পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মস্তান

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 200 view(s)
  • লিখেছেন : সায়ন্তনী নাগ
সুপারি পেয়েছিলাম। পেমেন্ট হয়ে গেছিল। গলিটা আলো আঁধারি। মাঘরীবের নমাজ সেরে ফিরছিল মালটা। আমি তাক করে ছিলাম অনেকক্ষণ। ফেজটুপি খুলে ফতুয়ার পকেটে ভরে গলিতে খানিকটা এগোতেই বড় বড় পা ফেলে ওর পিছনে পৌঁছে যাই। শর্ট রেঞ্জের পিস্তলটা আজ অবধি কোনোদিনও ফেল করেনি। তিনবার চালিয়েছিলাম। একটা খেয়েই পড়ে গেছিল, কিন্তু শিওর হওয়া দরকার ছিল। তাই বাকি দুটোও পরপর। মালটা টু শব্দ করেনি, তবু পড়ে যাবার শব্দে আর গুলির আওয়াজে হৈহৈ করে দলবল দৌড়ে এল।

আমি ছুট লাগাই। এ গলি ও গলি পেরিয়ে মেনরোডে উঠলেই লালী, বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাওয়া হতে সময় লাগবে না। কিন্তু তার আগেই কেসটা চটকে গেল। উল্টো দিক থেকে উজবুকের মতো আসছিল একটা ফুড ডেলিভারির ছোঁড়া, আমার সাথে তার বাইকটার একটা ছোটোখাটো ধাক্কা লাগল। যা সরু গলি! পিস্তলটা দেখেই আঁতকে উঠল বাইকওয়ালা। কোনোরকমে কাত হয়ে যাওয়া গাড়ি সোজা করে ঊর্ধশ্বাসে পালালো। আমি পিস্তলটা কোমরে গুঁজে উঠতে যাব, টের পেলাম বেমক্কা একটা চোট লেগেছে। ছুটতে পারছি না। ওদিকে হৈ হৈ শব্দে ছুটে আসছে মানুষজন। নমাজে লোক নেহাত কম ছিল না। আমি ছুটবার চেষ্টা করি, পা ঘষটাতে ঘষটাতে কিছুটা এগোই, আর বুঝতে পারি, এখুনি বাঁক ঘুরলেই ওরা আমাকে দেখে ফেলবে। ধরে নেবে। আর তারপর শুরু হবে মার। আয়ুরেখায় আজই ফুলস্টপ। আচমকা পাশের বাড়িটার দরজা খুলে গেল, একটা পাকাচুল মাথা উঁকি দিয়ে বলল, ‘এই যে, এদিকে, চলে এসো শিগগির!’

খুব বেশি আর ভাবার সময় ছিল না। ঢুকে পড়তেই দরজা বন্ধ করে খিল তুলে দিল বুড়ো। আমি ততক্ষণে মেঝেয় বসে পড়েছি। লোকটা খানিক কান পেতে শোনার চেষ্টা করে। মারমুখী দলটা দরজা পেরিয়ে চলে যায়। তারপর বুড়ো আমার দিকে ফেরে।

‘দেখি পা-টা!’

আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বলি, ‘ঠিকাছে, ঠিকাছে!’

‘উঁহু, ঠিক থাকতেই পারে না। ওইযে, কালচে ছোপ। হুঁ, ঠিক ধরেছি, রক্ত বেরিয়েছে! দেখি দেখি, বস্তাটা সরাও!’

বস্তা!

‘আরে, এই যে, বস্তার কাপড়ের পেনটুলুনটা গোটাও।‘

আমি জিনসটা খানিক ওপরে তুলি টেনেটুনে। বুড়ো আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। গোড়ালিটা চেপে ধরতেই আমার গলা দিয়ে একটা ব্যথার শব্দ বেরিয়ে আসে।

‘হুম, শুধু কাটেনি, হাড়েও লেগেছে!’

‘সেরে যাবে।‘

‘তা তো যাবে জানি। এ তো আর বন্দুকের গুলি নয়। আর চোটটাও পায়ে, বুকে নয়। ফলে সারবে তো বটেই, তবে ভোগাবে।‘

মুহূর্তে সতর্ক হয়ে যাই। মালটা জানল কী করে! ছাদ থেকে দেখা গেছে নাকি! পিস্তলের বাঁটে হাত দিই। সাথে সাথে টের পাই ওটা নেই। অথচ একটু আগে আমি গুঁজেছি কোমরে! গেল কোথায়!’

‘উঠে দাঁড়াও তো বাছাধন! তারপর আস্তে আস্তে ভেতরের ঘরে এসো। দেখি, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করি। দেওয়াল ধরে ধরে এসো। তোমাকে তুলে নিয়ে যাবার মতো গায়ের জোর নেই আমার। নিজেকেই আসতে হবে।‘

‘আমার ওষুধ লাগবে না!’

