পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট

  • 07 May, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 748 view(s)
  • লিখেছেন : সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে। আজ সতেরোই অগ্রহায়ণ। ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।এবার শীতে না বড়ো ভোগান্তি হয়। দিন ছোটো, রাত শেষ হতে চায় না।


সন্ধ্যে ছটা মানেই এখানে রাত নামে বড় বড় শাল গাছের মাথা বেয়ে। ঘুমিয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম।ঘরের বাইরে কারো দেখা পাওয়া ভার।কারো কারো ঘর থেকে টেলিভিশনের শব্দ কানে আসে। আপদে বিপদে কেউ চিৎকার করলে সহজে কারো সাড়া পাওয়া যায় না। ইলেক্ট্রিক পোলে পোলে লাগানো বাতি গুলো শুধু মাত্র জেগে থাকে। পাড়ার নেংটি কুকুর গুলো রাতের প্রহরী। অন্ধকারে কাউকে দেখেছে কি ওমনি ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে দেয়।
চাষীদের সারা বছরের গচ্ছিত ধন মালক্ষ্মী ঘরে আসছে,সকাল থেকে সন্ধ্যে হাড়ভাঙা খাটুনি।অন্ধকার নামার সাথে সাথেই ক্লান্ত শরীরের মানুষগুলো বিছানা নেয়।
রবিবার,ছুটির দিন। গতকাল স্কুল ছুটি হতেই জয়দেব ছুটেছিলো শহরে। অজানা জ্বরগুলো বড়ো ভোগাচ্ছে,সে বিষয়ে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে।আজ বেলা দশটার সময় বাড়ি ফিরেই বিছানায়। শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না। অজানা জ্বরের ইনফেকশন হলো কি না কে জানে।
এই জঙ্গলের ভেতর গ্রামগুলোর কাছে জয়দের শুধু মাষ্টার নয়,ডাক্তারও।
ঘরের ভেতর ঢুকেই জয়দেব কে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে বুড়ি বলে--দাদাবাবু অসময়ে শুলে যে ভারী,শরীর খারাপ লাগছে? দশের বুড়ির কথার জবাব দেয় জয়দেব--হ্যাঁরে শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।
জয়দেবের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বুড়ি বিছানায় শুয়ে থাকা জয়দেবের বুকে মাথায় হাত দিয়ে বলে –কই শরীর তো গরম ঠেকছে নাই,জ্বর লয় মনে হয়। আমি বরং একটু জল গরম করে দিই। তুমি চান করে উঠোনে রোদে বসবে,দেখবে ভালো লাগবে।
মাঝ-দুপুর,ঘড়ির কাঁটা দুটো ছুঁই ছুঁই। খাওয়াটা আজ একটু বেশিই হয়েছে। বুড়িটা ঐটুকুনি মেয়ে হলে কি হবে রান্নাটা বেশ জমিয়ে করে।
শীতের ছোটো দুপুরটা তাড়াতাড়ি শেষ হতে চায়।বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জয়দেবের মনে পড়ে বুড়ির কথা—যেদিন প্রথম এই গ্রামের প্রাইমারি শিক্ষক হিসাবে সে যোগ দিতে এসেছিলো একদম ভালো লাগেনি। পিচ রাস্তা থেকে অনেকটা জঙ্গলের ভেতর গ্রামটা। না আছে কোনো যাতায়াতের ব্যাবস্থা, না আছে থাকা-খাওয়ার ব্যাবস্থা। কি যে হবে সেই ভেবেই অস্থির অবস্থা। পিচরাস্তা থেকে শহরের দূরত্ব পঁচিশ কিলোমিটার। তার মানে সবমিলিয়ে মেরেকেটে পঁয়ত্রিশ। তাই জয়দেব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এই