পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বিজেপি-আরএসএস কোন মুখে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলছে?

  • 03 July, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 437 view(s)
  • লিখেছেন : সম্প্রীতি মুখার্জী
অনুমান করা যায়, তারা কার্তিক মহারাজ, রাম রহিমদের মত ধর্ষকদের নিজের বাবার আসনে বসায়। তাই ধর্ষকদের দিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালায়। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মেয়েরা, ক্যুয়াররা কথা বললে তাই এদের গাত্রদাহ হয়। যারা আদর্শগতভাবে নারী ও কুকুরকে সমার্থক ভাবে, যারা নারীদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চায়— সেই বিজেপি, আরএসএস-এর ধর্ষণের ঘটনার বিরোধিতা আসলে নিপীড়িতদের অভিজ্ঞতাকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টার বাইরে কিছুই নয়।

গত ২৫ জুন সাউথ কলকাতা ল কলেজের এক ছাত্রীর উপর যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের প্রভাবশালী নেতা, উক্ত কলেজের তৃণমূলের বদ্দা আর কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিত মিশ্র কলেজের ইউনিয়ন রুম ও গার্ড রুমের মধ্যে দুই দফায় ঘটনা ঘটে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং মনোজিত মিশ্রের নির্দেশে কলেজের দুজন সিনিয়র ছাত্র প্রমিত মুখোপাধ্যায় আর জেড আহমেদ নিপীড়িতাকে ইউনিয়ন রুমে আটকে রাখা থেকে শুরু করে তার যৌন-হেনস্থা আর ধর্ষণ করতে, নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও তুলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা অবদি সম্পূর্ণ অপরাধ সংগঠিত করতে সহায়তা করেছে। তৃণমূলের শাসনে কলেজ থেকে পাড়ায় দলীয় গুন্ডা বাহিনীর দাদাগিরি, বেলাগাম দুর্নীতি, হুমকি, মারধর থেকে যৌন-হেনস্থা ও ধর্ষণ এবং এগুলি করার খোলা ছূট অর্থাৎ কোনো শাস্তি না হওয়া, দায়বদ্ধতা না নেওয়া জলভাত হয়ে গেছে। তাই আর জি করের ঘটনা একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ঘটার এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই একটি সরকারি ল কলেজে অনুরূপ ঘটনা ঘটল। আর জি করের মামলায় একজন অপরাধীর শাস্তি হওয়ার পরেও যে প্রশ্ন গুলির উত্তর মেলেনি, অর্থাৎ আরজি করে কর্মরত অবস্থায় যে মহিলা ডাক্তারটি নীপিড়িত ও খুন হলেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কতৃপক্ষের ব্যার্থতা, অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ায় কতৃপক্ষ, প্রশাসন ও পুলিশের অকার্যকরী ভূমিকা যা মামলাটির রায়ে স্পষ্ট এবং সর্বোপরি পশ্চিমবঙ্গের কলেজ, ক্যাম্পাস, সংগঠিত ও অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে যৌন-হেনস্থা বিরোধী কমিটি গুলির নিস্ক্রিয় ভূমিকা।

