পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস ও দোসর-পুঁজি

  • 20 March, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 2181 view(s)
  • লিখেছেন : শুভাশীষ মুখার্জী
পুঁজিপতিরা প্রাণীজগতের সাধারণ সম্পত্তি, জল-জঙ্গল-জমি-বাতাসকে নিজেদের মালিকানার আওতায় এনে, সেগুলিকে ফোকটে-পাওয়া-পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফা করতে চাইছে। এই কাজে সে দেশে দেশে পুঁজি-বান্ধব সরকার গঠনে পুরোদমে নেমে পড়েছে। রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে পুঁজির দোসর, চলছে দোসর-পুঁজি আর রাষ্ট্রের যুগলবন্দী!

পর্ব-এক

আজকে আমাদের সমাজ-জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র এমন হুমকির সামনে পড়েছে যে মানুষের দৈনন্দিন যাপনের বাইরে বিশেষ কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ মিলছে না। এই নুন-আনতে-পান্তা-ফুরোয় অবস্থায় পরিবেশ-প্রতিবেশের মতো এক “বিমূর্ত” বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আপাতদৃষ্টিতে তেমন প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে না হওয়াই স্বাভাবিক!

যাঁরা সমাজ বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে কিঞ্চিৎ নাড়া-ঘাঁটা করেছেন, তাঁরা দেখিয়েছেন যে সমাজে উৎপাদন সম্পর্ক ও উৎপাদনের উপাদানের নিয়ন্ত্রনকে ঘিরেই সমাজের এক স্তর থেকে অন্য স্তরে পৌঁছনোর বিষয়টি নির্ভরশীল। আর এই কাজে পুঁজি এবং তার বিবর্ধনের ভূমিকা ফেলনা নয়, যেমন ফেলনা নয় মুনাফার ভূমিকাও

আজকের সমাজে এই পুঁজি ও তার থেকে মুনাফার বিষয়টি অনেকটাই বে-আব্রু হয়ে পড়েছে। দেশের সরকার আর দেশের পুঁজিপতিরা আজ খোলাখুলি হাত ধরাধরি করে চলছে; দস্যু এবং লুটেরা পুঁজিপতিরা এখন সরাসরি রাজনীতিতে আসছেন, দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে রাজ্যসভার সদস্য হচ্ছেন নানান রাজনৈতিক দলের আনুকুল্যে ( বিজয় মালিয়ার কথা ভাবুন)।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজির লগ্নির ক্ষেত্র হয়ে পড়ছে সংকুচিত, ফলে মুনাফার হার কমছে; মুনাফার হার ধরে রাখার জন্য আজ পুঁজির দরকার মুনাফার নতুন ক্ষেত্র বাড়ানোর। পৃথিবীর পরিবেশ-প্রতিবেশ সমাজের কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দখলে নেই, অতএব আজকের যুগের পুঁজিপতিরা প্রাণীজগতের এই সাধারণ সম্পত্তি, জল-জঙ্গল-জমি-বাতাসকে নিজেদের মালিকানার আওতায় এনে, সেগুলিকে ফোকটে-পাওয়া-পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফা করতে চাইছে। এই কাজে তার দরকার রাষ্ট্রের মদত, তাই সে দেশে দেশে ( আমাদের দেশও তার এক মস্ত উদাহরণ) পুঁজি-বান্ধব সরকার গঠনে পুরোদমে নেমে পড়েছে। রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে পুঁজির দোসর, চলছে দোসর-পুঁজি আর রাষ্ট্রের যুগলবন্দী! এখানেই যুক্ত হয়ে পড়েছে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও দোসর-পুঁজির বিষয়টিও। এই প্রেক্ষিতে দোসর-পুঁজি আর স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রের আওতায় পরিবেশ-প্রতিবেশের হাল নিয়ে আমাদের রাজ্য, আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বের অবস্থাটা একবার যাচাই করার চেষ্টা করবো

দোসর-পুঁজির কিস্যাঃ গৌতম আদানি-র “উন্নয়ন প্রকল্প”