গ্রামেই যদি একটা কোনো রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে। সে উপায়টা বাতলে দিয়েছিলো স্কুল কমিটির প্রধান। গ্রামেরই একধারে একটি বাচ্চা মেয়ে একলা থাকে, যদি আপনার আপত্তি না থাকে তাহলে থাকতে পারেন। মেয়েটাও দুবেলা দুটো পেট পুরে খেতে পাবে। বাপ, মা মরা মেয়ে কিনা। শেষমেশ আর কোনো উপায় না থাকায় জয়দেব রাজি হয়েছিলো বুড়ির ঘরে থাকতে। ছোট্ট বুড়ি আপত্তি করেনি, বরং তার ভালোই হলো। রাত বিরেতে এমনিই সে ভয়ে কাঁথা বিছানার ভেতর গুটিয়ে শুটিয়ে থাকত।
দিনকয়েক যেতে না যেতে বুড়ির খুবভাব হয়ে গেলো নতুন মাষ্টার জয়দেবের সাথে। বুড়ির মুখ থেকেই শুনেছে জয়দেব—ক'টাদিন আগেও মেয়েটার জীবনে কত রঙ ছিলো। দুচোখে কত স্বপ্ন ছিলো। স্কুলের খেলাধুলায় দৌড়ে ডিস্ট্রিক চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলো। একদিন সকাল বেলায় বুড়ির বাবা-মা জঙ্গলে পাতা কুড়াতে গিয়েছিলো সঙ্গে ছিলো পাঁচ বছরেরে ছোটো ভাইটাও। একটা ল্যান্ডমাইনেই বুড়ির জীবন থেকে সব রঙ কেড়ে নেয়। ঐটুকুনি একটা মেয়ের চোখে দেখা স্বপ্নগুলো তারপর থেকে স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেছে।
বুড়ির কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো জয়দেব। বুড়ির ডাকেই তার ঘুম ভাঙে। এক কাপ চায়ের আবদার যায় বুড়ির কাছে। ঘড়ির কাঁটা পাঁচের ঘরে এরই মধ্যে আকাশ থেকে নেমে আসে ঝুনকি ঝুনকি অন্ধকার,ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। আর তার সাথে বাতাসে ভাসে একটা বনজ ফুলের সুবাতাস। জঙ্গলের যত শেয়াল প্রতিদিনের মত নিয়ম করে খেঁকি সুরে একসাথে ডাকতে শুরু করে। তারই মধ্যে পুলিশের জিপটা একবার রাউন্ড মেরে গেলো। বুড়ির মুখেই জয়দেব শুনেছে--দাদাবাবু আমাদের এলাকা ভালো নয়, উই জঙ্গলের ভেতর কারা নাকি লুকিয়ে থাকে। পুলিশ তো উদের ধরতেই আসে। আমাদের গ্রামের কেউ কেউ নাকি উদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
–তুই দেখেছিস কখনো ওদের? জয়দেব প্রশ্ন করে বুড়িকে। উত্তর দেয় বুড়ি--হ্যাঁগো,একবার সন্ধেয় একটা লোক মুখে কাপড় বেঁধে আইছিলো। আমাকে দিয়ে রুটি করিয়ে নিয়ে গেইছিলো।
বাড়ির পিছনের পুকুরপাড় হয়ে ধান জমির আল পথ ধরে একটু যেতেই রেললাইন। রেললাইনের নিচে নেমেই সাঁওতাল পাড়া। ওখানের ক্লাব ঘরে রোজ এক ঘন্টা করে স্বাক্ষরতা অভিযান চলে জয়দেবের। তারপর মাহাতো পাড়ায় যাত্রার রিহার্সাল। গ্রামের ছেলেরা সকলে মিলে যাত্রায় অভিনয় করবে পাড়ার স্বরস্বতী পুজোয়। জয়দেব থাকবে পর্দার আড়ালে।
গাঁয়ের সবখানেই জয়দেব বড় ভূমিকা নেয়। ফুটবল হলে রেফারি, ক্রিকেটে আম্পায়ার। শুধু কি তাই,এই এলাকার মানুষ জয়দেবকে খুব মান্যিও করে। রাস্তায় জয়দেব যখন সাইকেল নিয়ে পেরিয়ে যায় সবাই তার খোঁজ খবর নেয়। কেউ হয়তো মাঠে কাজ করছে,জয়দেবকে দেখে দূর থেকে হাঁক পাড়ে--মাষ্টার কুথায় যাচ্ছো,সব ঠিক আছে তো?