নির্যাতিতা এই চরম নৃশংস নির্যাতন আর হুমকির মুখে রুখে না দাঁড়ালে হয়ত অন্যান্য বিভিন্ন অজানা নির্যাতনের অভিজ্ঞতার মত এটিও চাপা পরে থাকত। তার সাহসের ফলে সামনে আসছে উক্ত ল কলেজের প্রাক্তণ সভাপতি ও বর্তমান কর্মী মনোজিত মিশ্রের পুরোনো বিভিন্ন কীর্তিকলাপ- কীভাবে সে দিনের পর দিন কলেজের  বিভিন্ন ছাত্রীদের উত্যক্ত করেছে। নির্যাতিতাকে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তৃণমূল দলে রাজনৈতিক পদ ও ক্ষমতা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে। মেয়েটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে ধর্ষণ করেছে। অর্থাৎ সম্পূর্ন ঘটনাটি ক্ষমতা কায়েমে চেষ্টা, একটি মেয়ে যে কলেজের প্রভাবশালী শাসক দলের নেতার চোখ রাঙানি আর যৌন সুবিধা ভোগের প্রস্তাবকে না বলতে পারে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা পেতে চেয়েছে। এহেন মনোজিতের নামে পূর্বে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাকে আটকাতে, কলেজ থেকে বের করতে পারেনি। কেন? উলটে পাশ করে যাওয়ার পরেও তাকে কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রেখে শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে তৈরী কলেজ কতৃপক্ষ ও গভর্নিং বডিগুলির মনোনিত সদস্যদের নিয়ে ছাত্র কাউন্সিং গড়া আর কলেজ ফেস্টের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার কারচুপি, অন্যদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা অন্যদিকে মদন মিত্র, কল্যান বন্দোপাধ্যায়ের মতন তৃণমূলের পিতৃতান্ত্রিক নেতাদের খোলা ছুট যারা নির্যাতিতাকে দোষারোপ করে অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে লিঙ্গ-অসংবেদনশীলতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।।এই পদ্ধতিতেই মনোজিত মিশ্রের মতন যুব নেতাদের তৈরী করা হচ্ছে। সাউথ কলকাতা ল কলেজের ঘটনা তাই মানুষের মনে আবারো ক্ষোভ জাগিয়ে তুলেছে। কারণ নির্যাতিতা নিজের ন্যায়ের জন্য লড়ছে। এবং তা ধামাচাপা দেওয়ার সব চেষ্টাকে ধূলিসাৎ করেছে। তিনি ন্যায় বিচার চাওয়ার পদক্ষেপ নিয়ে শাসকের ধর্ষকের ক্ষমতার আস্ফালনকে গুডিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, প্রগতিশীল, নারীবাদী আর বামপন্থী শক্তি ও দলগুলি পথে নামছে।

এমতাবস্থায় এই ঘটনার তদন্ত করতে বিজেপি মিডিয়ায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল পাঠিয়েছিল সাউথ কলকাতা ল কলেজে। এই ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের সাথে আসা বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা মেনে নিতে পারেননি ওই কলেজের সামনে প্রতিবাদরত বিভিন্ন নারীবাদী দলের স্লোগান— ‘পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে।’ কারণ প্রতিবাদী মেয়ে ও ক্যুয়ার মানুষেরা উক্ত ল কলেজের গণধর্ষণের ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে আরজিকর থেকে উন্নাও, হাথরাসের যোগ টেনেছিলেন। উক্ত ঘটনায় মূল  অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র সংসদের প্রভাবশালী নেতা মনোজিত মিশ্রের শাস্তির সাথে তারা বিজেপি দ্বারা পদ্মশ্রী পুরস্কৃত কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগের বিচার চাইছিলেন। তাতেই ঝাল লেগেছে বিজেপির নারী-বিদ্বেষী কর্মীদের। প্রসঙ্গত যৌন নির্যাতনের তদন্ত করতে আসা টিমের সদস্যদের মধ্যে একজন মহিলা এবং বাকীরা সবাই পুরুষ। এই টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে বিপ্লব দেব যার বিরুদ্ধে গৃহ হিংসার নথিভুক্ত অভিযোগ রয়েছে, রয়েছেন মনন কুমার মিশ্র যিনি প্রকাশ্যে প্রাক্তণ প্রধাণ বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে যৌন-হেনস্থার অভিযোগ ওঠার সময় প্রকাশ্যে গগৈকে সমর্থন দিয়েছিলেন। রয়েছেন, সত্যপাল সিং যিনি হাথরাস আর উন্নাও-এর ঘটনার সময় সরকার ও প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা এড়াতে বলেছিলেন যে, সরকার আর পুলিশ কেউ ধর্ষণ আটকাতে পারবেনা।

