পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পোষ্টাল ব্যালটে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের ভোট দেওয়ানো কেন ?

  • 09 January, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 1468 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন সেনগুপ্ত
বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা সবাই কি এই বিজেপির রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক জানেন, তাহলে কেন তাঁদের এই পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ানোর এতো তোড়জোড় ? তাহলে কি অবিজেপি রাজ্যগুলো দখল করে আগামী কয়েকবছরে সংবিধান বদল করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করাটাই বিজেপির উদ্দেশ্য ? নাগরিক পরিসর থেকেও কি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠা জরুরী নয় ?

নরেন্দ্র মোদী সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের সময়টা খুব জরুরী। তা সে নোটবন্দী হোক বা লকডাউন অন্য যে কোনও সিদ্ধান্ত। প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারবেন না, কেন করা হচ্ছে, পরে যখন বুঝতে পারবেন তখন কিছু করার থাকবে না। সমালোচনা হয়তো করা যাবে, কিন্তু তাতে খুব কিছু লাভ হবে না। ২০১৭ সালে যেদিন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা সামনে আনলেন তখন কি কেউ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই নির্বাচনী বন্ড দিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ৯৫ শতাংশ টাকা নিজেদের তহবিলে নিয়ে নেবে ? অথচ আজ অবধি কিন্তু কেউই জানতে পারেনি, কারা এই টাকাটা দিলেন এবং তার বিনিময়ে তাঁরা কি সুবিধা পেয়েছেন সরকারের কাছ থেকে।

এই মুহুর্তে আবার নতুন একটা প্রস্তাব সরকারের পক্ষ থেকে আনা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে, যা অনেকেই হয়তো খেয়াল করেননি। বলা হয়েছে, যে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা যারা এতদিন ভারতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না ( একমাত্র নির্বাচন ও প্রতিরক্ষার কাজে যারা যুক্ত আছেন, তাঁরা ছাড়া) তাঁরা এবার নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। এবারও সময়টা মাথায় রাখা জরুরী। সামনে অন্তত ৩টি অবিজেপি রাজ্যে নির্বাচন আছে এবং এই সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যুক্তি সাজানো হয়েছে যে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ কোটি মানুষ পেশার কারণে বিদেশে থাকেন কিন্তু তাঁদের ভোট দানের অধিকার নেই, এর পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশী, এই প্রক্রিয়ার ফলে তাঁদেরও সুবিধা হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশন স্বীকার করেছে যে তাঁদের কাছে এই মুহুর্তে সঠিক তথ্য নেই সারা দেশের ঠিক কত মানুষ বিদেশে বসবাস করছেন, পেশার কারণে, কিন্তু সংখ্যাটা ৬০ লক্ষ থেকে ৯০ লক্ষের মধ্যে। এবার তাই তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই মুহূর্তে যারা আছেন তাঁরা পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। কেন, ইংল্যান্ড এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই তালিকায় নেই, তার অবশ্য কোনো ব্যখ্যা নেই। শুধু বলেছেন যে যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই, তাই সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের এই অধিকার আপাতত দেওয়া হল না।

কিন্তু এর পিছনে আসল উদ্দেশ্যটা কি ? প্রথমত বিদেশে বসবাসকারী একটা বড় অংশের মানুষ আজকের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সমর্থক। এঁদের একটা অংশ ভারতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। দ্বিতীয়ত এঁদেরই একটা অংশ বিজেপিকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করেন, যে তথ্য তাঁরা নির্বাচনী বন্ডের মধ্যে দিয়ে ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন, এবং তাঁরা ভারতীয় রাজনীতি সম্পর্কে খুব বেশী ওয়াকিবহাল নন। এই মুহুর্তে তাঁদের কাছে খবর যেভাবে পৌঁছনো হয়, তা মুলত সরকারী ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়েই হয়, ফলত বিদেশে থাকা অবস্থায় বিরোধী দলেরা কি করছেন বা বলছেন তা জানা একান্তই অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। এঁদের একটা অংশ বিদেশ থেকে আদৌ কোনোদিন ফিরবেন কিনা বলা মুশকিল, ফলে এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে হিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন চলছে তাতে ওই বিদেশে থাকা মানুষদের খুব কিছু যায় আসে না হয়তো। এঁদের অনেকেরই হয়তো বিদেশের নাগরিকত্বও আছে, ফলে তাঁদের যদি নির্বাচনে পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তাহলে এই মুহুর্তে যারা শাসন ক্ষমতায় আছে, তাঁদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। শাসকদল কিন্তু ভাল করেই জানে যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে মুলত কারা কাজ করতে যান, এবং এটাও জানেন এঁদের বেশীরভাগ মানুষ তাঁদের হিন্দুত্বের রাজনীতির সমর্থক নন, ফলে সচেতনভাবেই ওই দেশগুলোকে বাদ রাখা হয়েছে তালিকা থেকে। কোন কোন রাজ্য থেকে এই মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কাজ করতে যান মানুষজন এই তথ্যও তাঁদের কাছে আছে। বাংলা এবং কেরালা, এই দুই রাজ্যই এই মুহূর্তে অবিজেপি রাজ্য এবং আগামীতে যে কিছু রাজ্যে নির্বাচন আছে তাতে এই মানুষদের যদি এই পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে সেটা বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে।

এই বিষয় নিয়ে কিন্তু বিরোধী দলেরা আশ্চর্যরকম ভাবে নিশ্চুপ। তাঁরা কি এই বিষয়টা অনুধাবন করতে পারছেন না? শুধু টুইট করে কিন্তু এর সমাধান হবে না, বিরোধী দলেরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়াজ না তোলেন, যে এই মানুষেরা যারা সরকারী খরচে পড়াশুনা করে, দেশের সমস্ত কিছু সুবিধা নিয়ে এই মুহুর্তে বিদেশী বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত, তাঁদের কি সত্যিই দেশের প্রতি ভালবাসা আছে? তাঁরা কি সত্যিই মনে করেন এই হিন্দুত্ববাদী শক্তি যারা মুলত আত্মনির্ভরতার নামে কিছু বন্ধু পুঁজিপতির হয়ে ওকালতি করছেন তাতে দেশের ভালো হবে? অধ্যাপক অমিত ভাদুড়ী তাঁর একটি লেখায় লিখেছিলেন যে বিজেপি সামাজিক ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক, সনাতন বর্ণব্যবস্থায় বিশ্বাসী আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কর্পোরেটপন্থী। সারা পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে ফ্যাসিস্ট রাজনীতি এই নিয়মেই চলে। এই ভাবেই ফ্যাসিস্টরা ধীরে ধীরে সমস্ত সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে দখল নেয় এবং তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ দেশের প্রান্তিকতম মানুষটির কাছে পৌঁছে দেয়। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা সবাই কি এই সম্পর্কে সম্যক জানেন, তাহলে কেন তাঁদের এই পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ানোর এতো তোড়জোড় ? তাহলে কি অবিজেপি রাজ্যগুলো দখল করে আগামী কয়েকবছরে সংবিধান বদল করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করাটাই বিজেপির উদ্দেশ্য ? নাগরিক পরিসর থেকেও কি এর বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠা জরুরী নয় ?

.

.

0 Comments

Post Comment