তুলোর বলের মতো মুরগির বাচ্চার দল। কুয়োতলায় বালতি । পাশে লাল জবার গাছ। জবা গাছের ওদিকটাতে এক জোড়া বলদ জাবনা খাচ্ছে। তারপর বুনো ঝোপঝাড়। সদর বলে আলাদা করে কিছু নেই। তবু বাড়িতে প্রবেশের পথ যেটা সেখানে একটা অর্জুন গাছ। তার নীচে খাটিয়াতে বসে আছে এক বয়স্ক মহিলা। বাড়িতে মানুষ বলতে ইনি ছাড়া আর কেউ নেই ।
এতটুকু দেখেই হাত নিশপিশ করে উঠছিলো তমালের। তমাল নেশার ফোটোগ্রাফার। কলকাতা থেকে ছুটে আসে পুরুলিয়া বারবার ছবি তোলার নেশাতে। পুরুলিয়ার পথে ঘাটে আনাচেকানাচে ছবির সাবজেক্ট। মেঠো মানুষ । শুনশান রাস্তা । সবুজে মোড়া অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তাঘাট বাঁক। ফলস। পলাশে মোড়া ফাল্গুন । এ সব এখন পুরানো হয়ে গেছে। আগে পুরুলিয়া বলতে মানুষ বুঝতো মাওবাদী। এখন আর তা বোঝেনা। ফলে টুরিষ্ট বেড়েছে। আর বেড়েছে ছবি। কিন্তু এইসব পলাশ, আদিবাসী আর অযোধ্যা পাহাড়ের ছবি এতো বেশি হয়ে গেছে যে তার আর কদর নেই। এখন কদর অন্যকিছুর। যেখানে অফবিট কিছু থাকবে। জীবন থাকবে । থাকবে কাহিনী। তাই তমাল এবার বেছেচে প্রত্যান্ত গ্রাম।
এই গ্রামের সন্ধান দিয়েছে তার এক বন্ধু। অনাদি মাহাতো। তার ফেসবুক বন্ধু। অনাদির সাইকেল মোটরসাইকেল মেরামত করে। ছোট একটা আছে তার পুরুলিয়াতে। তখন প্রথম বার তমাল এসেছে পুরুলিয়া সাথে তার বন্ধু অবীন। অবীনের বাড়ি আসানসোল । তাকেই ধরে নিয়ে এসেছিলো পুরুলিয়া বাইকে। পুরলিয়াতে এসে বাইক খারাপ হয়ে যায়। সেই সুত্রে পরিচয় হয় অনাদির সাথে। অনাদির বয়স কম। বাইক মেরামতি করতে করতে অনাদির ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে। তারপর থেকেই অনাদি তমালের ফ্যান।এই জন্যতো পুরলিয়ার মানুষ কে এতো ভালো লাগে তমালে। এরা এতো অল্পে খুশি হয়।
তমাল মোবাইল ফটোগ্রাফার নয়। তার হাতে আছে দামী ক্যামেরা। তার তোলা ছবির কদর আছে। ফেসবুকে শেয়ার হয় প্রচুর । প্রচুর লাইক আর কমেন্ট। সেরা ছবি পুরস্কার পেয়েছে অনেকবার। তার জন্য তার মেহনত কম হয় না ।
উঠোনটায় এতোগুলো ছবির সাবজেক্ট পেয়ে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলো না সে। ফটাফট ছবি তুলতে শুরু করলো। পায়রা। জ্বলন্ত চুলা। উপচানো ভাতের ফ্যান। দেওয়ালের নক্সা। বয়স্ক ভদ্র মহিলা। মহিলার বয়স কত হবে আন্দাজ করতে পারেনা সে। কিন্তু কি যেন আছে তার মুখে। পাথরের মতো বসে আছে পা ছড়িয়ে। মাথার চুল ন্যাড়া করা। চোখের চামড়া ঝুলে গেছে চোখের উপর। একদিকে চেয়ে তমালের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু তমাল বুঝতে পারছে না তমালকে দেখছে কি না। এমন সাবজেক্ট কত দিন পাইনি সে। অনাদি এতো ভালো জায়গার সন্ধান দিয়েছে । তমাল বুঝতে পারছিলো কয়েকদিন তার ছবিতেই বাজার কাঁপবে। কয়েক্টা বেস্ট ছবি রেকে দেবে বিক্রির জন্য। তারমধ্যে এই মহিলার ছবিও।
কতরকম ফ্রেম বানাচ্ছে তমাল । পুরো গ্রামটায় ঘুরে দেখবে আজ সে। ফিরতে যদি রাত হয় তবুও ভালো। একা একা ছবি তুলতে বেরোনোর এই সুবিধা। কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কারো সাথে সাবজেক্ট শেয়ার করতে হয় না। একেবারে নিজস্বতা থাকে। আরো একটা সুবিধা হলো ছবি ভাগ করতে হয় না। এই তোলাছবি ভাগ করা নিয়ে কম ঝামেলা হয়েছে সবার সাথে। অবীনের সাথেই এই নিয়ে কি ক্যাচাল। ফেসবুক আর ফোনে ব্লক করে সম্পর্ক শেষ হয়েছে।
এই ছবি তাকে বিখ্যাত করেছে। না হলে কোনরকমে কলেজ পাশ, কাপড়ের দোকানদার তমালকে কে চিনতো ! তাই ছবিতোলা নিয়ে সে খুব সিরিয়াস। সে কাউকে শেয়ার করে না সে কিভাবে ছবি তোলে ! কোন গ্রামের ছবি তোলে । কিভাবে যায় সেখানে। সব যদি বলে দিলে পঙ্গপালের মতো এসে জুটবে সবাই। তার নিজের ছবির বৈশিষ্ট্য কি থাকবে আলাদা করে।
অবিন মাথামোটা । মাথামোটা না হলে ওমন রেয়ার পিচকার কেউ ফেসবুকে দেয়। তাও আবার পাবলিক ফিচারে ! ফেসবুকে কি পরিমাণ যে কনটেন্ট চুরি হয় তা কি সে জানেনা !
