পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক সচ্চিদানন্দ ঘাটে

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 202 view(s)
  • লিখেছেন : সৌভিক ঘোষাল
সচ্চিদানন্দ ঘাটের সংগঠক পরিচয়ের মধ্যে থেকেই সময়ে সময়ে বেরিয়ে এসেছে তাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর অনন্যতা। ১৯২৫ এ পার্টি গঠনের পর্বে কানপুর সম্মেলনে ওঠা বিতর্কে কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিকতার পক্ষে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিতান্ত তরুণ বয়সে। সে সময়ে ঘাটে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আরো দুই নেতৃত্বের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি দলিল পেশ করেন। আজ কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছরে, প্রথম সাধারণ সম্পাদকের জীবন আলেখ্য।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এস ভি ঘাটে। ১৯২৫ সালের কানপুর সম্মেলন থেকে তিনি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর গ্রেপ্তারীর পর সম্পাদকের দায়িত্ব নেন গঙ্গাধর অধিকারী। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর ঘাটে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অন্যতম হিসেবে আবার কাজ শুরু করেন এবং আমৃত্যু কেন্দ্রীয় কমিটি তথা জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।

ম্যাঙ্গালোরে ১৮৯৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর এস ভি ঘাটে তথা সচ্চিদানন্দ বিষ্ণু ঘাটের জন্ম হয়। তখন ব্যাঙ্গালোর ছিল ব্রিটিশ শাসিত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত। ম্যাঙ্গালোরের সেন্ট অ্যালোয়সিয়াস কলেজ থেকে তিনি পড়াশুনো করেন। কলেজে থাকাকালীন সময়ে ভারতীয় দর্শন ছিল তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়। এইসময়ে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের ভাবনাচিন্তা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। রুশ বিপ্লবের পর ঘাটে সমাজতন্ত্রের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হন। এম এন রায় যে ভ্যানগার্ড পত্রিকা প্রকাশ করতেন তাঁর বেশ কয়েকটি কপি তিনি সংগ্রহ করতেন ও গোপনে নানাজনের কাছে পৌঁছে দিতেন। ১৯২৫ সালে কানপুরে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্নদের সম্মেলনে তিনি উপস্থিত হন। সম্মেলনের আহ্বায়ক সত্যভক্ত সেই সম্মেলন থেকে এমন একটি পার্টি গঠন করতে চেয়েছিলেন যার সঙ্গে কমিন্টার্ন বা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের কোনও যোগ থাকবে না। পার্টির নামও সত্যভক্ত ও তাঁর সহযোগীরা ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই মতটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতার পক্ষেই সম্মেলনে সওয়াল জোরালো হয় এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নামটি এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের আন্তর্জাতিকতার ধারণাটিই কানপুর সম্মেলন থেকে গৃহীত হয়। এর পক্ষে ঘাটে জোরদার সওয়াল করেছিলেন এবং কেন্দ্রিয় কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকেই সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়।

এস ভি ঘাটের মধ্যে আদর্শ কমিউনিস্টের নানাবিধ গুণের সমাবেশ দেখা যায়। তিনি একদিকে ছিলেন অসামান্য সংগঠক, অন্যদিকে ছিলেন সুনিপুণ প্রচারক। তাত্ত্বিক হিসেবেও প্রথমাধি নানা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