ফ্যাকফ্যাক করে হেসে ওঠে বুড়ো। দেখি, মালটার ওপর-নিচ মিলিয়ে কটা মাত্র দাঁত অবশিষ্ট আছে। সত্যিই বুড়ো থুরথুরে। একটু সাহস ফিরে পাই। যা চেহারা, তাতে আমি ওকে টিপেই মেরে ফেলতে পারি। ওর কাছে অস্ত্রশস্ত্র থাকলে অবশ্য আলাদা কথা।

ভিতরের ঘরে মাটিতে একটা ফরাশ পাতা। এক ধারে ধূলিধূসর একটা তানপুরা, অন্যদিকে বাঁয়া তবলা। ‘বোসো!’

আলাদা করে বসার কোনো জায়গা নেই, মাটিতে ঝপাস করে বসতে গিয়ে ব্যথায় ককিয়ে উঠি-‘মা!’

‘কড়ি না কোমল?’

‘অ্যাঁ!’

‘বলছি, কোন মা লাগালে?’

কিছুই বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকি। বুড়ো আবার ফ্যাকফ্যাক করে হাসে। তারপর কাঠের দেওয়াল আলমারির পাল্লা খোলে। ভেতরেই মনে হয় বন্দুক আছে। কিছু করার নেই। শরীরে আর এক ফোঁটা জোর নেই যে উঠে পালাবো। পা-টা সত্যি বাজে রকম জখম হয়ে গেছে। বড় একটা বাক্স বার করে লোকটা। তার মধ্যে একই মাপের কাচের শিশি অনেকগুলো পরপর সাজিয়ে রাখা। বুড়ো খুটখাট করে শিশিগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে। হোমিওপ্যাথি নাকি?

‘রোগটা কী?’

‘রোগ?’

‘হ্যাঁ, রোগ!’

‘রোগ নয় তো, চোট!’

‘সে তো দেখতেই পাচ্ছি। আদতে রোগটা কী?’

‘আপনি কী বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না।‘

‘এই যে একটা লোককে ঠাণ্ডা মাথায় মেরে ফেললে, একটু হাত কাঁপল না, একবারও ইতস্তত করলে না, সেই রোগটার ব্যাপারে কথা বলছি।‘

আমি শুকনো ঠোঁট চাটার চেষ্টা করি, কোনো লাভ হয় না। মনে হয়, জিভটাও পুরো শুকনো। কীভাবে দেখতে পেল লোকটা? আমি তো প্রায় আধা কিলোমিটার দৌড়ে চলে এসেছি!’

‘রোগ ছাড়া আর কী? হাজীর দোকানের নীচে কালো ছাগলগুলো বাঁধা থাকে, ওদের চোখে চোখ পড়লে আমি মাংস খেতে পারি না। বাজারে লক্ষ্মীকান্ত মুরগী কাটে, ঐ কঁককঁক আর ডানা ঝাপটানি দেখলে আমার বুক ধড়ফড় করে। আমি কান চেপে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখি। এমনকি, মশা বসলে আমি চাপড় না মেরে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিই। আর তুমি একটা গোটা মানুষকে মেরে ফেললে? একটু ভয় করল না? এতো সাংঘাতিক ব্যাপার হে!’

কী বলব ভেবে পাই না। এত কেস হ্যান্ডেল করেছি, কোনোদিন এমন বেকুব বনিনি। তবে এখন অবধি বাড়িটায় আর কারো সাড়া পাইনি, এটাই আশার কথ। বুড়ো এতক্ষণে দুটো বোতল থেকে অল্প অল্প কী জানি ঢেলে নিয়েছে একটা গ্লাসে। তারপর নাড়িয়ে চাড়িয়ে মিশিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিল। ‘নাও, এটা ঢক করে গিলে ফেলো তো বাপু!’ আপত্তি করার পরিস্থিতি নেই, বিষ দিলেও খেতে হবে। গণধোলাইতে মরার চাইতে বিষ খেয়ে মরায় যন্ত্রণা নিশ্চয় খানিকটা কম! হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিয়ে গলায় ঢালি বস্তুটা। ঝাঁজ ঝাঁজ মিষ্টি মিষ্টি। হোমিওপ্যাথি নয়। বিলিতি মদ বলে চালিয়ে দেওয়া যায় দিব্যি। গলার ভিতর দিয়ে নামতে নামতেই মনে হলো, আমার ব্যাথা খানিকটা কমে গেল। বুড়ো কি তবে ডাক্তার?

‘তোমায় খুব কড়া ডোজ দিলাম হে! আরো বার তিনেক দেব। তবেই রোগ গায়েব হয়ে যাবে।‘

‘এটা কী ওষুধ? হোমিওপ্যাথি?’

