচারালয় প্রকাশে হিন্দুত্ববাদের তাস খেলার নজির রেখেছিলেন! ফলে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার অবসান ঘটে এদেশের মুসলিম সহ নির্বিশেষ জনসাধারণের প্রিয় এক ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ধ্বংসের জায়গাতেই রামমন্দির নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে। এখন তো সব কিছুর মধ্যেই ঐতিহাসিক কীর্তির সাক্ষ্য সন্ধান করা হয়ে থাকে। আর এর একবছর পর বাবরি ধ্বংস মামলার রায় (অযোধ্যা রায়ের পরে অবশ্য এই রায় কী হতে পারে তা জানাই ছিল) বাবরি ধ্বংসের মামলায় অভিযুক্তদের সবাইকে বেকসুর মুক্তির আরও একটা ঐতিহাসিক বাণী শুনিয়েছে!

দিনগুলো ফিরে ফিরে আসে

স্মৃতিগুলো ডুকরে কেঁদে ওঠে

আমরা পূজা শোলোকেই মাতি

গণতন্ত্র মাথা কোটে কোর্টে।

করোনাক্রান্ত সময়ে এভাবেই কেটে যায় দিন আর আমাদের অনন্ত বারোমাস্যা। সবকিছুই কেমন যেন মানিয়ে চলি আমরা। ক্ষোভগুলো ক্রমশই ভোঁতা হতে থাকে, ক্রোধ শমিত হয়, প্রতিজ্ঞা শিথিল হয়। আমরা আমাদের অতিপ্রিয় গণতন্ত্রের নিহত লাশ দেখে, তার রক্তাক্ত দেহ দেখে, তার ধর্ষণলাঞ্ছিত বেশ দেখে, তার অপমান প্রত্যক্ষ করে নির্বিষ ফণির মতো কিছুক্ষণ হিস হিস শব্দ করি, তারপর নিস্প্রাণ মিছিলে হয়তো বা সামিল হই। এখন তো সেসবও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা আমাদের হৃদয়ানুভূতির প্রকাশ ঘটাতে কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লাইভ’ প্রোগ্রাম করে আত্মতৃপ্তি লাভ করি, আবার কখনও বা সরকারি কানুনের প্রতি অতিবাধ্যতায় জনাকয়েক মুখোশ পরে বুকে ‘তীব্র’ প্রতিবাদের পোস্টার ঝুলিয়ে মৃত বৃক্ষের মতো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকি! এতে আমাদের প্রিয় সরোজ দত্তের ‘পবিত্র আত্মা’ কতখানি তৃপ্তিলাভ করেন, কিম্বা কাশ্মিরের নিষ্পেষিত জনসাধারণ কতখানি স্বস্তিলাভ করেন কিম্বা হাথরাসের ধর্ষিতার ‘আত্মা’ কতখানি শান্তিলাভ করেন তা নিরূপণ করা কঠিনতম কাজ বলেই মনে হয়। অথচ এই অবসরে শাসকশ্রেণী তাদের পরিকল্পিত অনুশীলন অব্যাহত রাখেন। তাঁরা এখন আর কোনও প্রতিবন্ধকতারই মুখোমুখি হননা। বিশিষ্ট বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সমর সেনের কথায় ‘বাতাসে প্রহার’ করে আমরা এখন আত্মপ্রসাদ লাভ করি, আর এভাবেই আমাদের ‘অর্জিত সাফল্য’-এর খতিয়ানে নতুন নতুন পালক সংযোজিত হয়! পুলকিত চিত্তে হয়তো আমরাও বলে উঠি : তিন ইঞ্চি চার ইঞ্চি করে, দেখো মাম্মি, আমরা কেমন বড়ো হচ্ছি!