সংগঠক এস ভি ঘাটের নিপুণতার প্রথম পরিচয় মিলেছিল কানপুরে পার্টি গঠনের আগেই কমিউনিস্ট ইন্টার্ন্যাশানাল থেকে আসা এম এন রায়ের ভ্যানগার্ড পত্রিকার গোপন সংগ্রহ ও বন্টনের মধ্যে দিয়ে। এই কাজ ঘাটে এতই নিপুণভাবে করতে পারতেন যে ব্রিটিশ পুলিশ এর বিন্দুমাত্র আঁচ পায় নি। কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হবার পর ঘাটে বোম্বেতে থাকতেন এবং সেখানে শ্রমিক সংগঠনের কাজে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ১৯২৭ সালে প্রথম কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে ঘাটে এ আই টি ইউ সি-র কার্যনির্বাহী সভার পদাধিকারী হনএবং ধীরে ধীরে এই সংগঠনে কমিউনিস্ট প্রভাব, মতাদর্শ ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৮ সালে বোম্বের সুতাকলের শ্রমিকরা ছয় মাসের এক দীর্ঘ ধর্মঘটে যান। এই সময় ঘাটে শুধু শ্রমিকদের মধ্যে গিয়ে বক্তৃতা দিয়েই ফিরে আসতেন না। তাঁদের ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা, চাঁদা সংগ্রহ করা, হিসাবরাখার জরুরী কাজগুলি তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলাতেন। তিনি যখন মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ধরা পড়েন ও জেলে যান তখন দেখা যায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখ। খরচ খরচার পরেও তহবিলে জমানো ছিল এক লাখ টাকা। সুতাকল ইউনিয়ন ছাড়াও বোম্বে প্রেস ওয়ার্কাস ইউনিয়ন গঠনে ঘাটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

কংগ্রেসের ভেতরে যে সমাজবাদী মানসিকতার মানুষেরা ছিলেন তাঁদের নিয়ে ঘাটে ও এস এস মিরাজকর তৈরি করেন ওয়ার্কাস অ্যান্ড পিজেন্ট পার্টি। পরবর্তীকালে মীরাট মামলার পর জেল থেকে ফিরে কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টির নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সম্পাদক পি সি যোশীকে সঙ্গে নিয়ে ঘাটে বৈঠক করেন ও স্থির হয় এই দুই পার্টি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলবে।

১৯৩৬ সালে ঘাটে মাদ্রাজে যান এবং সেখানকার প্রবীণ নবীন বিভিন্ন কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্বকে এক জায়গায় আনেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন সিঙ্গরাভেলু চেট্টিয়ার, ভি সুব্বিয়া, পি জীবনানন্দন, কে মুরুগেশন আনন্দন, ভি শ্রীনিবাস রাও এবং পরবর্তীকালের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা পি সুন্দরাইয়া। মাদ্রাজে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সংগঠনে ঘাটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মাদ্রাজ টোডি তেপ্পারস ইউনিয়ন, মাদ্রাজ প্রেস লেবার ইউনিয়ন, মাদ্রাজ ট্রামওয়েজ অ্যান্ড ইলেকট্রিক সাপ্লাই ওয়ার্কার্স ইউনিয়ান, সাউথ ইন্ডিয়ান রেলওয়েমেন ওয়ার্কাস ইউনিয়ন ইত্যাদি ইউনিয়ন তৈরি করা বা সক্রিয় করার কাজে ঘাটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। ১৯৩৬ সালে ঘাটের নেতৃত্বকারী ভূমিকার সুবাদে মারাজ টোডি তেপ্পারস ইউনিয়নে এক মাস ধরে সফল ধর্মঘট আন্দোলন চলে। গোয়েঙ্কা প্রেসেও এই সময় ঘাটের নেতৃত্বে একমাসের সফল ধর্মঘট হয়। ১৯৩৭ সালে ঘাটে কেরালায় যান ও সেখানকার কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্নদের নিয়ে কেরালার প্রথম কমিউনিস্ট ইউনিট গঠন করেন। এর সদসদের মধ্যে ছিলেন পি কৃষ্ণা পিল্লাই, কে দামদরন, এন সি শেখর এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের পরবর্তীকালের প্রবাদপ্রতিম নেতা ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ।

