পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আচ্ছে দিনে অর্থনীতির শবযাত্রা

  • 13 January, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 875 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন কল্যাণ মৌলিক
ভারতের মত দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয় কর্মসংস্থান। প্রতিবছর তাই কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা একের পর এক প্রতিশ্রুতি দেন যা কখনো বাস্তবায়িত হয় না।২০১৪ পরবর্তী সময়ে এই প্রতিশ্রুতির পরিমাণ যেমন বেড়েছে ( প্রতিবছর ২-৩ কোটি) তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারি।একথা ইতিপূর্বে বহু আলোচিত যে নরেন্দ্র মোদির আমলে বিগত পঁয়তাল্লিশ বছরের যাবতীয় রেকর্ডকে ভেঙে দিয়ে বেকারি শিখর ছুঁয়েছে। সেই আচ্ছে দিনের গল্প, সেই আচ্ছে দিনের শবযাত্রার কাহিনী থাকলো।

ভারত এই মুহূর্তে অর্থনীতির ' সুপার পাওয়ার',করোনা পরবর্তী পর্বে বিশ্ব অর্থনীতির একমাত্র আলোকবর্তিকা, বছরে কয়েক কোটি চাকরি,জিডিপির তেজি বৃদ্ধির হার প্রভৃতি গাল গল্পকে আরেকবার  ভুয়ো প্রমাণ করে দিল সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি প্রকাশিত একের পর এক আর্থিক পরিসংখ্যান।কর্মসংস্থান, আর্থিক ঘাটতি,বৈদেশিক ও আভ্যন্তরীণ ঋণ,আমদানি- রপ্তানির বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতি --- অর্থনীতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ভারতের অধোগমনের ছবি স্পষ্ট। আর এর সঙ্গে যদি অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে মার্কিন অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী মন্দা পর্বের প্রভাব ভারতে এসে পরে তাহলে ২০২৩ সালে দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য আরো খারাপ জায়গায় যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এমনকি জিডিপির যে সম্ভাব্য আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে কর্পোরেট মিডিয়ার নাচানাচির শেষ ছিল না,সেই প্রচার বেলুনও ফুটো হয়ে গেছে।ভারত সরকারের পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক পূর্বাভাষ অনুযায়ী ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির পরিমাণ ৭ শতাংশে নেমে আসতে চলেছে।আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিও এই আর্থিক বর্ষে  বৃদ্ধির পরিমাণ ৭% এর বেশি হবে না বলেছে এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে তা আরো নেমে গিয়ে ৪.৮% হতে পারে।বর্তমান নিবন্ধে আমরা ভারতীয় অর্থনীতির সাম্প্রতিক হাল- হকিকত নিয়ে অনুসন্ধান করব।

(১)

