পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মণিপুরে জাতিবিদ্বেষ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ, চোরাচালান চক্র

  • 11 October, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 806 view(s)
  • লিখেছেন : পার্থপ্রতিম মৈত্র
একদিকে কুকি-মিজো-জোমি অন্যদিকে মৈতেই সম্প্রদায়। এই দুই পাহাড়ি উপজাতিগোষ্ঠির মধ্যে জাতিবিদ্বেষ, বিজেপি আমলে হিন্দু খৃষ্টান দাঙ্গায় পর্যবসিত। হিন্দু মৈতেইদের আর খৃষ্টান কুকিদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে একদিকে হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠা আর কুকি-নাগাদের হাত থেকে চোরাচালানের আধিপত্য ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা ব্যকফায়ার করেছে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার ছক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মণিপুরে তথাকথিত জাতিদাঙ্গা যখন তুঙ্গে নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ নির্লিপ্তি ও উদাসীনতার ভান এবং মৌনতা বজায় রেখে ইসরায়েলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন।

ছোট্ট একটা রাজ্য মণিপুর। আয়তন মাত্র ২২,৩২৭ স্কোয়ার কিলোমিটার। ২০২৩ সালের আনুমানিক জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩৬.৪৯ লক্ষ। ৫১ শতাংশ মৈতেই আর ৪৩ শতাংশ কুকি ও নাগা। পাঁচটি পার্বত্য জেলা আর চারটি সমতল জেলা। পার্বত্য এলাকায় বসতি কুকি ও নাগাদের। রাজধানী ইম্ফলসহ সমতলের জেলাগুলি মৈতেই জনবসতি। বিধানসভায় মৈতেই এবং বিজেপি সংখ্যাধিক্য। ষাট সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি একাই সাঁয়ত্রিশ সিট দখল করেছে। সবমিলিয়ে এন্ডিএ জোটের সমর্থক বিধায়ক বাহান্ন। কংগ্রেস ও সহযোগী দলের সংখ্যা মাত্র আট। এই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপির কাছে মানুষের দুটি প্রত্যাশা ছিল। এক রাজ্যের উন্নয়ন আর দুই ড্রাগ, অস্ত্রের চোরাচালান ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত মণিপুর নির্মাণ।

 

আজকের মণিপুরে হিংসার প্রেক্ষাপট বুঝতে সুবিধা হবে এটা মনে রাখলে যে ঐতিহাসিকভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চিরকালীন বিরোধ জীইয়ে রাখা হয়েছে। একাদশ মণিপুর বিধানসভার পঞ্চম অধিবেশন চলাকালীন ২৩শে জুলাই, ২০১৮ তারিখে মণিপুর জনগণের সুরক্ষা বিল পাস হয়েছিল, মৈতেই প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে। বিলে ছিল, শুধুমাত্র সেই বাসিন্দারা যাদের গ্রাম ডিরেক্টরি বা নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধনে (এনআরসি) নাম আছে, তাদের ১৯৫১ সালের মণিপুরী হিসাবে ব্যাখ্যা করা হবে। অন্য সকলের রাজ্যে থাকার অনুমতি নিতে হবে। আসলে বিজেপিতো কংগ্রেসেরই সম্প্রসারিত রূপ। পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারও তাদের রাজত্বকালে অনুরূপ তিনটি বিল পেশ করেছিল কিন্তু সে বিলগুলির বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলনের চাপে প্রয়োগ করে উঠতে পারেনি। আসলে স্বাধীনতার পর মণিপুর রাজ্যটি তৈরীই হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২১শে জানুয়ারী। বাহাত্তর সালকে কাট অফ ইয়ার করার প্রবল দাবী ছিল। ২০১৫ সালে একদিনে মৈতেই স্বার্থ রক্ষার তিন তিনটি বিল পাশ হবার খবরটি পার্বত্য জেলায় পৌঁছার সাথে সাথে মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল ছিল চুড়াচাঁদপুর (যা আজও কুকিদের বসতিকেন্দ্র হিসাবে ধরা হয়) এবং বিক্ষোভের  হিংসার বলি হন নয়জন সিভিলিয়ান। যদিও বিলটি মণিপুর বিধানসভায় পাস হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন এবং আরও পরামর্শের জন্য এটি ফেরত পাঠান।

 