সেইবার ঝাড়গ্রামের এক গ্রামে তারা গিয়েছিলো । আসলে গিয়েছিলো বলা ভুল । বাইক নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলো। কিছু ইউনিক ছবির খোঁজে অচেনা পথ ধরেছিলো তারা। শাল বনের জঙ্গল । নিবিড় সবুজ অরন্যভূমি। মাঝে সোজা পিচ রাস্তা। একটা সময় গিয়ে একটা ছোট রাস্তা ভাগ হয়ে যায় । লাল মাটির সেই রাস্তা তারা ধরে। ফেরার সময় পথ হারিয়ে ফেলে তারা। জনশূন্য রাস্তা কাউকে দেখা যায়না । এমন কি কোন সাইকেল বা বাইক আরোহী নেই। এমন অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে তারা পৌঁছে যায় এক ছোট্ট গ্রামে। গ্রামতো নয় যেন স্বপ্নপুরী। ছোট টিলার কোলে গ্রাম । বড় বড় পাথরের পাশে ছোট ছোট মাটির ঘর। বড় জোর কুড়িটা পরিবার হবে। লাল শালুকের পুকুর। শয়ে শয়ে ফুটে আছে শালুক পুকুর আলো করে। অনেকক্ষণ বসার পর পাঁচ ছয় বছরের মেয়েকে দেখতে পায় তারা। নাকে সিকনি। রুক্ষ লাল চুল। আজকালের মধ্যে চিরুনী পড়েনি। পরণে কেবল প্যান্ট। বুকের পাঁজরা গুলো গোনা যায়। অবিন তাকে ডাকে - এই মেয়ে শোন । তোর নাম কি ?
মেয়েটি দূরেই দাঁড়িয়ে থাকে। কথাও বলেনা।
- ভয় নেই । শোন ।
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। গড়পড়তা আদিবাসীদের চেয়ে ঈষৎ ফর্সা রং। নাকটা চাপা। চোখ ছোট। লাল চিরুনী না করা রুক্ষ চুল গুলো মুখের চারপাশে ছড়িয়ে ছিলো। অভুক্ততার ছাপ স্পষ্ট । মেয়েটিকে দেখেই তমালের আঙুল নিশপিশ করছিলো। কি ভালো সাবজেক্ট। একেবারে অরিজিনাল। কোন মেকাপ নেই। কোন খাদ নেই দারিদ্র্যতায়, সরলতায়। চোখের দৃষ্টি কি পরিস্কার। তাতে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে। ভয় থেকে কৌতুহল। কৌতুহল থেকে সন্দেহ। সন্দেহ থেকে জিজ্ঞাসা । জিজ্ঞাসা থেকে ভয়।
অবিন ব্যাগ থেকে বিস্কুটের প্যাকেট বের করলো। সাথে একটা কাপকেক । মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো - নে। তোর জন্য। খিদে পেয়েছে তোর ?
মেয়েটি ছোঁ দিয়ে প্যাকেট নিয়ে দূরে সরে গেলো আবার। প্যাকেটটা ধরে টানাটানি করছে কিন্তু খুলতে পারছে না। অবিন বলল - ভয় পাচ্ছিস কেন ? দে খুলে দি।
মেয়ে বিস্কুট খাচ্ছে। অল্প বিস্কুটের গুঁড়ো লেগে আছে মুখে। খেয়াল করেনি অবিন , দেখেনি মেয়েটাও । তমালের ক্যামেরা রেডি হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। ক্ষুধার কি অপরূপ তীক্ষ্ণতা ! কি আগ্রাসন ।
নিমেষে শেষ বিস্কুট। কেকও। মেয়েটার চোখে একটু আলো তখন।
- বাবা মা কোথায় তোর।
কিছু একটা বলল মেয়েটি। কিন্তু তারা বুঝতে পারলো না। তাদের অভিজ্ঞতায় জানে আদিবাসী গ্রামগুলোতে দুপুর বেলায় কোন মেয়ে মরদ থাকে না। সবাই যায় কাজে। সন্ধ্যায় এসে ভাত চাপায়। সেই ভাতই পরেরদিন সকালে খেয়ে বেরিয়ে যায়। একটু খানি লায়েক হলেই দল বেঁধে চলে যায় শহরে সব সোমত্ত পুরুষ বা কয়লা খাদানে।
অবিন বলে - স্কুল যাস ?