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই ৫ অগাস্ট প্রথম সকালে ময়দানে মিলেছিল কবি-সাংবাদিক-রাজনীতিক সরোজ দত্তের মুণ্ডহীন ধড়। আগের রাতে তাঁকে কংগ্রেসি সরকারের পশ্চিমবঙ্গীয় প্রতিনিধি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের পুলিশ কবিকে গ্রেপ্তার করে নানান জায়গায় ঘুরিয়ে, জিজ্ঞাসাবাদ করার পর, রাতশেষে ময়দানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। যাতে তাঁকে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে তার জন্যে তাঁর ধড়মুণ্ডু আলাদা করে দিয়েছিল আর তারপর সরকারিভাবে তাঁকে ‘নিরুদ্দেশ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁর সেই নিরুদ্দেশের তালিকার মুক্তি আজও ঘটেনি। তাঁর শহিদ হওয়ার মাত্র ছ’বছর পর এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন ‘বাম’ফ্রন্ট সরকার। সিপিএম নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের আমলে সরোজ দত্তের ফাইলও নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল! এভাবেই এই ‘বাম’পন্থিরাও কংগ্রেসি কালচারে শিলমোহর দিয়ে এক অঘোষিত ঐক্যসূত্র রচনা করেছিলেন। আর সেই ঐক্যসূত্রেরই প্রতিফলন তো আমরা এখনও লক্ষ্য করে চলেছি!

এবারের ৫ অগাস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের ‘পূজন’কে কংগ্রেস বিরোধিতা করেনি, সিপিএমও এই ‘পূজন’-এর সমালোচনা করলেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মসূচি থেকে দূরত্ব রক্ষা করছে! এদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এই দিনটিকে ‘বিজয় উৎসব’ হিসেবে পালনের ডাক দিয়েছিল। আগামি বছর নির্বাচনে এরাজ্যের ক্ষমতা দখলে তারা তো মরীয়া। তাদের সহযোগিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নীরবে। ‘আগে রাম পরে বাম’ শ্লোগানও আড়াল আবডাল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে!

গতবছর এই ৫ অগাস্ট কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে বিজেপি সরকার সেখানকার জনসাধারণের ওপর ফ্যাসিস্ত নির্যাতনের মহড়ার নিদর্শন রেখেছিল। একবছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল, কাশ্মির এবং সেখানকার জনসাধারণ এখনও বহির্কাশ্মির থেকে বিচ্ছিন্ন! সেখানকার মানুষের গুমরি ক্রন্দনধ্বনি সীমান্ত পেরোতে পারেনা। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচারের লাগামহীনতা, রক্তস্রোত কখনও প্রকাশ্যে আসবে কিনা নিশ্চিত করে বলা যায়না। আর তার ঠিক একবছর পূর্তির দিনেই অর্থাৎ এবছরের গত ৫ অগাস্টই রামমন্দিরের ভিতপুজোর মহতী আয়োজন সংঘটিত হয়েছে। সমস্ত নিয়মকানুন উপেক্ষা করে সেখানে ‘আইনি’ এবং আবেগি পঞ্চাশহাজার ‘হিন্দু’জমায়েত অবশ্যই আরও এক সস্পর্ধ ‘ইতিহাস’ রচনা করেছে! আমাদের রাজ্যের শাসকদলও এই ভূমিপুজোর সঙ্গে দ্বন্দ্বহীন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিল। মুখে কট্টর বিজেপি বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তারা এই ভিতপুজোর বিরোধিতা করেনি। তবে এদিন সরকারি ‘বন্ধ’ (সম্পূর্ণ লকডাউন) জারি করায় এরাজ্যের বিজেপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। আসলে আসন্ন নির্বাচনে হিন্দুভোট কেউই হারাতে চায়না, ফলে এই মন্দিরনির্মাণ নিয়েও কোনও প্রকাশ্য দ্বন্দ্বেও কেউ যায়নি। এও সম্ভবত এক অঘোষিত চুক্তির ঐতিহাসিক নিদর্শন!

আজ থেকে ঠিক তিরিশ বছর আগে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে লালকৃষ্ণ আদবানি স্বয়ং রামচন্দ্র-বেশে রথারূঢ় হয়ে অযোধ্যাযাত্রার সূচনা করেছিলেন। তার ঠিক দু’বছর পর ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক স্মারক বাবরি মসজিদকে ভেঙে ধূলিসাৎ করে, কমপক্ষে দু’হাজার লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে, এদেশে ফ্যাসিস্ত কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল হিন্দুত্ববাদিরা। তার দীর্ঘ আটাশ বছর পর ফ্যাসিস্ত হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতার তখত-তে থাকার সুযোগে, এবং গতবছর ৯ নভেম্বর সরকার-মিত্র বিচারব্যবস্থার অনুকূল রায়দানের সূত্রে, সেই বাবরির ধ্বংসস্তূপে কথিত ‘ভগবান’ রামচন্দ্রের বিশালাকায় মন্দির নির্মাণকল্পে ভিতপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল হিন্দুত্ববাদিদের তরফে কাশ্মিরে ফ্যাসিস্ত শাসন কায়েমের একবছর পূর্তির দিনেই! এর মধ্যে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্তরা সারাদেশের কাছে কী বার্তা দিতে চাইছে তা কি আর ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে?