আবার ফ্যাকফ্যাক করে হেসে ওঠে বুড়ো। ‘নাহে, তোমার যা অসুখ, তা সারানো ওসব অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথির কম্মো নয়।‘

‘তবে এটা কী?’

‘ফর্মুলা বললে বুঝবে? বলি, চর্চা করেছ কোনোদিন? এটায় তিন দাগ শুদ্ধ নটের সাথে দু দাগ কাফি আছে। একেবারে শিকড় থেকে উপড়ে আনবে’।

‘কী উপড়ে আনবে?’

‘মানুষ মারার ইচ্ছেটা!’

সন্ধেটা আস্তে আস্তে রাত হয়ে যাচ্ছে। আমি ফরাশের ওপর কাত হয়ে শুই। একটা ঝিম ধরানো ভাব পায়ের দিক থেকে ওপরে উঠছে আস্তে আস্তে। নেশার জিনিস কিছু মেশানো ছিল, স্পষ্ট বুঝতে পারছি। বুড়ো এক অতীব ঝানু মাল।

‘বাড়িতে কে কে আছেন?’

বাড়ি? খালধারের দশ নম্বর বস্তীর ঘরটার কথা বলব? মাঝখানে পর্দা টাঙিয়ে যেটার একদিকে মা আর বোন, অন্যদিকে আমি? বাড়ি যেতাম তো শুধু ঘুমোতে। তাও শেষ কবে গেছি, মনে পড়ে না। গেলেই মায়ের নাকে কান্না আর বোনের খিটখিট। ভালো লাগে না। বরং বীজেশদার সদ্য বানানো জিপ্লাস ফোরের ছাদে কেয়ার টেকারের ঘরটায় অনেক শান্তি। চারপাশের কাচের বোতল, মাংসের হাড়, এঁটোকাঁটা ছড়িয়ে রেখেও দিব্যি ঘুমোনো যায়। আজকাল বাড়ি মানে ওটাই। ওটার কথা বলি? পুলিশের বাপের সাধ্য নেই ঢোকে। বীজেশদার সাথে এমএলএর এক গেলাশের বন্ধুত্ব। আজকের খুনটাও ধামা চাপা পড়ে যেত যদি না শালা বাইকটা –

‘বাড়ির লোক জানে তোমার অসুখের কথা?’

‘ধুর শালা! কী তখন থেকে অসুখ অসুখ করছেন? অসুখ নয়, ওটা আমার কাজ। টাকা নিই, লাশ ফেলি। আপনি যেমন টাকা নিয়ে রোগী দেখেন। বীজেশদা যেমন টাকা ফেলে বৌবাজারের ওধারে কোথা থেকে একটা মেয়েছেলে তোলে। পুলিশ যেমন টাকা নিয়ে বালির গাড়ি পাশ করায়। এমএলএ যেমন টাকা নিয়ে আমায় আড়াল করে। সব হল গিয়ে প্রফেশন। কোনো কাজকে ছোট করতে নেই, গান্ধিজী বলেছেন।‘

বুড়ো তাড়াতাড়ি কান চাপা দেয়, ‘থাক থাক। ও নাম আর মুখে আনতে হবে না। রোগটা বড়ই জটিল। অনুশোচনাহীনতা। তার মানে চার ফোঁটা মল্লারের সাথে একটু আলাহিয়া বিলাওল-ও মেশাতে হবে। রক্তাল্পতার মতোই লম্বা ট্রীটমেন্ট দরকার, বুঝলে!

আবার শিশি বোতলের ঠুংঠাং শুনি। চোখে এখন আর খুব স্পষ্ট করে কিছুই দেখছি না। দারুণ ঘুম পাচ্ছে। বুড়োর স্টকে খুব কড়া মাল আছে বলতে হবে!

‘বন্ধুবান্ধব? আছে তো, নাকি?’

প্রশ্নটা শুনেই খানিক ঝাঁকুনি লাগল। লালীর কী হল? সে মালটাও ধরা পড়ে গেল নাকি? মেন রোডে দাঁড়িয়েছিল, যা চেহারা শালার, হৈহৈ করে ছুটতে থাকা লোকগুলোর নজরে পড়লেই সন্দেহ করবে। কিম্বা হয়তো টাইম মতো সরে পড়েছে। ওকে খবর দেওয়া দরকার। পকেট হাতড়াই। ‘আমার মোবাইলটা?’

‘হেহে, নেই!’

‘নেই মানে?’ আমি জোর করে চোখ টেনে খুলে উঠে বসতে চেষ্টা করি।

‘নেই মানে নেই। এ ঘরে বাইরের যন্ত্রপাতির প্রবেশ নিষিদ্ধ। তোমার পিস্তল, মোবাইল, পুঁচকে ছুরিটা- সব বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। কখন, কীভাবে – অতশত প্রশ্ন কোরো না। উত্তর পেলেও বুঝবে না বিশেষ কিছু, অভ্যাস নেই তো! এ ঘরে কেবল আমার যন্ত্রপাতিরা থাকে।‘

‘আপনার যন্ত্রপাতি?’