মণিপুর জনগণের সুরক্ষা বিল ২০১৮ এই তিনটি বিলের উত্তরসূরি। এই বিলের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদকে নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল। তবুও  বিলটি পাশ হওয়ার পর জিরিবাম জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পাড়ার পর বলা হলো মণিপুরী কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে মণিপুর বিধানসভায় (যেখানে তখন বিজেপির সরকার) "মণিপুর পিপলস প্রোটেকশান বিল ২০১৮" পাশ হয়েছে। যে বিলে বলা আছে মণিপুরে মৈতেই মণিপুরী, পঙ্গাল মুসলমান, সংবিধানে নথিভুক্ত জনজাতি এবং ১৯৫১ সালের আগে মণিপুরে বসবাসকারী সকল নাগরিক মণিপুরী হিসাবে বিবেচিত হবে। বাকি অ-মণিপুরীদের এক মাসের মধ্যে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। তবে তারা থাকার জন্য একটি পাস পাবে যা ছয় মাসের জন্য ভ্যালিড থাকবে। যাদের ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স আছে, তারা পাঁচ বছর পর্যন্ত একটি পাস এক্সটেন্ড করতে পারেন, যা প্রতিবছর রিনিউ করা হবে। যে কোনও বহিরাগতকে মণিপুরে ঢুকতে হলে ইনার-লাইন-পারমিটের প্রয়োজন হবে। প্রশ্ন হলো ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরা হলো, অথচ প্রদেশটির জন্মই হয়েছে ১৯৭২ সালে। সেক্ষেত্রে প্রামান্য নথি কী হবে?

আপাতদৃষ্টিতে মণিপুরের ঘটনা সংখ্যাগুরু মৈতেই এবং সংখ্যালঘু কুকি-জোমি গোষ্ঠির মধ্যে অঞ্চল দখলের লড়াই। কিন্তু এহ বাহ্য। মণিপুর সহ ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত ঘিরে রয়েছে চিন, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান এবং মায়নমার। এতগুলি দেশ। প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন একটানা রাষ্ট্রীয় হিংসা ও স্থানিক জাতিদাঙ্গার সাক্ষী ভারতের উত্তর পূর্ব সীমান্ত। বছরের পর বছর একটানা অবহেলা, বঞ্চনা, হিংসা, অপরাধী ও রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ আঁতাত এবং সন্ত্রাসবাদের চূড়ান্ত দেখে দেখে, এ রাজ্যের মানুষ নিরাপত্তার অভাবে ভোগে। অর্থনৈতিকভাবে চিররুগ্ন রাজ্যগুলিতে অর্থের উৎস বলতে সরকারী অনুদান, ছোটখাটো ঠিকেদারী এবং চোরাচালান। ছোট ও হাল্কা অস্ত্রের অবাধ চোরাচালান, আর তার সঙ্গে  মাদক ও মানুষ পাচার রাজ্যটিকে আগ্নেয়গিরির শিখরে বসিয়ে রেখেছিল। মাদকাসক্ত যুবসমাজ পঙ্গু, সশস্ত্র বিদ্রোহের নামে চলে অবাধ লুঠতরাজ, আর অঞ্চল দখলে রাখার নামে স্মাগলিং ইকনমিতে আধিপত্য বিস্তার থাকে লক্ষ্য।  লাভা উদ্গীরণ হবার কথাই ছিল, হয়েছে। একথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে কংগ্রেস আমলে মণিপুর স্বর্গরাজ্য ছিল। বরং এসব রোগের বাড়বাড়ন্ত ঐ আমলেই শুরু হয়েছে। এমনকি আফস্পার প্রকোপে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা ধর্ষণ গুমখুন উত্তরপূর্বের সব রাজ্যের মত মণিপুরেও জারী হয়েছে কংগ্রেস আমলেই। কিন্তু বিজেপির রামরাজ্যের মত দূর্নীতির এভাবে রাষ্ট্রীয়করণ হয়নি। মেথ (স্থানীয় নাম ইয়াবা), হেরোয়িন, কোকেন, এল.এস.ডি জাতীয় ভয়াবহ মাদক চোরাচালানচক্র, তার সঙ্গে হাল্কা এবং ছোট অস্ত্র মায়ানমার হয়ে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে ঢোকে এবং মণিপুর মিজোরাম নাগাল্যাণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণায়। তার থেকে আমদানী হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার হিস্যা কার কার কাছে পৌঁছায় তা অনুমান করা অসম্ভব। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে কোনও রাজ্যে গেলেই সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলে দেয় যে ভারতবর্ষের বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা এই চক্রে সামিল।

২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লেখা একটি চিঠিতে এসওও-এর অধীনে একটি কুকি সংগঠনের নেতা এস.এস হাওকিপ দাবি করেন যে দুই বিজেপি নেতা  হিমন্ত বিশ্বশর্মা (আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটির অ্যালায়েন্স এর আহ্বায়ক) এবং রাম মাধব (যিনি তখন উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির দেখাশোনা করতেন) এইসব জঙ্গী কুকি সংগঠনগুলির সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে সাহায্য নিয়েছিলেন সাময়িক যুদ্ধবিরতির এবং একই সঙ্গে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জয়ী করার জন্য সহায়তার। হাওকিপের দাবী অনুযায়ী তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তার ফলেই বিজেপি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যে ক্ষমতায় আসে এবং মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। যদিও রীতি অনুযায়ী রাম মাধব তাঁর দাবি অস্বীকার করেছেন। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা যা বলে থাকেন, তিনিও তাই বলেছেন। নির্বাচন প্রচারের সময়, বিভিন্ন স্তরের বহু মানুষ তাঁদের সাথে দেখা করেন। তবে এই ব্যক্তি বা কোনো জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর মনে নেই। তাই তার সাহায্য নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ক্যাডার এবং জনসমর্থনের জোরেই তাঁরা নির্বাচনে জিতেছেন, বলেছেন রাম মাধব।