কদিন আগের কথা,বাউরি পাড়ার ছেলেরা ঠিক করেছিলো কার্ত্তিক পুজোয় রোডে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করবে। কথাটা জয়দেবের কানে আসতেই সে তো রেগে আগুন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটেছিলো বাউরি পাড়ায়।
সাথে সাথে রোডে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল। পরিবর্ত্তে বাউরি পাড়ার ছেলেরা সবাই মিলে তিনদিন ধরে ঠিকেই (চুক্তিতে) জমিতে ধান কেটে টাকা জোগাড় করল। তারপর বেশ ধুমধাম করে কার্ত্তিক পুজো হলো। জয়দেবের পকেট থেকেও বেশ কিছু নগদ টাকা খসেছিলো।

          বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। আবহাওয়া দপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাস মিলে গেছে অক্ষরে অক্ষরে। শীত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। জারি হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। টেলিভিশনের খবরে খবর হচ্ছে শীতের কবলে পড়ে বেশ কয়েক জনের স্বর্গালোকে যাত্রা হয়েছে।
সন্ধ্যে হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ, বিছানায় লেপ গায়ে বই এর পাতায় মন জয়দেবের। ইদানীং সন্ধ্যেবেলাটা ঘরে বসেই কাটছে তার। সাঁওতাল পাড়ায় স্বাক্ষরতা অভিযান বন্ধ। কপালে একটা দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ কদিন ধরেই উড়ে বেড়াচ্ছে মনের আকাশে। পাছে জমাট বেঁধে কিছু একটা কান্ড ঘটায় সে চিন্তায় এখন তাকে ঘিরে ধরেছে।
এই জঙ্গলের মাঝে সেই প্রথম যেদিন এই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাষ্টার হয়ে এসেছিলো জয়দেব, বুড়িকে নিয়ে কয়েকটা দিন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে সে একটা লক্ষ্য স্থির করেছিলো মনে মনে। এখানকার বাচ্চা ছেলেপুলেদের শুধু শিক্ষা দিলে হবে না। সাথে সাথে তাদের বাবা মাদেরও অল্প স্বল্প লেখাপড়া শেখাতে হবে। সেদিক দিয়ে জয়দেবকে বেশ খানিক সফল বলা চলে। এই তো কদিন আগেই এলাকায় জব কার্ডের কাজ হলো, আদিবাসী পাড়া, মাহাতো পাড়া এমনকি বাউরি পাড়ার নারী- পুরুষ সকলে নিজের নিজের সই করে নিজের পারিশ্রমিক নিয়েছে।
ঠিক এই ব্যাপারটাই ভালো চোখে দেখেনি এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতারা।
