পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মনকে নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা—নিউরালিঙ্ক ব্রেন চিপ

  • 19 April, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 498 view(s)
  • লিখেছেন : গৌতম চক্রবর্তী
চুপিসাড়ে সম্পূর্ণ এক নতুন উপনিবেশবাদ আসতে চলেছে। আসবে তা অবশ্যই। আর সেই সুযোগে দখল নেওয়া হবে মস্তিষ্কের। মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের অন্তিম সীমানায় পৌঁছে যাবে এই প্রকল্প। সিলিকন ভ্যালির এই প্রকল্পের মূল কাজ হবে মানুষের মনে উপনিবেশ গেড়ে ভাবনার নিয়ন্ত্রণকে মুঠোয় নেওয়া।

উপনিবেশবাদ আজ আর আমাদের কাছে কোনও অপরিচিত শব্দ নয়। এক সময় দূরের কোনও দেশকে দখল করে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করা হত। মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার। আজও তা করা হয়। সেখানে মূল ভূমিকা থাকে বিশ্বব্যাঙ্ক বা আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের মত মহান সংস্থার।

চুপিসাড়ে সম্পূর্ণ এক নতুন উপনিবেশবাদ আসতে চলেছে। আসবে তা অবশ্যই। আর সেই সুযোগে দখল নেওয়া হবে মস্তিষ্কের। মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের অন্তিম সীমানায় পৌঁছে যাবে এই প্রকল্প। সিলিকন ভ্যালির এই প্রকল্পের মূল কাজ হবে মানুষের মনে উপনিবেশ গেড়ে ভাবনার নিয়ন্ত্রণকে মুঠোয় নেওয়া।

হ্যাঁ, বিখ্যাত প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী এলন মাস্ক এরকম একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা করেছেন যে তাঁর কোম্পানি নিউরোলিঙ্ক সফলভাবে মানুষের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিন চিপ বসাতে সফল হয়েছে। নতুন এই উপনিবেশে অনধিকার প্রবেশের জন্য যে প্রযুক্তি তার একটা বেশ গালভরা নাম দিয়েছেন তিনি—ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস।

তিনি অবশ্য এই প্রকল্পের এক সুন্দর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে মস্তিষ্কে এই চিপ বসালে রোগীদের জটিল স্নায়ুরোগ নিয়ন্ত্রণ করতে ডাক্তারদের খুব সুবিধা হবে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকটি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু পরিষেবা ও প্রযুক্তির আড়ালে যা আছে তা হল মানুষের জীবন নিয়ে অনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

জনগণের জন্য নিউরালিঙ্কের যে প্রথম পণ্য বাজারে আসতে চলেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে 'টেলিপ্যাথি'। এই চিপ একবার মাথায় বসালে শুরু হয়ে যাবে মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহাবস্থান। ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের সাহায্যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করে প্রয়োজন অনুসারে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে। স্নায়ুরোগে আক্রান্ত কোনও মানুষ শুধুমাত্র মনে মনে ভাবলেই কম্পিউটার, রোবট হাত, হুইলচেয়ার বা অন্য কোন যন্ত্র চালনা করতে পারবেন।

কিন্তু এই ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের খারাপ দিকও অনেক। মাথায় এই সিলিকন চিপ বসালে প্রযুক্তির প্রয়োগে  অসাধু যত কোম্পানি ব্যক্তিগত ভাবনার হদিস পেয়ে যাবে। শুধু তাই নয় বাইরে থেকে বেতার প্রযুক্তিতে এই চিপের দখল নিয়ে ব্যক্তিগত চিন্তা বা কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে সহজ হবে জনগণের চিন্তাভাবনা কড়া নজরে রেখে ইচ্ছেমত শাসন করা।

তাই মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণের এই দৌড়ে কে আর পিছিয়ে থাকতে চায়? তাই আসরে নেমে পড়েছে আরও অনেক ধনকুবের। বিল গেটস এবং জেফ বেজোস দু'জনে মিলে ৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করেছেন সিনক্রন নামে এক বায়োটেক কোম্পানিতে। আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার এই যৌথ উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিন চিপ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