এস ভি ঘাটে সংগঠক হিসেবে যেমন দক্ষ ছিলেন তেমনি নিপুণ ছিলেন পার্টি প্রচারযন্ত্রকে সাজানোর ক্ষেত্রে। ১৯৩৭ সালে যখন বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা ক্ষমতায় এল, তখন সি পি আই আধা গোপনে কাজের সুযোগ পেল।এই সুযোগকে ব্যবহার করে ঘাটে নিউ এক পত্রিকাকে সি পি আই এর প্রচারের কাজে ব্যবহার করলেন। এই ইংরাজী কাগজের পাশাপাশি জনশক্তি নামে একটি তামিল কাগজও এই সময়ে তাঁর উদ্যোগে প্রকাশিত হতে শুরু করে। মাদ্রাজ থেকে চিরায়ত মার্কসবাদী সাহিত্য প্রকাশ ও প্রচারের কাজেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।

১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসে ঘাটে গ্রেপ্তার হন। ভেলোর জেলে বন্দী থাকার সময় তিনি জেল কমিটি গঠন করেন। সেখানে ধ্রুপদী মার্কসবাদী সাহিত্য পাঠ সহ নানা ধরনের রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। এরপর ডিসেম্বর মাসে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেওলি ডিটেনশন ক্যাম্পে। এক বছর পরে ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে আবার ফেরানো হয় ভেলোর জেলে। পরের বছর পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজামুন্দ্রি জেলে। ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ও অনেককে মুক্তি দেওয়া হয়। ডাঙ্গে ও ঘাটেকে কিন্তু কারারুদ্ধ করেই রাখে সরকার। ১৯৪৩ সালে যখন সি পি আই এর প্রথম পার্টি কংগ্রেস হয় ঘাটে তখনো জেলে। সম্মেলনে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। অবশেষে ১৯৪৪ সালের এপ্রিল মাসে এস ভি ঘাটে জেল থেকে ছাড়া পান।

জেল থেকে ছাড়া পাবার পর ঘাটে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে সি পি আই এর সদর দপ্তরে কাজ শুরু করেন। তিনি ছিলেন পার্টির কোষাধ্যক্ষের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। খরচ খরচার বিষয়ে তিনি খুব মেপে হিসাব করে চলতেন বলে কেউ কেউ তাঁর ওপর রেগে যেতেন, তবে এর ফলে পার্টির আর্থিক হাল ফিরেছিল।

১৯৪৮ সালে দ্বিতিয় পার্টি কংগ্রেসের পর তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুনঃনির্বাচিত হন। কিছুদিন পর তিনি আবার গ্রেপ্তার হন, এবার ব্রিটিশ পুলিশের বদলে স্বাধীন ভারতের পুলিশের হাতে। জেল বন্দী অবস্থাতেই ঘাটে এবং অজয় ঘোষ সে সময়ে রণদিভে নেতৃত্বাধীন বাম সংকীর্ণতাবাদী লাইনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।