তারা মেয়েদের ও ক্যুয়ার মানুষদের জমায়েতের উপর হামলা চালিয়েছে। ভেঙে দিয়েছে রিকশায় লাগানো চোঙা, ছিঁড়ে দিয়েছে পোস্টার, ব্যানার, মেয়েদের জামা। মিডিয়া বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের এর কারণ জানতে চাইলে তারা প্রকাশ্যে বলছে, ‘আমরা সেক্যুলার নই, ভারতপন্থী। আমরা বাবার বিরুদ্ধে কথা বলি না। আমাদের বাবার নামে বললে ছেড়ে কথা বলব না।’ অনুমান করা যায়, তারা কার্তিক মহারাজ, রাম রহিমদের মত ধর্ষকদের নিজের বাবার আসনে বসায়। তাই ধর্ষকদের দিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালায়। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মেয়েরা, ক্যুয়াররা কথা বললে তাই এদের গাত্রদাহ হয়।

গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে আরজিকর-সহ বিভিন্ন যৌন-নির্যাতনের ঘটনায় বিজেপির লম্ফঝম্প আমরা দেখেছি। অথচ বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে একের পর এক গণধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে চলেছে। এর মধ্যে একাধিক ঘটনায় অভিযুক্তরা বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর নেতৃস্থানীয় সক্রিয় সদস্য অথবা ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি। সম্প্রতি বিজেপি-শাসিত ওড়িশায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা ভবানী শঙ্কর দাস। নিপীড়কদের তালিকা দীর্ঘ।

এই ঘটনাগুলিতে বিজেপির কোনো তৎপরতা তো দেখা যায় না— উল্টে আসিফার ধর্ষকদের পক্ষে মিছিল করা, বিলকিসের গণধর্ষকদের মালা দিয়ে বরণ করা, মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন নিপীড়ক ব্রিজভূষণ ও তার ঘনিষ্ঠদের ক্ষমতা দিয়ে আড়াল করার নির্লজ্জ পিতৃতান্ত্রিক নিদর্শন আমাদের সামনে রয়েছে। উপরন্তু, বিজেপি উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় একের পর এক লিঙ্গ-বিদ্বেষী আইন, যেমন লাভ-জিহাদ বিরোধী আইন ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে মেয়েদের ও প্রান্তিকায়িত লিঙ্গ-যৌনতার মানুষদের স্বাতন্ত্র্যের উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে।

যারা আদর্শগতভাবে নারী ও কুকুরকে সমার্থক ভাবে, যারা নারীদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চায়— সেই বিজেপি, আরএসএস-এর ধর্ষণের ঘটনার বিরোধিতা আসলে নিপীড়িতদের অভিজ্ঞতাকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টার বাইরে কিছুই নয়। ঠিক যেমনভাবে তারা কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর নিহতদের পরিবার-পরিজনের শোককে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ঠিক যেমনভাবে তারা মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিল। তাই ধর্ষণ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অভিযোগ থাকা কার্তিক মহারাজের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিজেপি কোনো আওয়াজ তোলে না। তাদের পুতুল হিসেবে নিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হেনস্থার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা মুখ খোলে না, বরং তাকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে মেয়েরা হিন্দুত্ববাদের প্রচারের ছকের বাইরে ধর্ষন-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বললে তারা মেয়েদের চুপ করাতে ঝাঁপিয়ে পরে তা রাস্তায় হোক বা সামাজিক মাধ্যমের দেওয়ালে।

এই বিজেপি-আরএসএস-এর কি যোগ্যতা ও নৈতিক অধিকার আছে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলার?

লক্ষণীয় যে, ধর্ষণ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি— যা সাউথ কলকাতা ল কলেজের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র সংসদের প্রভাবশালী নেতা মনোজিত মিশ্র দিয়েছিল— সেই একই কৌশল ব্যবহার করেছে ওড়িশার বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা ভবানী শঙ্কর দাস। ধর্ষকরা ক্ষমতা কায়েম করতে চায়। নিপীড়িতাদের চুপ করিয়ে রাখতে চায়। পিতৃতন্ত্রের দালালদের অপরাধ করার ভঙ্গি আর দায় এড়ানোর পদ্ধতি এক।

মনে রাখা দরকার, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা-বিরোধী ইন্টারনাল কমপ্লেইনস কমিটির ক্ষমতা কাটছাঁট করে কর্তৃপক্ষ দ্বারা মনোনীত, অকেজো কমিটি খাড়া করার প্রচলন শুরু হয়েছে। নতুন লেবার কোড অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা-বিরোধী কমিটি গঠন প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর জন্য আর বাধ্যতামূলক নয়। আগে যেখানে কমিটি না থাকলে কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকত, সেখানে মোদী জমানার লেবার কোডে এই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে।

