পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বাম ঐক্য নয় : পতাকার রঙের ঐক্য

  • 11 June, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 552 view(s)
  • লিখেছেন : মালবিকা মিত্র
কালীগঞ্জ উপনির্বাচন-বামঐক্য নিয়ে কিঞ্চিৎ কিছু কথা বলা জরুরি। বাম ঐক্যের ভিত্তি কী হবে? ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা না তৃণমূল বিরোধিতা? দুটো অক্ষ তো সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। সেই নিয়েই এই লেখা। যদিও এই মতামত লেখকের নিজস্ব, তবুও এর বিপরীতে অন্য মতামতও সহমন প্রকাশ করতে আগ্রহী।

অবশেষে এ রাজ্যে বাম ঐক্য বুঝি বাস্তবায়নের দোর  গোড়ায়। ইতিপূর্বে গঙ্গারাম ঊনিশটি বার ম্যাট্রিকে সে ঘায়েল হয়ে থামলো শেষে…… থুরি, এই গঙ্গারাম থামার পাত্র নয়। গত ২০২৪ সালে ছটি বিধানসভা ও লোকসভার উপনির্বাচনেও এই ঐক্য গড়ে উঠতে দেখেছি। বামপন্থীরা একটি কথা হামেশাই বলে থাকেন, ভোটের জন্য ঐক্য নয়, পথের ঐক্য, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ঐক্য। পথেই হবে এ পথ চেনা, এমন ঐক্যের কথা। অবশেষে সেই পথের ঐক্য বুঝি পরিনতি লাভ করতে চলেছে। ছাত্রনেতা সুদীপ্ত ইস্যু, কখনো কামদুনি, কখনো ভাঙ্গড় পাওয়ার গ্রিড, কখনো আনিস খান, অথবা সাম্প্রতিক আরজি কর, যাদবপুর, এসএসসি, এসবের মধ্য দিয়ে এই ঐক্য বাস্তবায়নের পথে। কতটা বাস্তবায়িত হল সেটা বঙ্গবাসী উপনির্বাচনে বুঝিয়ে দিয়েছে।  

আবার একটি উপনির্বাচন আসন্ন। ঐক্যের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করব না, আমি জ্যোতিষী নই। হ্যাঁ ঠিকই, কেউ বিগত ছটি বিধানসভা লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফল কে দৃষ্টান্ত হিসেবে টানতে পারেন, আমি সে কথায় যাব না। আমার প্রশ্ন অন্যত্র। আসন্ন কালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে বাম ঐক্য গড়ে ওঠার পর, এই সময় পত্রিকায় লেখা হয় – পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে কোনও নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে লিবারেশন সরাসরি সমর্থন করেনি। দলের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন, “ বাংলার বুকে ফ্যাসিস্ট বিজেপি – আরএসএস যুদ্ধ উন্মাদনা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার করে গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করতে চাইছে।” এ থেকে খুব স্পষ্ট মনে হয় ঐক্যের ভিত্তি হল ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা।

কিন্তু প্রশ্ন তো বেয়ারা স্বভাবের। সে পোষ মানে না। পাল্টা প্রশ্ন করে, সিপিআইএম দল নিজেই তো পার্টি কংগ্রেসে ঘোষণা করেছে আরএসএস বিজেপি  ফ্যাসিস্ট নয়। তাহলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জোট তৈরি হবে কি করে। আরএসএস বা বিজেপির চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ও  সিপিআইএম কি সহমত পোষণ করে? তা যদি না হয় তাহলে ঐক্য হবে কি করে? ঐক্যের মূল সূত্রেই যদি দু'চারটে গিঁট পড়ে যায়, তাহলে তো মালা গাঁথা অসম্পূর্ণ, ফাঁক থেকে যাবে।

মেইনস্ট্রিম পত্রিকায় ঐতিহাসিক ও বামপন্থী রাজনৈতিক নলিনী তানেজা সিপিআইএমের পার্টি কংগ্রেসের দলিল সম্পর্কে বলেন nowhere in the document does one get the sense of degree of suffering of people as a result of the actions of this regime, an idea of what the Muslims go through in their daily lives, attacks and lynchings, and threats to physical existence, the NRC and potential denial of citizenship, the detention camps, or the war on tribals and smaller nationalities: in short, the fascist conditions to which certain regions of the country and certain categories of our people are subjected. অর্থাৎ এটা স্পষ্ট সম্প্রতি পশ্চিমবাংলায় যে বাম জোটটি গড়ে উঠছে, তার ভিত্তি আর যাই হোক, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা নয়।

ভোটের পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলতে আমার বিশেষ আগ্রহ ও রুচি হয় না। তথাপি কালীগঞ্জে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জোটের কথা শুনে একটু পরিসংখ্যান দিতেই হচ্ছে। ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২১ সালে তৃণমূলের ভোট এখানে বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৮৩৮৯৮, ৯৯৮০৯, ১১১৬৯৬। উল্লিখিত তিনটি নির্বাচনে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি ১০৩৭৩, ৬২৬১১ এবং ৬৪৭০৯ । সিপিএম ও কংগ্রেসের যুক্ত ভোট ছিল ওই তিন নির্বাচনে ৮৫১২৫, ২৫৪২৪ এবং ২৫০৭৬ । আমি বলতে চাইছি যে কালীগঞ্জ আসনটিতে বিজেপি যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা অবস্থায় আছে। শুরুতে বিজেপির যে উল্লম্ফন তার সমস্ত কৃতিত্বটাই সিপিএম ও বামফ্রন্টের। অতএব এক কথায় বলতে গেলে কালীগঞ্জ কেন্দ্রে বাম ঐক্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে হারানোর প্রশ্নে নেই। এবং ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তারা নিজেরাও ঐক্যবদ্ধ নয়।