ঘাটের সংগঠক পরিচয়ের মধ্যে থেকেই সময়ে সময়ে বেরিয়ে এসেছে তাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর অনন্যতা। ১৯২৫ এ পার্টি গঠনের পর্বে কানপুর সম্মেলনে ওঠা বিতর্কে কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিকতার পক্ষে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিতান্ত তরুণ বয়সে। স্বাধীনতার পর ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে যখন মতাদর্শগত বিতর্ক প্রবল ও পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল, সে সময়ে ঘাটে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আরো দুই নেতৃত্বের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি দলিল পেশ করেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে স্বাধীনতার সময় থেকেই তীব্র বিতর্ক চলছিল নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে। তার মধ্যে যেমন ছিল স্বাধীনতা সম্পর্কিত মূল্যায়ন, তেমনি ছিল ভারতীয় বুর্জোয়ার চরিত্র, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে দেখার দৃষ্টিকোণগত মতপার্থক্য। সেইসঙ্গেই ছিল সমাজে ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রধান ও অপ্রধান দ্বন্দ্ব স্থির করা সংক্রান্ত ভিন্নতা। এইসমস্ত ভিন্নতা কমিউনিস্ট পার্টির চলার পথ সম্পর্কেই নানাজনের মনে নানা দ্বিধা ও আপত্তি তৈরি করে।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে পি সি যোশী লাইন, রণদিভে লাইন ও অন্ধ্র লাইন নিয়ে পারস্পরিক বিতর্ক ছিল তীব্র। যোশী লাইন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও তার নেহরুর নেতৃত্বাধীন তার বামপন্থী অংশের সঙ্গে কিছুটা তালমিল রেখে চলার পক্ষপাতী ছিল, কারণ এর মধ্যে দিয়ে সামন্ততন্ত্রের অবশেষের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। যোশী লাইনকে রণদিভে লাইন ও অন্ধ্র লাইন মানে নি। এই দুই ধারাই কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলার বিরুদ্ধে ছিল। তবে রণদিভে লাইন যেভাবে শহর কেন্দ্রিক ও শ্রমিক আন্দোলনভিত্তিক অভ্যুত্থানের কথা ভেবেছিল, তার বিপরীতে গিয়ে অন্ধ্র লাইন তেলেঙ্গানার অভিজ্ঞতার মধ্যে থেকে উঠে আসা সশস্ত্র কৃষক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এগনোর কথা ভেবেছিল। পার্টির সামনের সারির তিন নেতা – অজয় ঘোষ, ডাঙ্গে এবং এস ভি ঘাটে একত্রে একটি দলিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে, যথাক্রমে প্রকাশ প্রবোধ ও পুরুষোত্তম ছদ্মনামে। সেই ছদ্মনামের আদ্যক্ষর ধরে এই দলিলটি ‘থ্রি পি ডকুমেন্ট’ নামে পরবর্তীকালে পরিচিতি পায়। এই ডকুমেন্টটি রণদিভে লাইনকে রুশ নেতা ঝানভ অনুসারী তত্ত্বায়ন এবং তেলেঙ্গানা লাইনকে চিনের সিপিসি লাইনের অনুসরণ বলে মনে করে এবং বলে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে বিদেশী মডেলের বাইরে গিয়ে দেশের নিজস্ব বাস্তবাতা থেকে নিজ লাইন খুঁজে নিতে হবে। শ্রমিক আন্দোলন ও কৃষক আন্দোলনের কোনও একটির দিকে একমাত্রিকভাবে ঝুঁকে না গিয়ে উভয় ধারাকেই একইসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে থ্রি পি ডকুমেন্ট মত প্রকাশ করে। সেইসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হয় অবিবেচকের মতো অত্যাধিক জঙ্গী লাইন নিতে গিয়ে পার্টি তার সমর্থনভিত্তি হারাচ্ছে এবং আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি কমছে। এই ডকুমেন্টের মত ছিল বিরাট সংখ্যক শ্রমিক কৃষক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপণের উপযোগী পার্টি লাইন তৈরি করা ও সেই অনুযায়ী কর্মসূচী নেওয়া। বিকাশমান নাগরিক আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারার সঙ্গেও কমিউনিস্টদের সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে জোর দেওয়ার কথা বলে থ্রি পি ডকুমেন্ট। সংকীর্ণতাবাদী লাইন ছেড়ে বড় আকারের জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলার পক্ষে এই ডকুমেন্ট মত প্রকাশ করে। সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তী অবশেষের বিরুদ্ধে লড়াইতে এই ফ্রন্ট ভূমিকা নিতে পারবে বলেই ঘাটে ও তাঁর সহযোগী কমরেডরা মত প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্কের সময়েই হোক বা ১৯৬৮ সালে যখন চেকোস্লাভিয়ার দুবচেক পরিঘটনা আন্তর্জাতিক মহলকে আলোড়িত করে, তখনই হোক – এস ভি ঘাটে রাজনৈতিক বিতর্কে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি।

১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর দিল্লিতে ঘাটে প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পর কর্নাটকের সি পি আই রাজ্য অফিসটি তাঁর নামে ঘাটে ভবন হিসেবে নামাঙ্কিত হয়।

 

 

0 Comments

Post Comment