মোদী সরকার যৌন হেনস্থা এবং ধর্ষণ-বিরোধী আইনগুলিকে যেভাবে দুর্বল করে তুলছে, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে তৃণমূল সরকার। যেমন, কলেজ থেকে সংগঠিত কর্মক্ষেত্রে ‘অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি’-তে মনোনয়নের মাধ্যমে নিজেদের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে বসানো হয়েছে। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ— আরজিকর হাসপাতালের আইসিসি-র সদস্য ছিলেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, যিনি অভয়ার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নির্ধারিত ১৭টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মধ্যে ১১টি এখনও তৈরি হয়নি। নির্ভয়া ফান্ডের অর্থে যে ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ হওয়ার কথা ছিল, তা পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ওঠেনি।

অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে, যেখানে অধিকাংশ শ্রমজীবী মেয়েরা কাজ করেন, সেখানে লোকাল কমপ্লেইন্টস কমিটির সংখ্যা প্রায় শূন্য।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিসরে যৌন নিপীড়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে কাঠামোগত, ধারাবাহিক ও সদর্থক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তার বদলে, ‘অপরাজিতা বিল’-এর নামে ধর্ষণের চটজলদি সমাধান হিসেবে তৃণমূল ‘ফাঁসির দাওয়াই’ দিয়ে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে চাইছে।

তারা প্রকাশ্যে বিজেপির বিরোধিতা করে ভোটে জিতলেও, ভেতরে ভেতরে বিজেপির মনুবাদী, পিতৃতান্ত্রিক ভাবধারাকেই টিকিয়ে রাখার কাজ করছে। যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের মূল কারণ— ক্ষমতার শোষণ, তারই শেকড়ে জল দিচ্ছে এই সরকার। তাই, পুলিশের উপস্থিতিতে নারী ও ক্যুয়ারদের উপর বিজেপি আজ আক্রমণ চালালেও, পুলিশ কোনো হস্তক্ষেপ করে না। আর তাই আজও কার্তিক মহারাজ গ্রেপ্তার হয়নি।

নিপীড়িতদের ক্ষত ও ট্রমা প্রচারের পণ্য নয়, ভোট জেতার যন্ত্র নয়। তা জীবন্ত, রাজনৈতিক, আর স্বতন্ত্র—যা প্রত্যেক নিপীড়িত মানুষ তার শরীরে বহন করে, তার জীবনের ভিতরে ধারণ করে। এই অভিজ্ঞতা কারও দয়া, নীতিপুলিশি বা করুণা চায় না—চায় প্রতিরোধ, ন্যায়বিচার আর দায়বদ্ধতা। তাই মনোজিত মিশ্রের পাশাপাশি কার্তিক মহারাজের শাস্তি চাই। আমরা আওয়াজ তুলব সেই সব ধর্ষক এবং ধর্ষকদের রক্ষা করা দলগুলোর বিরুদ্ধে, যারা এখনো নারীদের, ক্যুয়ার, ট্রান্স মানুষদের দুর্বল ভাবে; যারা ভাবে আমাদের অভিজ্ঞতা আর আওয়াজকে দমিয়ে রাখা সহজ।

তারা ভুলে গেছে যে ভোটের অধিকার, উপার্জনের অধিকার, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার—সব কিছু আমরা ছিনিয়ে এনেছি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। তাই আমরা বুঝি, কে সত্যিই ধর্ষণ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছে আর কে আমাদের অভিজ্ঞতাকে ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। অভয়ার মৃত্যুর পর আমরা ভেবেছিলাম, আর যেন কোনো অভয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুর শিকার না হয়। সাউথ কলকাতা ল কলেজের নির্যাতিতা আমাদের মনে করালেন যে বাঁচার মতো বাঁচতে, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রগতিশীল সমাজ গড়তে, লিঙ্গ-ন্যায়ের জন্য অনেকটা পথ চলা বাকী। এই পথেই আমরা চিনে নেব মনুবাদ ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাথীদের।

0 Comments

Post Comment