গ্রামের হালি পেচো মাতাল পিন্টুকে লাগিয়ে দিয়েছে জয়দেবের পিছনে। এই তো সেদিনের ঘটনা জয়দেব সন্ধেবেলায় সাঁওতাল পাড়া থেকে বাড়ি ফিরছিলো, মাঝরাস্তায় জয়দেবকে হুমকি দেওয়ার সুরে পিণ্টু বলেছিলো– মাষ্টার, আপনি কিন্তু একটু বেশিই বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে-----।জয়দেব পিন্টুর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলো। তারপর এই তো সেদিন জয়দেব সাঁওতাল পাড়ার সবাইকে নিয়ে পড়াতে বসেছিলো, পিন্টু মদ্যপ অবস্থায় হাজির হয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করল। জগুদা পিন্টুর ঘাড় ধরে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলো। পিন্টু এখন ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ঘুরছে,সু্যোগ পেলেই--------।
গেল রোববার পিন্টুদের পার্টির ব্রিগেডে সমাবেশ ছিলো, পিন্টুর উপর দায়িত্ব ছিলো বাস ভর্ত্তি করার। সাত সকালে পিন্টু সাঁওতালপাড়া, মাহাতোপাড়া, বাউরিপাড়ায় গিয়ে ঘরে ঘরে বলে এসেছিলো। কিন্তু তাতে করে বিশেষ কিছু কাজ হয়নি। পিন্টুকে শুনতে হয়েছিলো —-তুদের পার্টি তুরা করগা, আমরা মাঠে ঘাঠে খেটে খাওয়া মানুষ কাজ কামাই করে যেতে পারবো নাই।
এক তো মুখের উপর কথা তার উপর পিন্টু পার্টির ব্রিগেড সমাবেশে বাস ভর্ত্তি করে লোক নিয়ে যেতে পারে নাই। সমস্ত ঘটনা পার্টি মিটিং এ বলতে গিয়ে উলটে ঝাড় খেয়েছে। উপর তালার নেতারা বলেছে, পিন্টু মিয়িয়ে গেছে, ওর দ্বারা আর পার্টি করা হবে নাই। যা শুনে পিন্টুর যথারীতি মাথা খারাপ হয়েছে। আর এই সবকিছুর জন্য সে দায়ী করেছে জয়দেবকে। তার সমস্ত রাগ এখন গরম জল হয়ে ফুটছে কড়াইয়ে, যে কোনো সময় সে তা ঢেলে দিতে পারে জয়দেবের মাথার উপর।
বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে চোখ সরিয়ে রাখে জয়দেব। কিছু ভালো লাগেনা। চোখে মুখে একটা অস্বস্তির ছাপ দিনের দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে সে-----তাহলে কি পিন্টুদের ভয়ে আমি পিছিয়ে এলাম, সরে এলাম আমার লক্ষ্য থেকে। এ প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারে না জয়দেব।
বুড়ি এসবের কিছু জানেও না,বোঝেও না। তবে তার চোখে কিছু এড়ায়নি। সে লক্ষ্য করেছে তার দাদাবাবু আজ কাল আর আগের মতো সাঁওতাল পাড়ায় যায় না।
বিছানা ছেড়ে উঠে বসে জয়দেব, টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। ঘন ঘন টান দিতে থাকে। ধোঁয়ায় ঘর ভরে যায়। বুড়ি ঘরে ঢুকে সিলিং ফ্যানটা চালিয়ে দেয়, জানালাটা খুলে দেয়। সিলিং ফ্যানের বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া মিশে গিয়ে বেরিয়ে যায় জানালা দিয়ে।
জয়দেবের ভয়টা অন্য জায়গায়, আসলে পিন্টুর মত ছেলেদের বিশ্বাস নেই। দন্ডমুন্ডের কর্তাদের অঙ্গুলিহেলনে সে কি না করতে পারে। অথচ কিছুদিন আগেও জয়দেবকে কত সম্মান করত পিন্টু। কিছুদিন টিউশন ও পড়েছিলো। এখন তার রাত দিনের ঠিক নেই,মদ খেয়ে এখান ওখান পড়ে থাকে। এলাকার নেতাদের একটা চাকরির প্রলোভনেই ছেলেটা---!