‘হ্যাঁ তো। ওই যে – তানপুরা, সারেঙ্গী, সেতার, বাঁশি, দোতারা, সুরবাহার, সরোদ, তবলা, বীণা…’

‘থামুন, থামুন!’ আমি রেগে উঠতে চাই। বুড়ো আমায় কোনো পাত্তা না দিয়েই বলে চলে, ‘চৌষট্টি হাজার রাগরাগিণী আছে আমাদের, জানো? কোনটার সাথে কোনটা ঠিক কী অনুপাতে মেশালে ওষুধ হয়, সে সব নিয়েই আমার কারবার।‘

নাহ, এ যে দেখছি বদ্ধ পাগল! কী করে এর হাত থেকে ছাড়া পাওয়া যায়? ব্যথা কমলেও কেমন অসাড় হয়ে যাচ্ছে যেন শরীরটা! তাছড়া বাইরের অবস্থাও তো খারাপ। খোঁড়াতে খোঁড়াতে মহল্লা দিয়ে বেরোতে গেলেই নজরে পড়ে যাব।

‘পালাবার কথা ভাবছ?’ বুড়ো আবার ফ্যাকফেকিয়ে হাসে। ‘তাও তো এখনো ভৈঁরো কিম্বা হিন্দোল প্রয়োগ করিনি, তাই দেখতে শুনতে পাচ্ছ। ওগুলো পুরো বুস্টার ডোজ!’

‘জোর করে খাওয়াবেন?’

‘জোর করতেই হবে না। তুমিই শান্ত ছেলের মতো খেয়ে নেবে। এই তো আসছি বাটি নিয়ে। দ্যাখো তো, আটকাতে পারো কিনা!’ বুড়ো সত্যিই আরেকবার একটা ওষুধের বাটি নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি টের পাই, আমার হাত পা কোনোটাই আর আমার বশে নেই। বুড়ো আমার মুখে জিনিসটা ঢেলে দেবার পরে সেটা আপনা আপনি আমার গলা দিয়ে নেমে যায়।

‘একটু পরেই তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। কাল পর্যন্ত ঘুমোবে। ঘুম যখন ভাঙবে তখন শুনবে ঈশার নমাজ চলছে মসজিদে। তখন তোমার চিকিৎসা আলতো করে কেদার দিয়ে শুরু করব। প্রথম দিকে সহজ কোনো বাদ্য। একদম প্রথম থেকে ধরতে হবে কিনা! ঠিকঠাক তার বাঁধা নেই যে! অনেক সরগম লাগবে। তারপর আস্তে আস্তে আলাপ, ঝালা, তেহাই। অকারণে মানুষ মারতে মারতে এই যে তোমার শরীরে ক্লেদ ঢুকে গেছে, সুর ঢুকিয়ে শিরা-উপশিরা-স্নায়ু সব সাফ করে তারপর নতুন করে সমে লয়ে বাঁধতে হবে জীবন। খুন করাটা কোনো কঠিন কাজ নাকি? তার চেয়ে ঢের কঠিন দীপক গেয়ে আগুক জ্বালানো কিম্বা মেঘমল্লার বাজিয়ে বৃষ্টি নামানো। হ্যাঁ, সে সব যেদিন করে উঠতে পারবে, আমি বুঝব তুমি কত বড় মস্তান!’

               *        *        *        *        *        *

বেশ কিছু মাস পর লালী ওর সুবুদাকে খুঁজে পায় চকগড়িয়ার ঐদিকে। প্রথমটা একেবারেই চিনতে পারেনি। পুলিশের খাতায় বড়ামসজিদের কেসটার পর থেকেই সুবু মস্তান ফেরার। গলার স্বর না শুনলে লালীর কাছে ও অচেনাই থেকে যেত। একমাথা উস্কোখুস্কো চুল, মুখময় দাড়ি, ছেঁড়া জামাকাপড়।রাস্তার ডিভাইডারে বসে একটা ভাঙা বালতি বাজিয়ে উদার গলায় গান গেয়ে চলেছে। ‘সুবুদা!’ নীচু গলায় ডাক দেয় ও। পাগল মাথা ঘোরায়। হ্যাঁ, সেই হাসি, সেই ভুরুর কাটা দাগ। এমনকি হাতের ট্যাটুটাও মিলে যাচ্ছে। শ্রোতা পেয়ে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে দ্রুত লয়ে বালতি বাজায় সুবু মস্তান।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ সরে পড়ে লালী।

 

0 Comments

Post Comment