এই করোনাকালে যখন জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তখন বিজেপি মাঝমধ্যেই সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই জমায়েত করে চলেছে। এদিনও তারা কোনও নিয়মকানুনকে মান্যতা না দিয়েই জমায়েত করে সংক্রমণ-বান্ধব ভূমিকা গ্রহণ করেছিল জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে! আর এই পূজোর উদ্বোধন করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং! এটা কি সংবিধান সম্মত? এই মন্দিরনির্মাণ কিম্বা ভিত ‘পূজন’ কি সরকারি প্রোগ্রাম? সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত-এর সঙ্গে কেন সেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন? কেন সেখানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল সমাবেশিত হয়েছিলেন? ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে এই রামমন্দির নির্মাণে দেশের মানুষের কোন সমস্যার সমাধান হয়েছে বা অদূর ভবিষ্যতে হবে? এই টাকা কার? এসব প্রশ্ন কিন্তু অনুক্তই থেকে গিয়েছে। কোনও বিজেপি-বিরোধী দলই সম্ভবত এই প্রশ্নের অবতারণা করেনি পাছে হিন্দু-ভাবাবেগে আঘাত লাগে, পাছে আগামি নির্বাচনে হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে! আর এই প্রশ্নহীনতাই বিজেপি-কে, দেশের ফ্যাসিস্ত সরকারকে, সুযোগ সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে দু’কদম এগিয়ে দিয়েছে! ডান ‘বাম’ নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলই এক ঘুরপথে এই ফ্যাসিস্ত কার্যক্রমকে আনুকূল্যদান করেছে!

আজ থেকে আটষট্টি বছর আগে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সোমনাথ মন্দিরের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র প্রশ্নে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জহরলাল নেহেরু রীতিমতো আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি এই ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে নিজেকে, নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়টিকে, জড়াননি। অথচ সেই দৃষ্টান্তকে সম্মান না জানিয়েই গত ৫ অগাস্ট আমাদের দেশের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী এই মন্দিরনির্মাণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে এবং নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকে একাকার করে দিয়েছেন!

আজ হারিয়ে গিয়েছে কবি-সাংবাদিক-রাজনীতিক সরোজ দত্তের শহিদত্বের প্রশ্ন, আজ হারিয়ে গিয়েছে কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফ্যাসিস্ত হত্যালীলা। সেদিন দেশজুড়ে ‘ভগবান’ রামচন্দ্রের নামে প্রচারিত ফ্যাসিস্ত রণধ্বনি ‘জয় শ্রীরাম’ নিনাদিত হয়েছে, রামমন্দিরের ভিত ‘পূজন’-এর মহোৎসব পালিত হয়েছে! দেড়লক্ষ লাড্ডুর মহোৎসব সংঘটিত হয়েছে! ইকবাল আনসারি, মহম্মদ শরিফের সামনে উচ্চারিত হয়েছে হিন্দুভারতের ভবিষ্যত-গাথা! অসাধারণ ‘গণতান্ত্রিক’ এবং ‘সহনশীল’ হিন্দুত্ববাদিরা মুসলিম জনসাধারণের মনে ত্রাস-সঞ্চারক বাণী দান করেছেন! ইকবাল আনসারি-মহম্মদ শরিফদের বুকের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে ভয়ের শীতল স্রোত!