ভারতের মত দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয় কর্মসংস্থান। প্রতিবছর তাই কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা একের পর এক প্রতিশ্রুতি দেন যা কখনো বাস্তবায়িত হয় না।২০১৪ পরবর্তী সময়ে এই প্রতিশ্রুতির পরিমাণ যেমন বেড়েছে ( প্রতিবছর ২-৩ কোটি) তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেকারি।একথা ইতিপূর্বে বহু আলোচিত যে নরেন্দ্র মোদির আমলে বিগত পঁয়তাল্লিশ বছরের যাবতীয় রেকর্ডকে ভেঙে দিয়ে বেকারি শিখর ছুঁয়েছে।কিন্তু তারপরেও সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকারি চাকরির,সমস্ত পেটোয়া মিডিয়াকে জড়ো করে ' রোজগার মেলা' অনুষ্ঠিত হয়েছে,এম এস এম ই সেক্টরে( অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্র)  সরকার প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেছে ( খুব কম সুদে ঋণদান)  বলে দাবি করেছে।এই সব পদক্ষেপ গ্রহনের পর চাকরির হালটা কি পাল্টেছে? সিএমআইই ডিসেম্বর (২০২২)  এ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে শহরে বেকারির হার ১০.০৯% যা নভেম্বর মাসে ছিল ৮.৯৬%।গ্রামাঞ্চলে বেকারির পরিমাণ ৭.৪৪% যা নভেম্বর মাসে ছিল ৭.৫৫%।দেশে গড় বেকারি ৮.৩% যা গত ১৬ মাসে সর্বোচ্চ। আবার রাজ্যওয়ারি ছবিটাও খুব উদ্বেগজনক।বেকারি সবচেয়ে বেশি যে ৫ টি রাজ্যে তার মধ্যে রয়েছে হরিয়ানা,রাজস্থান, দিল্লি,বিহার ও ঝাড়খন্ড।কিন্তু কর্মহীনতার সার্বিক চালচিত্রটা আরো ভয়ংকর। ভারতে এই মুহূর্তে কর্মহীন শ্রমশক্তির পরিমাণ ৫ কোটি।এই তথ্যটির গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারব যদি আমরা মনে রাখি ২০২০ সালে অতিমারীর প্রথম বছরেও এত বেকারি ভারতে ছিল না।এই কর্মহীনতার আরেকটি বড়ো প্রমাণ হল ২০১৯ সালে ভাবতে শ্রমশক্তির পরিমাণ ছিল ৪৪.২ কোটি যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৪৩.৭ কোটি।২০১৯ সালে যেখানে বার্ষিক বেকারি ছিল ৭.৪% তা এ বছর হয়ে দাঁড়াল গড়ে ১০%।এই মাত্রায় ও এতোদিন ধরে ধারাবাহিক ভাবে কর্মহীনতার ভয়ঙ্কর ছবি ভারতবর্ষ আগে কখনো দেখে নি।

(২)

অর্থনীতির পক্ষে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল ' বর্তমান আর্থিক ঘাটতি' ( কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট/ ক্যাড)।বর্তমানে এই ঘাটতির পরিমাণ( জুলাই- সেপ্টেম্বর)  ৩৬.৪ বিলিয়ন যা এক সর্বকালীন রেকর্ড ও জিডিপির ৪.৪%। এই অবস্থা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১২-১৩ সালের কথা ( বিশ্বজনীন আর্থিক মন্দা)  যখন ক্যাডের পরিমাণ হয়েছিল ৩২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।মিন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত ডেলইট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই ঘাটতি যে ভাবে বেড়ে চলেছে তাতে টাকার উপর চাপ বাড়বে।এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় নিত্য প্রয়োজনীয় নয় এমন সব পণ্যের আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ এবং সস্তা আমদানির জন্য নতুন দেশ খোঁজা। এই ঘাটতির কারণ বাণিজ্য ঘাটতি অর্থাৎ ভারতবর্ষ যত টাকা মূল্যের রপ্তানি করে তার থেকে অনেক বেশি আমদানি করে।

অর্থনীতিতে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে হলে বানিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানির থেকে আমদানি বেশি করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বিষয়টা উল্টো দিকে চলছে।২০১৪ সালে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৫ বিলিয়ন ডলার যা ২০২২ সালে হয়েছে ১৯০ বিলিয়ন ডলার।আন্তর্জাতিক অর্থ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ২০২৩ সালে পরিমানটা ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলতে পারে।ঘাটতি কিভাবে বেড়ে চলেছে তা কয়েকটি সাম্প্রতিক তথ্যের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।ভারতে ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৩.৬৪ বিলিয়ন ডলার যা ২০২২ সালের অক্টোবরে হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৬৯ বিলিয়ন ডলার।ঐ একই বছরে অক্টোবর মাসে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৫.৭ বিলিয়ন ডলার  যা ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৩৫.৪ বিলিয়ন ডলার ছিল।২০২২ সালের আর্থিক বর্ষের প্রথম ছ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৪৯.৪৭ বিলিয়ন ডলার যা ২০২১ সালের প্রথম ছ মাসে ছিল ৭৬.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।কেন ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে চাহিদা বাড়ছে না তার একটা উত্তর পাওয়া যাবে রপ্তানির পরিমাণ হ্রাসে।রপ্তানির ঘাটতিটা সর্বব্যাপ্ত। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ঋণাত্মক বৃদ্ধি ( নেগেটিভ গ্রোথ) দেখা যাচ্ছে  রত্ন ও অলঙ্কার শিল্প( -২১.৫৬%),ইঞ্জিনিয়ারিং (-২১.২৬%),পেট্রোলিয়াম (-১১.২৮%),রেডিমেড পোশাক( -২১.১৬%),কেমিক্যালস (-১৬.৬৪%),ওষুধ ( -৯.২৪%),চামড়াজাত দ্রব্য (-৫.৮৪%)।একমাত্র তামাক,চা,চাল ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ধনাত্মক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।এই হতাশাজনক ছবি একই সঙ্গে মোদি সরকারের বহু বিজ্ঞাপিত ' আত্ম নির্ভর ভারত' প্রকল্পের পর্বত প্রমাণ ব্যর্থতাকে সামনে এনে দেয়।