অনেক দিন ধরে স্নায়ু-বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল যে উন্নততর উপায়ে ভাবনা পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা আলাদা নিউরোনের থেকে তথ্য আহরণ করা দরকার। নিউরালিঙ্ক চিপ ৬৪টি নমনীয় পলিমার তন্তুর মাধ্যমে আলাদা আলাদা নিউরোনের থেকে ১০২৪টি স্থানে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। রোবটের মাধ্যমে মস্তিষ্কের উপযুক্ত স্থানে এই তন্তুগুলি বসানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ায় মোটর-নিউরোন রোগে আক্রান্ত এক রোগীর মাথায় সিনক্রন চিপ বসিয়ে দেখা যায় যে তিনি হাত ব্যবহার না করে টুইট করতে পেরেছেন। শরীরে বসানো একটি বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি শুধু মাত্র চোখের ইশারায় কার্সর সরিয়ে টুইট লিখে পোস্ট করতে পারছেন।সুইজারল্যান্ডের লসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল দুর্ঘটনায় পঙ্গু এক সাইকেল চালকের শরীরের গভীরে স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি তারবিহীন যন্ত্র বসিয়ে তাঁর চলৎশক্তি ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন।

প্রথম প্রথম এই কথা ভেবে বেশ লাগছে যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই সব কর্মকান্ড এক নতুন সাফল্যের দরজা খুলে দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে স্নায়বিক কোন জটিলতা আর হয়তো সমস্যা বলে মনে হবে না। কিন্তু স্নায়ুরোগীদের কাছে বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা খুলে গেলেও ভবিষ্যতে যে তার উল্টোটা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?এখন তো সবে মধুচন্দ্রিমা পর্ব চলছে।

হ্যাকিং করে মস্তিষ্কের দখল নেওয়া প্রসঙ্গে মূলধারার একটি ভাষ্য  প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এই ভাষ্য থেকে মনে হতে পারে যে নিউরালিঙ্ক চিপের এই সাফল্য নেহাতই এক স্বাভাবিক ঘটনা। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ইজরায়েলি লেখক যুভল নোয়া হারারি-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তিনি হবেন এই ফোরামের কর্মসুচি বিষয়ে লেখক তথা প্রচারক। দেশে দেশে ঘুরে তিনি মানুষকে এই কথা বোঝাবেন যে শরীরে ও মনে এই বৈদ্যুতিন চিপ বসানোর বিষয়টি এক স্বাভাবিক ঘটনা।

নিউরালিঙ্কের ওয়েবসাইটে(https://neuralink.com)গেলে দেখা যাবে লেখা আছে, ‘‘Our Mission: Create a generalized brain interface to restore autonomy to those with unmet medical needs today and unlock human potential tomorrow’’। আর সিনক্রনের ওয়েবসাইটে(https:// synchron.com) লেখা আছে–“Synchron | The Brain Unlocked”।দু’টো কোম্পানিই আনলক করার কথা বলছে। কিন্তু কী, কেন, কাদের স্বার্থে?

নিউরালিঙ্কের এই ব্রেন-চিপ বাইরে থেকে মনের তালা খুলে ফেলে দখল নেবে মনের। সেটাই হবে এই সভ্যতার নতুন উপনিবেশ। আর শুরু হয়ে যাবে মগজ ধোলাই। মানবমনকে ইচ্ছেমত বিপথে চালিত করে তা হবে অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার। মানবসভ্যতার এই সঙ্কটময় মুহূর্তে কীভাবে আমরা রুখে দাঁড়াব সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
Life is a brainwashing assembly line
where we all are overruled by someone
who tells us what to think
and how to act.
And when the hammer is the tool
In the hand of the State
everybody is treated as a nail so that
no aberrant screws may prevail.

0 Comments

Post Comment