ঝাড়খন্ড রাজ্যটি প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে খুব ধনী হওয়া সত্ত্বেও সেখানে আদিবাসীদের আর্থিক ও সামাজির হাল খুবই খারাপ। এই রাজ্যে সরকারের “কল্যাণমূলক” প্রকল্পগুলি যেমনভাবে রূপায়িত হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়া যদি আগামী পরিকল্পনা বর্ষগুলিতেও চালু থাকে, তবে সেই রাজ্যের গ্রামীন ও শহুরে দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও বেশ কয়েক দশক লেগে যাবে।

এই রাজ্যের রাজধানী, রাঁচি থেকে প্রায় ৩৮০ কিমি দূরত্বে মালি সহ আরও ৯টি গ্রামের আদিবাসীদের সাধারণ জমি এবং তপশিলি জাতিভূক্ত মানুষদের নিজস্ব মালিকানার চাষের জমির ওপর আদানি গোষ্ঠীর আওতায় থাকা ‘আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড’ নামক কোম্পানিটি ১০১৬ সালে বিজেপি-শাসিত ঝাড়খন্ডে ২০০০ একর জমি “চায়”; সেই জমিতে তারা কয়লা-ভিত্তিক একটি বৃহৎ তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়বে। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা অঞ্চলে আদানি গোষ্ঠীর যে ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২২ সালের মধ্যেই নির্মিত হবে, তার সুফল কিন্তু স্থানীয় মানুষ তো দূরস্ত, এদেশের মানুষই পাবে না, পাবে প্রতিবেশী দেশ, বাংলাদেশ। এখানে দোসর-পুঁজির ব্যাপারটি খুব স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।

আদানিত ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে তাঁর নির্বাচনী প্রচার চালানোর পর প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে যান, উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন, সঙ্গে যান শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবে শ্রী গৌতম আদানি। এই সফরের ঠিক আগে কেন্দ্রীয় সরকার আদানি গোষ্ঠীর ঝাড়খন্ডে প্রস্তাবিত তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাড়পত্র ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে মঞ্জুর করে। প্রধানমন্ত্রী ও গৌতম আদানি-র বাংলাদেশ সফরে সে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির যে বিষয়টি মুখ্য গুরুত্ব পায়, তা হলো ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি। আরও ঠিক হয় যে আদানি-র প্রস্তাবিত ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, তার পুরোটাই হাই-টেনশন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মারফৎ সরাসরি বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে!

২০১৩ সালে জমি অধিগ্রহণ আইনের পরিবর্তন কিন্তু ব্রিটিশ আমলের “এমিনেন্ট ডোমেন”-এর তত্ত্ব, যে তত্ত্ব মতে সমষ্ঠীর উপকারের জন্য ব্যক্তি স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্র ব্যক্তি-মালিকানার জমি জবরদখল করতে পারে, আইনের সেই জন-বিরোধী চরিত্রের কিন্তু কোনও পরিবর্তনই হয় নি। আর এই জবরদখলের শিকার আমাদের দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ আদিবাসীবৃন্দ, নানান “উন্নয়ন প্রকল্পে” তাঁদের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ ( যে পরিমানটি সরকার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে), তাঁরাই “উন্নয়ন”-এর দ্বারা বিরূপভাবে প্রভাবিত।