চোরা শিকারিরা জঙ্গলের শিকের (খরগোশ)ধরার জন্য দিনের পর দিন ফাঁদ পেতে রাখে। শিকের ফাঁদে না পড়লে তারা হতাশ হয়। তবু আশা ছাড়ে না। পিন্টু ও দিনের পর দিন জয়দেবকে ফাঁদে ফেলার জন্য ফন্দি আঁটে,সাফল্য না এলেও আশা ছাড়েনা।
এদিকে জয়দেব মনের ভয়কে জয় করে আবার নিয়মিত যাতায়াত শুরু করে সাঁওতাল পাড়ায়। এখনো তার অনেক কাজ বাকি। ওদের ক্লাবের পরিচালনায় ফুটবল টুর্নামেন্ট, ক্লাবের সরকারি স্বীকৃতি এমনকি ওরা যে সব জায়গায় বসবাস করে তার বৈধ কাগজপত্র।
হঠাৎ করে একদিন শিকারির ফাঁদে শিকের ধরা পড়লে শিকারি যেমন আনন্দে বিহুল হয় তেমনি পিন্টুও আনন্দে টগবগ। এবার তার পাতা ফাঁদে আটকা পড়বেই জয়দেব মাষ্টার। আসলে টেলিভিশনের নিউজ চ্যানেলটাই তো বুদ্ধিটা বাতলে দিল, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বিকাল শেষ,সূর্য অস্ত গেছে অনেকক্ষণ। ঝুনকি ঝুনকি অন্ধকার জমাট বাঁধতে থাকে। বুড়ি প্রদীপ হাতে তুলসিতলায় দাঁড়িয়ে। এমন সময় জিপ গাড়িটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল।
জিপ থেকে থানার বড়োবাবু নেমে এলেন। বুড়ি এক ছুটে বাড়ির ভেতর। জয়দেব বেরিয়ে আসে। বড়োবাবু বললেন, কিছু মনে করবেন না মাষ্টারমশাই, একটা ইনফরমেশন পেয়ে আসতে হয়েছে। আপনার বাড়িটা একটু---।
বড়োবাবু কথাটা শেষ করার আগেই জয়দেব বলল--সার্চ করবেন তো,করুন।
দুজন কনষ্টেবল জিপ থেকে নেমে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। সাজানো জিনিষ পত্র তছনছ করে চালাতে থাকে তল্লাশি। বুড়ি রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে দেখে তার দাদাবাবুকে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে বুড়ি বুঝতে পারে তার দাদাবাবুর মনে আজ বড় কষ্ট।কিছুক্ষণের মধ্যে একজন কনষ্টেবল বেরিয়ে এসে বলল,না স্যার কিছু পাওয়া যায়নি। আর একজন এসে বলল,সবই দেখলাম স্যার, কিছু পেলাম না। তবে খাটের নীচে একটা টিনের বাক্স তালা দেওয়া অবস্থায় পড়ে আছে।
বড়োবাবু অর্ডার দিলেন, ভেঙে দেখুন।
বাক্স ভাঙা হতেই-------!
বড়বাবু জয়দেবের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,বেআইনি অস্ত্র রাখার অপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে,ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মি: জয়দেব মুখার্জী।
হাঁ করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বুড়ি। কি হচ্ছে সে কিছু বুঝতে পারে না।
পুলিশ জিপে তুলে নিয়ে গেল জয়দেবকে। বুড়ি পিছন পিছন বেশ কিছুটা ছুটে গেলো।
বেআইনি অস্ত্র রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক,পরদিন সকাল হতেই খবরটা সূর্যের আলোর মত ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে।
গ্রামের মানুষ কিছুটা হতবাক। তারা কি যে করবে বুঝে উঠতে পারে না। পিন্টুর দলবল প্রচার করল জয়দেব মাষ্টার নাকি তলে তলে নিষিদ্ধ সংগঠণের সাথে যুক্ত,যাদের কাজ দেশদ্রোহীতার সামিল।
খবরের কাগজ থেকে টেলিভিশনের বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে এই নিয়ে হৈ চৈ কান্ড। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গ্রামে আরো পুলিশ এলো। এমনকি বিভিন্ন টিভি থেকে খবরের কাগজের সাংবাদিক।
একজন সাংবাদিক বুড়িকে জিজ্ঞাসা করল,এ ঘটনা সম্পর্কে তুমি কি কিছু বলবে?
বুড়ি বলে উঠল--আমার দাদাবাবু কোনো অপরাধ করেনি, আসলে দাদাবাবু তো একজন দেশপ্রেমিক তাই ইংরেজ এসে ধরে নিয়ে গেছে।

0 Comments

Post Comment