(৩)

ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা ভারতীয় অর্থনীতির এক দীর্ঘকালীন সমস্যা যা ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে তুলছে।বিশেষ করে ৮০' দশকের সূচনালগ্ন থেকে ঋণের পরিমান বেড়েই চলেছে এবং নব্বই দশকে কাঠামোগত সংস্কারের কর্মসূচী চালু হওয়ার পর ঋণের পরিমান তো কমেই নি বরং ধারের পরিমাণে উর্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির জমানায় ঘটনা আলাদা কিছু হয় নি।একদম সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন গোটা দেশের মাথায় ঝুলছে ১৯৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের বোঝা।২০১৪ সালে মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ সরকারের যখন পতন হয় তখন পরিমাণটা ছিল ৫৬ লক্ষ কোটি টাকা।২০১৪ সালে পার ক্যাপিটা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৪,৩৪৮ টাকা যা ২০২২ সালে হয়েছে ১,০১,০৪৮ টাকা।কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীনে ডিপার্টমেন্ট অব ইকনমিক অ্যাফেয়ার্সের ' স্ট্যাটাস পেপার অন গভর্নমেন্ট ডেবট' এই পরিসংখ্যান সামনে এনেছে।আর আচ্ছে দিনের অর্থনীতিতে কিভাবে ঋণের ফাঁস আমাদের উপরে চেপে বসছে তা একটু পরিসংখ্যানের আলোকে বুঝে নেওয়া দরকার।সংঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদরা বলার চেষ্টা করছেন করোনা কালে অর্থনীতিকে বাঁচাতে সরকার ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে।কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে মোদি জমানার সূচনা লগ্ন থেকে আরো বেশি করে ঋণের বোঝা বাড়ছে। ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে কেন্দ্রের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০ লক্ষ ৭ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা,২০১৭-১৮ সালে যা হয় ৭৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।এগুলো সবই অতিমারী পূর্ব সময়ের ঘটনা। রাজ্যসভায় বিরোধী পক্ষের প্রশ্নের জবাবে অর্থ দপ্তরের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেন ২০২০ সালে জিডিপির ৫১.৬% ছিল ঋণ যা ২০২১ সালে হয়েছে ৬০.৫%।