 

একদিকে কুকি-মিজো-জোমি অন্যদিকে মৈতেই সম্প্রদায়। এই দুই পাহাড়ি উপজাতিগোষ্ঠির মধ্যে জাতিবিদ্বেষ,  বিজেপি আমলে হিন্দু খৃষ্টান দাঙ্গায় পর্যবসিত। হিন্দু মৈতেইদের আর খৃষ্টান কুকিদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে একদিকে হিন্দু আধিপত্য প্রতিষ্ঠা আর কুকি-নাগাদের হাত থেকে চোরাচালানের আধিপত্য ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা ব্যকফায়ার করেছে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার ছক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মণিপুরে তথাকথিত জাতিদাঙ্গা যখন তুঙ্গে আর নরেন্দ্রমোদী তাঁর স্বভাবসিদ্ধ নির্লিপ্তি ও উদাসীনতার ভান এবং মৌনতা বজায় রেখে ইসরায়েলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। পাশাপাশি এটাও জানা জরুরি, সূদূর ভারতবর্ষের মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সংঘর্ষ ও হিংসার বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে নিন্দাপ্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ট পাশ্চাত্য জনগণের ক্রমবর্ধমান চাপ অস্বীকার করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ইইউ পার্লামেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলাকালীন রেজোলিউশনে এই ভয়াবহ হিংসাকে "হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে প্রমোট করার বিভাজনমূলক নীতি" বলে অভিহিত করা হয়েছে।

 

যদিও ডিপ্লোম্যাটিক প্রথা অনুসারে ভারত মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সংঘর্ষের বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবের নিন্দা করেছে এবং এটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে "হস্তক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু খৃষ্টান সংখ্যাগুরু পাশ্চাত্য দেশগুলিকে ক্ষেপিয়ে দিয়ে টিঁকে থাকা অসম্ভব এটা বিশ্বগুরুও বোঝেন। উত্তরপূর্ব ভারতেও মিজোরাম মণিপুর নাগাল্যাণ্ডে জনমানসে এখন সবচাইতে বাচাল, অকর্মণ্য মানুষটির নাম নরেন্দ্র মোদী। দলেও। অতএব ড্যামেজ কনট্রোল চলে। হিন্দুত্ববাদী টিম মাঠে নামে। দু মাস ধরে চেপে রাখা দুজন কুকি মহিলাকে নগ্ন করে প্যারেড করানোর ভিডিওটা প্রকাশ্যে এনে ভাইরাল করা হয়। মোদী দু লাইনের বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব সারেন। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে  মণিপুরে জিরো এফ.আই.আর এর সংখ্যা ১১৪১৪। ৬৫২৩ এর উপর নিয়মিত এফ.আই.আর দায়ের হয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টে মণিপুরের বিজেপি সরকারের দাখিল করা ধর্ষণ ও হত্যার কেস মাত্র ১টি। অথচ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে কমপক্ষে এরকম ৭টি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব মৈতেই কাউন্সিলের সহসভানেত্রী দিনা মাইবালাংপামও বলেছেন প্রকৃত হিসেবে সংখ্যাটা ১০০০ ছুঁয়ে ফেলতে পারতো, কিন্ত প্রমাণাভাব। ১৮০ এর উপর নিহত, ৩০০ এর উপর আহত এবং ৬০০০০ এর উপর গৃহচ্যূত। তবু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বংসহা ভারতীয় গণতন্ত্র মৌন ছিল। কুকি মহিলাদের উপর অসংখ্য ঘৃণ্য অত্যাচারের অভিঘাত এতই তীব্র যে প্রতিটি ভারতবাসীর শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্কের হিমেল স্রোত বয়ে যাবার কথা ছিল, যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর নাটকীয় স্বরক্ষেপণে একটি শব্দও উচ্চারিত হয় নি। অথচ এই ঘটনাগুলিও মহিলাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনা। ভারতীয় বিবেক তবে কি নারীর শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের ঘটনাতেই শিহরিত হয়? হত্যায় নয়? সনাতনী ভারতে তবে কি পুরুষতান্ত্রিক ধ্বজাই উড়বে উল্লাসে?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment