পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কন্ঠ তোমার রুদ্ধ আজিকে লেখনী শিকলপরা

  • 19 February, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 896 view(s)
  • লিখেছেন : তথাগত
ফরাসি সাংবাদিক ভ্যানেসা ডোনাক-কে বিদ্বেষপ্রসূত সংবাদ পরিবেশনের অপরাধে বলপূর্বক ভারত থেকে বহিষ্কার করা হল। এমনিতেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিরিখে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১তম। এই ঘটনায় তথাকথিত সেই স্বাধীনতা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে।

দীর্ঘদিন ভারতে সাংবাদিকতা করার পরে, এক  ফরাসি সাংবাদিক একথা জানিয়েছেন যে তিনি যে দেশে দু'দশকের বেশি কাজ করেছেন সেই ভারত ছেড়ে চলে যাচ্ছেন কারণ কর্তৃপক্ষ তাঁকে "বিদ্বেষপূর্ণ এবং সমালোচনামূলক" প্রতিবেদনের জন্য দেশ থেকে বিতাড়নের হুমকি দিয়েছেন। ফরাসি সাংবাদিক ভ্যানেসা ডোনাক-কে বিদ্বেষপ্রসূত সংবাদ পরিবেশনের অপরাধে বলপূর্বক ভারত থেকে বহিষ্কার করা হল। এমনিতেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিরিখে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১তম। এই ঘটনায় তথাকথিত সেই স্বাধীনতা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে। রাষ্ট্রশক্তির প্রভাব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমস্যা কত গভীরে। 'Le Point' সহ ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত প্রতিবেদক শ্রীমতী ভ্যানেসা ডোনাক ভারতে ২৩ বছর ধরে কর্মরতা ছিলেন।

 

ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত মাসে এই সাংবাদিককে একটি নোটিশ পাঠিয়ে জানায় যে তাঁর কাজ ভারতের জাতীয় স্বার্থের 'পরিপন্থী' এবং সেই কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁর নাগরিকত্ব সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় যে কথাগুলো লিখেছেন, তা এখানে থাকলো। এই লেখা পড়লেই বোঝা যাবে, কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে।

 

“আজ ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমি চোখের জলে এই কথাগুলো লিখছি। আজ থেকে ২৫ বছর আগে একজন ছাত্রী হিসেবে আমি ভারতে এসেছিলাম, আর একজন সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘ ২৩ বছর এদেশে কাজ করেছি। এখানেই আমার বিয়ে, সন্তান প্রতিপালন সব। এই দেশ আমার আরেক মাতৃভূমি।

 

এদেশ আমি স্বেচ্ছায় ছাড়তে চাইনি।

ভারত সরকার আমায় এদেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। প্রায় ১৬ মাস আগে এই সরকারের গৃহ মন্ত্রালয় সাংবাদিক হিসেবে আমার কাজ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কোন কারণ বা যুক্তির ধার ধারেনি, কোন কথা শোনেনি। তখন থেকে  এই খামখেয়ালি কাজের ব্যাখ্যা বা পর্যালোচনার জন্য আমি বার বার অনুরোধ জানালেও একটি বারের জন্যও ওরা কোন জবাব দেয়নি। গত মাসে ওরা আমায় একটা নোটিশ পাঠিয়েছে। অভিযোগ করেছে যে আমার লেখা সব প্রবন্ধ বিদ্বেষমূলক এবং তা ভারতের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিবন্ধী। আমায় জানাতে বলেছে যে আমার এদেশের নাগরিকত্ব কেন কেড়ে নেওয়া হবে না। নোটিশে একথাও বলা হয়েছে যে আমার লেখা "আইনশৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ও শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে"।

আজকাল আমি কাজ করতে পারছি না। আমার নামে অন্যায় অভিযোগ এসেছে যে আমি ভারতের স্বার্থকে ব্যাহত করছি। আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমি এদেশে থাকতে পারব না, জীবিকা নির্বাহ করতে পারব না। যথাযথ স্থানে এই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে আমি লড়াই করছি এবং আইনি ব্যবস্থার উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু ফলাফল জানার জন্য বসে থাকার সময় আমার নেই। নাগরিকত্ব নিয়ে এই আইনি টানাপোড়েন আমায় চুরমার করে দিয়েছে। ভারতের বিদেশী নাগরিকরা সরকারের সঙ্গে সহমত না হলে সেই বিরোধী কন্ঠ রোধ করার এক ব্যাপক প্রয়াসের অংশ হিসেবে এই সব ব্যবস্থা এখন গ্ৰহণ করা হচ্ছে বলে আমি মনে করছি। ভারতের কর্তৃপক্ষ আমায় প্রথমে বৃত্তি বদল করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে একজন সাংবাদিক, অপ্রমাণিত অভিযোগের কারণে আমি তাতে সম্মত হতে পারি না।

 

বন্ধু, সহ-সাংবাদিক সহ সকল ব্যক্তি যাঁরা আমার সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।

 

ভারতে সাংবাদিক হিসেবে আমি যে অসাধারণ ২৩ বছর কাটিয়েছি তার জন্য আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। এই উপমহাদেশে আমার জীবন ছিল ঝুঁকি ও পারস্পরিক ‌ প্রভাবে ভরপুর। দুই দশক ধরে ভারতের ইতিহাস চোখে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। একজন বিদেশী প্রতিবেদক হিসেবে ভারতের মিশ্র ও ঋদ্ধ সংস্কৃতির সঙ্গে ফরাসি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কাজ আমার কাছে ছিল সৌভাগ্য ও সম্মানের। এই বিরাট দেশের সৌন্দর্য ও মানবহৃদয়ের উষ্ণতার স্মৃতি আমি আজীবন মনে রাখব। দিল্লি ছিল আমার ভালবাসার শহর, সেখানে আমার জীবন কেটেছে। এই শহরকে বিদায় জানাতে গিয়ে আমি গভীর দুঃখ অনুভব করছি।

আমার আশা একদিন আমি আবার ভারতে ফিরে আসতে পারব”।  

 

ভেনেসা ডোনাক

(La Croix, Le Point, Le Temps এবং Le Soir সংবাদপত্রের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেদক)

0 Comments

Post Comment