আদানি ২০১৬ সালের মাসের ৬ এবং অগস্ট ২ তে ঝাড়খন্ড সরকারকে চিঠি দিয়ে তার কোম্পানির জন্য গোড্ডা অঞ্চলে ২০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সেই জমি বিনা পয়সায় তার কোম্পানিকে হস্তান্তরের আবেদন জানায়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ঝাড়খন্ডের সরকার আদানির জন্য ৫১৯ একর আদিবাসীদের এবং তপশিলি সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহন করে আদানিকে হস্তান্তর করে। এরপর আদানি সংস্থা তার জমির প্রয়োজনের পরিমাণ, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বারে বারে বদল করতে থাকে। যেমন, কোম্পানি যখন পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল, তখন তারা বলেছিল যে তারা এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জল সংগ্রহ করবে গোড্ডা-র সন্নিকটের চির নদী থেকে। তারা আচমকাই বলে বসে যে তাদের অতিরিক্ত জল লাগবে এবং সেই জল তারা জোগাড় করবে সংলগ্ন জেলা সাহেবগঞ্জের গঙ্গা থেকে; এই কারণে তাদের আরও অতিরিক্ত ৪৬০ একর জমি লাগবে, যে জমির ওপর তাদের অধিকার দিতে হবে, কেননা সেই জমির ওপর দিয়ে ৯২ কিমি লম্বা পাইপ লাইন মারফৎ গঙ্গার জল তাদের প্রকল্পস্থানে নিয়ে যেতে হবে। কয়লা আনার জন্য তাদের রেল লাইন পাতার জন্য আরও ৭৫ একর জমি লাগবে, এই কাজটি আদানির হয়ে ভারতীয় রেলকেই করে দিতে হবে। মনে রাখা দরকার, এই কেন্দ্রের জন্য কয়লার পুরোটাই আসবে মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীবৃন্দ আদানির জমি-ডাকাতি এবং দস্যুবৃত্তির জন্যে তাদের কোম্পানিকে পিটিয়ে প্রায় দেশ্ছাড়া করে দিয়েছে

২০১৭-এর মার্চ-এ ঝাড়খন্ড সরকার নোটিশ দিয়ে বলে যে আদানি-র এই প্রকল্প “জনস্বার্থ”-এ হচ্ছে, অতএব জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হবে। দেশের আইন অনুসারে রপ্তানির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে, যে রাজ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে, সেই রাজ্যকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ঝাড়খন্ড সরকার ও আদানি-র কোম্পানির মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যেখানে ঝাড়খন্ড সরকার মেনে নেয় যে আদানি-র কোম্পানি “অন্য সূত্র” থেকে ঝাড়খড রাজ্যকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে। আদানি-র কাছ থেকে এই বিদ্যুৎ ঝাড়খন্ড সরকারকে বাজারের দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হবে; এই মর্মে রাজ্য সরকার তার আইন পরিবর্তিত করে নিয়েছে। এর ফলে আদানি-র কোম্পানির বছরে অতিরিক্ত ৭৪১০ কোটি টাকার বাড়তি মুনাফা হবে

ঝাড়খন্ড সরকার এই প্রকল্পের আওতায় থাকা গ্রামগুলিতে সন্ধ্যা বেলায় ২-৩ ঘন্টা করে বিজলি সরবরাহ করতো। কিন্তু এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাজ শুরু হওয়ার পর সেই বিজলি এখন আদানি-র নির্মাণক্ষেত্র আলোকিত করার কাজে লাগছে, গ্রামবাসীরা বিপুল দামে কেরোসিন কিনে কুপি জ্বালিয়ে সন্ধ্যাবেলা কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় গ্রামগুলিতে “অন-লাইন ক্লাস” চলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ প্রকল্পের সুবিধা অন-লাইন-এ নেওয়ার জন্য সরকারি প্রচার গাড়ি আবেদন জানাচ্ছে। শুধু যে গ্রামের এই অবস্থা তাই নয়, গোড্ডা অঞ্চলের জেলা সদরে বিজলি থাকছে না দিনে ১৫ থেকে ১৭ ঘন্টা, কেননা বিজলির চাহিদা এই নির্মাণ কাজের জন্য বেড়ে গেছে

এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে “জনশুনানী”-র নামে যে মাৎস্যন্যায় ঘটেছে, তা এমনকি স্থানীয় বিজেপি দলের লোকজনদেরও অস্বস্তিতে ফেলেছে। আদানি-র ভাড়া করা বাস বাইরে থেকে দালালের মাধ্যমে লোক এনেছে, এই নিয়ে কথা ওঠার পর পুলিশ আচমকা কাঁদুনে গ্যাস ফাটিয়ে সবাইকে হটিয়ে দেয় এবং ঘোষণা করে যে গণশুনানি শেষ, গ্রামবাসীরা “স্বেচ্ছা”-য় এই প্রকল্পে সায় দিয়েছে। এই মিটিং-এর যে নোটিশ বের হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল যে গ্রামবাসীরা যেন এই মিটিং-এ উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পে তারা সায় দিচ্ছে, এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও স্থানীয় গ্রামসভা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এই প্রকল্পের বিরোধী, কেননা এখানে আদিবাসীরা তাদের বাসস্থান ও জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।