তাহলে পড়ে রইল দ্বিতীয় একটি শর্ত এই সময় পত্রিকায় ওই একই নিবন্ধে লেখা হয় অভিজিৎ মজুমদারের বক্তব্য : “অন্যদিকে, তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতি ও গণতন্ত্রহরণের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষ চরম বীতশ্রদ্ধ। এই প্রেক্ষিতে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য আমরা কালীগঞ্জের মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।” জোটের এই দ্বিতীয় শর্তে কোন বিভ্রান্তি নেই। এটা অনেক বেশি স্পষ্ট ও সুসংগত। তৃণমূলের সীমাহীন দুর্নীতি ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে, কালীগঞ্জে তৃণমূলকে হারাতে হবে। হারাতে পারে একমাত্র বিজেপি, যদি সে আরো বেশি বেশি বাম প্রার্থীদের ভোট অর্জন করতে পারে। ইতিপূর্বে বিজেপি শুধুমাত্র সিপিএমের সিংহভাগ ভোট অর্জন করেছি। বামেদের এক দেড় শতাংশ ভোট তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছিল - নো ভোট টু বিজেপি স্লোগানে। তাছাড়া সিপিএমের নিজের ৫ - ৬ শতাংশ ভোট কিছুতেই বিজেপির ঝুলিতে যাচ্ছিল না। কংগ্রেসেরও দুই তিন শতাংশ ভোট ছিল যেটা বিজেপিতে যায়নি। এই সমগ্র টা জোটবদ্ধ হয়ে, যদি বিজেপিতে হস্তান্তরিত হয়, তাহলে দুর্নীতি ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। বিজেপিকে অলিখিতভাবে এই জোটের শীর্ষস্থানীয় বলা যায়।

ফ্যাসিবাদ না আটকানো যাক, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিকে তো আটকানো গেল। আর ফ্যাসিবাদ আদৌ আছে, নাকি সম্ভাবনাময়, নাকি নব্য ফ্যাসিবাদ, এসব তো এখনো ঠিকই হয়নি। বিজেপির বাংলা ও বিহার বিজয় সম্পূর্ণ হলে তখন না হয় বোঝা যাবে যে এটা ফ্যাসিবাদ নাকি অন্য কিছু। আর কমিউনিস্টরা ভুল করতে ও ভুল স্বীকার করতে কখনোই দ্বিধাগ্রস্থ নয়। না হয় আরেকবার তখন বলা যাবে, কমরেড আমরা ভুল করেছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু এই তৃণমূল বিরোধী, দুর্নীতি ও গণতন্ত্র বিরোধী জোটেও  একটু সমস্যা তো রয়েই গেল। আমার এক বন্ধু হোয়াটসঅ্যাপ করে  একটা ইউটিউব লিংক দিয়ে জানালো – https://youtu.be/A7BG_sIrpqI?si=sxIKoi5EfisPaUz7 “এটা সিপিএমের চ্যানেল। আমি ফলো করি। এরা এখনও এইভাবে দীপঙ্করের বিরুদ্ধে hate politics প্রচার করছে। এই হল সিপিআইএম! এদের সঙ্গে 'বাম' ঐক্য??

পুনশ্চ : প্রসঙ্গত একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা মনে এলো। অতি সম্প্রতি নকশালপন্থী লাল নিশান গোষ্ঠী যারা মহারাষ্ট্রে শক্তিশালী সংগঠন, তারা সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এর সাথে একীভূত হল। বিষয়টা নিঃসন্দেহে আমাকে উৎসাহী করেছে। আমিও উৎসাহ গোপন করতে না পেরে এক পুরনো নকশালপন্থী বন্ধুকে জানালাম। সে আমার চেয়ে অনেক বেশি খবর রাখে। সে ছিল সংগঠনে সক্রিয়। সে জানালো, লাল নিশান গোষ্ঠীর ভাবনাচিন্তা খুবই রাডিক্যাল। এমনকি ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিসিয়াল অবস্থান ছিল আন্দোলন বিরোধী। তথাপি মহারাষ্ট্রের এই কমিউনিস্টরা ১৯৪২ এর আন্দোলনকে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়। এরাই পরবর্তী সময়ে লাল নিশান গোষ্ঠী নামে পরিচিত। শুনে আমি আরও একটু পুলকিত হলাম। আরো শুনলাম বহুদিন আগে এদের একটি অংশ সিপিআই এর সঙ্গে যোগদান করেছিল সংসদীয় স্রোতে। অপর অংশটি স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে থেকেছে। বর্তমানে সেই স্বতন্ত্র অংশটি সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাথে একীভূত হল। আর সিপিআই এবং লিবারেশন তারা তো বাম ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ। লাইনেই আছে, বেলাইন হয়নি। তাহলে সমীকরণটা গিয়ে কি দাঁড়ালো? 

এ পথ দিয়ে কে আসে যায়   কোন্‌খানে
কোন্‌ দুরাশায় দিক-পানে–
এ পথ গেছে কোন্‌খানে,
তা  কে জানে তা কে জানে।

0 Comments

Post Comment