পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

এনপিআর-এর হেঁয়ালি

  • 28 February, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1844 view(s)
  • লিখেছেন : মনসুর মণ্ডল
প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা  নেই  এমন রাজনৈতিক  দলগুলির  সাধ্য  এনপিআর-এনআরসি’র   বিরুদ্ধে  বৃহত্তর লড়াইয়ে  পর্যাপ্ত  নয়। সামাজিক  পরিসরে  এক ধরনের  লড়াই  আছে। বিভিন্ন  নাগরিক  ফোরাম আছে,  কিছু  সোশ্যাল মিডিয়া  আছে,  আর আছে  স্বতস্ফূর্ত  জন আলোড়নের দৃষ্টান্ত। তাহলে কি হবে ?

পশ্চিমবঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চাটা চলে আসছে, এনপিআর বা জাতীয় জনপঞ্জী হ’ল এনআরসি’র প্রথম ধাপএনআরসি রুখতে হলে এনপিআর রুখতে হবেএনআরসি- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রথমদিকে এভাবে বলতে প্রস্তুত ছিল না। এনপিআর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় আর সিএএ-এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে স্বতস্ফূর্ত গণপ্রতিবাদের আবহে তারা এনপিআর-এর বিরোধিতায় মুখ খোলে। রাজ্য সরকার এনপিআর-এর কাজ স্থগিত ঘোষণা করে এখন বিজেপি ও বিজেপি-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি ছাড়া আর কেউ এনপিআর-এর সপক্ষে বলছে না।

দেশে বহু রাজনৈতিক দল এনপিআর-এর বিরোধিতা করছেকিন্তু তাদের অনেকেরই দ্বিধা আছেতারা সেনসাস-এর সঙ্গে এনপিআর-এর সংযোগ নিয়ে বিচলিতবেশ কিছু রাজ্যে সররকারের এনআরসিতে আপত্তি আছেকিন্তু তারা এনপিআর-এ সম্মত২০১০ সালে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার প্রথম এনপিআর করেছিলএনপিআরকে সেনসাস-এর সঙ্গে যুক্ত করে ডেটাবেস হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলএখন একদিকে জনগণনার জগাখিচুড়ি, অন্যদিকে এনআরসি; এই সবদলগুলির শ্যাম রাখি না কুল রাখিঅবস্থাবঙ্গের সরকার না কি বুঝেছিল, এনপিআর হ’ল জনগণনা এনপিআর-এ পিতা- মাতার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান জানতে চাওয়া হবে, জেনে বুঝতে পারল, এনপিআর থেকে এনআরসি করা হবেকেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পিতা-মাতার জন্ম-তথ্য কেউ বলতে না চাইলে না বলবেব্যাপার-স্যাপার বেশ গোলমেলে পিতা-মাতার জন্ম-তথ্য সংক্রান্ত প্রশ্নবাদ দিয়ে এনপিআর সমর্থনযোগ্য? জনগণনার খাতিরেই বাকি এনপিআর মেনে নেওয়া যায়?

“নাগরিকত্ব ( নাগরিকগণের নিবন্ধীকরণ ও জাতীয় পরিচয় পত্রপ্রদান ) বিধি, ২০০৩”-এএনআরসি’র নিয়ম-কানুনে এনপিআর করার কথা বলা আছে সেখানে প্রশ্নমালায় পিতা-মাতার জন্মপ্রসঙ্গ নেইতাতে এনআরসি আটকাবার কথাও নয়এনপিআর -এ ব্যক্তি- তথ্য সংগ্রহ করা হবে পরিবারকে ধরেপ্রত্যেকের জন্ম তারিখ ও জন্ম স্থান জানা হবেআমাদের দেশের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাইয়ের আগে যাদের ভারতে জন্ম হয়েছে়, তাদের বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক না হলেও তারা ভারতীয় নাগরিকফলে পরিবারের যে সদস্যদের জন্ম এই সময়ের মধ্যে, তাদের বাবা-মার জন্ম-প্রসঙ্গই আসছেনা আর তার পরে যাদের জন্ম হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে যেখানে যেমন প্রয়োজন বাবা-মার জন্ম-তথ্য প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসে যাচ্ছেতাহলে বাবা-মার জন্ম প্রসঙ্গ তোলার মানে কী?

ইউপিএ সরকারের এনপিআরকে সেনসাস-এর সঙ্গে যুক্ত করাও ডেটাবেস হিসেবে কাজে লাগানো একটা প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছিলকিন্তু নি:সন্দেহে তা ছিল আইনের অপলাপকেননা আইনে এনআরসি ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যে এনপিআর-এর কথা বলা হয়নিবিজেপি এই ভুলের সুযোগ নিয়ে চালাকি করে চলেছেকিন্তু আজকে যখন বিজেপি’র হাত ধরে এনআরসি’র মারাত্মক বিপদ নেমে আসছে, তখন তার বিরোধিতা হওয়া চাই স্পষ্ট ও খুল্লমখুলাকেন্দ্র সরকার বরং সেনসাস সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা দেখুক

রাজনৈতিক দলগুলির এনআরসি বিরোধিতা, তথা এনপিআর সম্পর্কে দ্বিধা বা সম্মতি, এই হেঁয়ালি আসলে তাদের সংসদীয় ক্ষমতা কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এনপিআরকে দেখার ফলএই প্রাতিষ্ঠানিক তার অবিমৃশ্যকারিতায় এনপিআর হয়ে গেলে এনআরসির অবশিষ্ট কাজ অর্থাৎ নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে কাগুজে পরিচয়ের জটিলতায় বা আইনি মার প্যাঁচে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বেনাগরিক বানাতে বিজেপি’র অপকীর্তি চলবে ঠাণ্ডা ঘরে বসেসেদিন এই এনআরসি বিরোধীরা নিশ্চয় প্রতিবাদে ময়দান ভরাবেসেই সুবাদে হয়তো সংসদীয় ক্ষমতার অলিন্দে এদের প্রাতিষ্ঠানিক তা মহিমান্বিত হবেআর সেদিন রাষ্ট্র হারানো, অধিকার খোয়ানো লক্ষ লক্ষ মানুষের হাহাকারে মানুষের সমাজ, ভারতীয় জাতিসত্তা তছনছ হতে থাকবে

প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা নেই এমন রাজনৈতিক দলগুলির সাধ্য এনপিআর-এনআরসি’র বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইয়ে পর্যাপ্ত নয়। সামাজিক পরিসরে এক ধরনের লড়াই আছে। বিভিন্ন নাগরিক ফোরাম আছে, কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আছে, আর আছে স্বতস্ফূর্ত জন আলোড়নের দৃষ্টান্তএনপিআর নিয়ে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলির যতটুকু অবস্থান বদল, তা সম্ভব হয়েছে এই পরিসরে গড়ে ওঠা বাদ-প্রতিবাদ,জন আলোড়নের ঝটকাতেই। সর্বনাশা এনপিআর রুখতে এই পরিসরটা বড় ভরসার জায়গা। প্রয়োজন আর এক ঝটকা।

মনসুর মণ্ডল

0 Comments

Post Comment