এই “গণশুনানী”-র পর গোড্ডা জেলার কালেক্টার ঘোষণা করেন যে এই প্রকল্পে একজনও উচ্ছেদ হচ্ছেন না

২০২০-র কোভিডকালে এসে দেখা যায় যে আদানি গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, তারা ঐ জমি এবং জলের অধিকার অন্যভাবে ব্যবহার করতে চায়, যাকে এমনকি ঝাড়খন্ড সরকারের পক্ষেও “জনস্বার্থ” বলে ঘোষণা করা মুশকিল।

ভারতের শক্তি উৎপাদনের নীতিমালা নির্ধারণ করা এখন আর ভারত সরকারের হাতে নেই। দোসর-পুঁজি এখন তার বিদেশী দোসর খুঁজে নেওয়ায় সেই বিদেশী দোসরদেরও এখন তুষ্ট করার পালা। বাংলাদেশ তার নতুন দোসর খুঁজতে গিয়ে তার শক্তি নীতি বদল করেছে, আদানি-র কাছ থেকে মহার্ঘ তাপ-বিদ্যুৎ না কিনে সে অচিরাচরিত শক্তি উৎসের দিকে ঝুঁকেছে, ফলে বাংলাদেশে আদানি-র বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রকল্পটি প্রশ্নচিহ্নের মুখে। অস্ট্রেলিয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে আদানি কোম্পানির কয়ালার জোগানের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, ফলে এই প্রকল্পের দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে। শক্তি সম্পর্কে সারা বিশ্বের মেজাজ বদলের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আদানিকে এখন সৌর বিদ্যুৎ মডিউল বানানোর ব্যবসায় নামতে হচ্ছে, যার কোনও অভিজ্ঞতা এই সংস্থাটির নেই। তাই অন্যভাবে সংস্থাটি তার হাতে এসে যাওয়া পড়ে-পাওয়া-চোদ্দআনা জল-জঙ্গল-জমিকে অন্যভাবে ব্যবহারের জন্য হামলে পড়েছে

অস্ট্রেলিয়ার কয়লার সমস্যার কথা বলে আদানি গোষ্ঠী মোদী সরকারের কাছ থেকে অন্যায্য উপায়ে নতুন “কোল ব্লক” গুলির বেশ কয়েকটা এখনই হাতিয়ে নিয়েছে, যদিও এতদিনে বোঝা গেছে যে এই প্রকল্প ২০২২ তো দূরস্ত, আদৌ কোনও দিন দিনের আলোর মুখ দেখবে কিনা সন্দেহ। মোদি সরকার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে চাপ দিয়ে আদানি গোষ্ঠীকে বিপুল পরিমাণ ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সেই ঋণ এখন ক্রমাগত খেলাপি হয়ে চলেছে, অচিরেই হয়তো সেই ঋণ মুকুব করা হবে। যে চৈনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে আদানি গোষ্ঠী এই কেন্দ্রের পরিকল্পনা করেছিল, সেই প্রযুক্তি দূষণের দায়ে এখন সারা পৃথিবীতে প্রত্যাখ্যাত। এদিকে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যাল নামক দেশীয় সংস্থার যে প্রযুক্তি ভারতের প্রযুক্তিবিদরা উদ্ভাবন করেছিলেন, “আত্মনির্ভর ভারত” সেই প্রযুক্তিকে চেপে রাখতে উৎসাহী, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটির গবেষণা বিভাগ গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা।

দোসর-পঁজি আর অধঃপতিত রাজনীতির যুগিলবন্দী জমে এ দেশে যে বেশ জমে উঠেছে, সরকারের আদানি-র মতো “শিল্পপতি”-দের দোস্ত হয়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে তা আর একবার প্রকট হয়ে উঠলো

0 Comments

Post Comment