এই ঋণের মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক ও আভ্যন্তরীণ উৎস সমূহ থেকে প্রাপ্ত ঋণ।বৈদেশিক ঋণ বলতে বোঝায় কোন দেশ যখন কোন অন্য দেশ বা আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নী সংস্থা থেকে টাকা ধার নেওয়া হয় এবং শোধ করতে হয় সেই দেশের মুদ্রায়।২০২০- ২১ আর্থিক বর্ষে ভারত কোন্ কোন্ আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান থেকে কত কত টাকা ধার নিয়েছে তার একটা হিসাব উদাহরণ হিসাবে রাখা যেতে পারে।এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক( ২৪,১০৯ কোটি টাকা), ইন্টারন্যাশানাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন( ১২,২১৬ কোটি টাকা), ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট  (১৭,৫৭০ কোটি টাকা), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট ( ২২৮ কোটি টাকা), নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (১৮,১৯৪ কোটি টাকা)। মোটা দাগের হিসাবে বলা যেতে পারে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ২১.১%। আভ্যন্তরীণ ঋণ বন্ড, ট্রেজারি বিল ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করে। জিডিপির ৪৮.৫% আভ্যন্তরীণ ঋণ।সরকারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সরকার ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে ২৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা,২০১৯-২০ সালে ৩৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ সালে ৩৪ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে।এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার এই সময় পর্বে পরিকল্পিত অর্থনীতির সম্পদ একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মোদি সরকার বিক্রি করে দিয়েছে। এই টাকা ধার শোধ করতে ব্যবহার করা হয়েছে।কিন্তু এর পরে বিক্রি করার মত সম্পদ যখন সরকারের হাতে থাকবে না তখন ঋণের টাকা শোধ কি ভাবে হবে?

(৪)

ভারতীয় অর্থনীতির সংকটের আরেকটা লক্ষ্মণ হল ভারতীয় টাকার হতাশাজনক পারফরম্যান্স। এশিয়ার মধ্যে ভারতীয় মুদ্রার হাল সবচেয়ে খারাপ ও এর প্রধান কারণ ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি।২০২১ সাল শেষ হয়েছিল ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ৭৪.৪৬ টাকা দিয়ে যা ২০২২ সালে হয়ে দাঁড়াল ৮২.৭১ টাকা অর্থাৎ এক ধাক্কায় ১১.০৭% পতন।এই পতন শুরু হয় জানুয়ারি থেকে এবং জুলাই মাসে প্রথম ১ ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮০ টাকা।এক্ষেত্রে আরেকটি বিপদ সংকেত হল বিদেশি পোর্ট ফোলিও ইনভেস্টররা ২১ লক্ষ কোটি টাকার ভারতীয় ইকুইটি বিক্রি করেছে।এই পরিস্থিতি আমরা দেখেছিলাম ২০০৮ সালের বিশ্বজনীন আর্থিক মন্দার সময় যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রচুর টাকা তুলে নিয়েছিল।বিদেশি পুঁজির এই উড়ান একদিকে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডারের পরিমাণ কমাবে তেমনি বিনিয়োগের অভাব অর্থনীতিকে আরো দুর্বল করে দেবে।

 (৫)

আচ্ছে দিনের এই সময়ে ভারতীয় অর্থনীতি যে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে তা এতক্ষণের আলোচনয় স্পষ্ট। কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে ২০২৩ সালে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ যে দীর্ঘ সময় ধরে চলবে তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট। এর ফলে পেট্রো পণ্যের বাজার আরো জটিল হবে ও বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়বে।আই এম এফের মতে বিশ্বের তিনটি প্রধান অর্থনীতি অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার লক্ষণ গুলি স্পষ্ট হয়ে উঠছে ও তাদের আশঙ্কা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ এই মন্দার শিকার হবে।বিশ্বায়িত অর্থনীতির কারণে ভারতও রেহাই পাবে না।এমনিতেই নব্বই এর দশকের সূচনালগ্নে বিশ্বব্যাঙ্ক,আই এম এফ,এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক প্রভৃতি আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির অভিভাবকত্বে ভারত ' উদারীকরণ - বেসরকারিকরণ - ভুবনায়নের' যে নীতি গ্রহণ করে তার অনিবার্য ফল হিসাবে ভারতের অর্থনীতি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ধাপে ধাপে দেউলিয়া হয়ে যাবার দিকে এগোচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতে  কর্পোরেট রাজের যা বাড়বাড়ন্ত ( অবশ্যই মনমোহন সিং এই দেউলিয়া অর্থনীতির ভগীরথ)  তাতে এই পরিণতি অনিবার্য ছিল। এই নয়া উদারবাদী অর্থনীতি ও তার প্রচারকদের প্রত্যাখানের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অর্থনীতিকে বাঁচানোর দাওয়াই। সময়ের দাবি সেটাই।

0 Comments

Post Comment