আর তখন অন্যদিকে দেশ জুড়ে করোনাক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লক্ষ অতিক্রম করেছিল, (বর্তমানে এই সংখ্যা ৭৩,৭০,৪৬৮) মৃতের সংখ্যা অর্ধ লক্ষের দিকে দ্রুত এগোচ্ছিল (বর্তমানে এই সংখ্যা ১,১২,১৬১)! এনিয়ে সরকারের কোনও শিরঃপীড়া লক্ষ্য করা যায়নি! রোগ-এর কারণ নির্ণয় সঠিকভাবে এখনও করা যায়নি, অথচ বেসরকারি হাসপাতাল এই রোগের চিকিৎসার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করে চলেছে! সরকার নির্বিকার! করোনাক্রান্তকে কার্যত অস্পৃশ্য করে তোলা হচ্ছে, আর এই অশুভ প্রবণতার মুখেও সরকার অসহায়! চিকিৎসক যারা এই রোগের চিকিৎসার জন্যে প্রাণপাত করছেন তিনি এই রোগে আক্রান্ত হলেই বর্জনের শিকার হচ্ছেন! শবদেহ দাহ নিয়ে বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে, দাহকার্যে বাধা দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে সরকার অসহায়! যেন কিছু প্রথাগত হম্বিতম্বি প্রকাশ ছাড়া প্রশাসনের আর কিছুই করার নেই। আর এর আড়ালে কায়েমি স্বার্থ ফুলে ফেঁপে উঠছে। এই করোনাকাল এবং লকডাউন এক সংগঠিত অশুভ শক্তির কাছে পৌষমাস হিসেবে দেখা দিয়েছে। তার ব্যাস থেকে ব্যাসার্ধ কিন্তু একই সুতোয় গ্রথিত। আড়াল থেকেই সেই শক্তি তাদের কাজ করে চলেছে। বাস্তবিক দেশজুড়ে এই কালবেলায় ফ্যাসিস্তরা তাদের সমস্ত অপকর্ম তথা জনস্বার্থবিরোধী কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে চলেছে। এখন তো বিভিন্ন মহল থেকে এই করোনা এবং লকডাউন নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু কোনও সরকার সেইসব প্রশ্নের ধারকাছ দিয়ে যাচ্ছেন না। তারা নিঃশব্দে তাদের কাজ হাসিল করতে তৎপর। আর এরই মধ্যে তাদের এই রামমন্দিরের ভিত ‘পূজন’-এর মহোৎসবের এই মহতী আয়োজন করেছিলেন। কোনমতেই এই ‘পূজন’ পিছিয়ে দেওয়ার তারা পক্ষপাতী তাঁরা ছিলেন না।

এ বছরের সেই ৫ অগাস্ট কাশ্মিরে আবার কার্ফু জারি করা হয়েছিল সেখান থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে বর্ষপূর্তিতে পাছে সেখানকার জনসাধারণ বিক্ষোভ দেখান তার মোকাবিলার লক্ষ্যে। ৮ অগাস্ট পর্যন্ত এই কার্ফু জারি থেকেছিল। অর্থাৎ সেখানে মানুষের প্রতিবাদের কোনরকম সুযোগ বিজেপি সরকার দিতে চায়না। একদিকে এভাবে কাশ্মিরে তারা তাদের সামরিক শাসন কায়েম রেখে সন্ত্রাস বহাল রাখছে, অন্যদিকে তেমনই হিন্দুত্বের নবজাগরণের লক্ষ্যে রামমন্দিরের ভিত্তিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় ‘পূজন’ নামক মহোৎসবের ঢক্কানিনাদের আড়ালে কাশ্মিরের ক্ষুব্ধ জনসাধারণের কণ্ঠস্বর যাতে এতটুকু প্রকম্পন তুলতে না পারে তার ব্যবস্থা করেছে। সারাদেশ এখন এই রামমহিমায় ম ম করছে! আগামি দিনগুলিতে হিন্দুত্ববাদিদের নতুন নতুন মহড়ার এই কলাক্ষেত্র তারই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে চলেছে।

আর একই দিনটি ছিল কবি-সাংবাদিক-রাজনীতিক সরোজ দত্তের শহিদ দিবস, করোনা এবং লকডাউনের শাসনমান্যতায়, বিস্ময়বিমূঢ় নেত্রে এই উৎসবের প্রচারিত প্রদর্শিত সংবাদের দিকে তাকিয়ে, আত্মবিস্মৃতের মতো, আমরা কি গেয়ে উঠেছি : ওহে বিহঙ্গ, তবু বিহঙ্গ, এখনি অন্ধ বন্ধ করোনা পাখা!

0 Comments

Post Comment