মেয়েটি ঘাড় নাড়ায়, না।
- কেন ?
- স্যার আসেনা। আগে আসতো । তখন যেতাম।
- স্কুল কোথায় ?
মেয়েটি হাতদিয়ে দিক নিদর্শন করে। যেদিকে তাকালে একটা বিরান মাঠ দেখা যায়।
- ওই দিকেতো মাঠ। স্কুল কোথায় ?
- আছে । মাঠ পেরোলি।মাঠ পেরুলি ইস্কুল।আর কুনো রাস্তা লায়।
- তোর গ্রামের নাম কি জানিস ? শহরে যাবার রাস্তা কোনদিকে জানিস ?
মেয়েটা আবার একদিকে হাত দেখায় । ওইদিকে একটা সরু রাস্তা দেখা যায় বটে কিন্তু আদৌ কি তা বড় রাস্তায় যাবে !রাস্তার পর শাল গাছের মাথা দেখা যায় কেবল।
মেয়েটি উশখুশ করে অবিন বুঝতে পারে। ক্যামেরা দেখায়, বলে ছবি তুলবি ?
মেয়েটা ঘাড় নেড়ে সায় দেয়।
তমাল বলে - জলে শালুক তুলতে পারিস ?
মেয়েটা দাঁত বের করে হাসে । সামনের একটা দাঁত নেই। চোখে তমালের প্রতি অবজ্ঞা। বলে - ক্যান পারবক লায়। আজই তুল্যাছি । সকালে। মা সালুন রাঁধবে বলে।
মেয়েটার হাতে ডাটা সহ শালুক ফুল। কতভাবে ছবি তুলছে তমাল। অবীন একটু দূরে ছায়াতে বসে। বড় ক্লান্ত লাগছে । তমালের ছবি তোলার বাড়াবাড়ি লাগছে। মেয়েটার মুখ অসহায়। পুতুলের মতো পোজ দিচ্ছে। তমাল তাকে বলেছে তাকে পয়সা দেবে। মেয়েটির মুখে ঘাম । কিন্তু পয়সার লোভ অস্বীকার করতে পারেনা সে।
মেয়েটার ছবি যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছিলো তমাল কোন বড় পুরস্কার এর জন্য বা বড় কোন শো এর জন্য। কিন্তু অবিন ফেসবুকে দিয়ে দেয়, ক্যাপশন দেয় - অচিনপুরের রাজকন্যা । যদি তোদের জন্য কিছু করতে পারতাম !
এরপরই তমালের সাথে অবীন ঝামেলা শুরু, শেষ হয় ব্লকিং এ গিয়ে।
এক ঝুড়ি শাকপাতা নিয়ে বাড়িতে ঢোকে একটা বৌ । এই বাড়ির বৌ। তমালকে দেখে, কিন্তু কিছু বলে না। হাঁড়ির ভাত টিপে দেখে।
তমাল ডাকে - এই যে শুনছেন ?
- বাড়িতে ব্যাটাছেলা নায়। আপনি পরে আসেন। মহিলাটি মুখ না ফিরিয়ে উত্তর দেয়।
- না । ব্যাটাছেলে লাগবে না। আপনার সাথে কথা বললেও হবে।
- বলক থেকে আসিছেন ? মহিলাটির মুখে কৌতুহল।
তমাল বুঝতে পারে সরকারি কোন ব্যাপার হলে তবেই কথা বলবে। কিন্তু এখানের ব্লক অফিস কোথায় তাই জানেনা সে। মুহুর্তে মাথায় বুদ্ধি খেলে যায় ।
বলে ব্লক থেকে আসিনি। আমি রিপোর্টার । কলকাতা থেকে এসেছি। আপনাদের গ্রামের কথা জানাবো । কি চাই, কি কি অসুবিধা ।
মুহুর্তে মহিলাটি এগিয়ে আসে। একটা সবুজ চেয়ার বের করে দেয় ।
- বসেন। মেম্বারতো ওইদিকে থাকে । বসেন ডাকি দিচ্ছি।
তমাল শুধু এই মহিলাকে চাই। তার ছবি তুলতে হবে। তার ঘর গেরস্থালীর ছবি। এতো লোকজন এলে কেমন করে হবে ছবি তোলা।
তমাল বলে - না না ডাকতে হবে না। আপনি কথা বলেন। কি কি সমস্যা। আমি সবার বাড়ি গিয়ে কথা বলবো। আর ছবিও তুলতে হবে। আপনাদের ঘরদোর কেমন। বলেন কি কি সমস্যা।
মহিলা যেন অথৈ জলে পড়ে। বলে - সমস্যাতো কিছু লায়। সমস্যা আবার কি। মেঘ জল হতিছে না। মাঠে ধান গুলান শুক্যাঙ য্যাচে।
- ঠিক আছে। আপনি আপনার কাজ করেন । আমি ছবি তুলি কয়েকটা।
মহিলাটি বলে - এই কাপড়ে। একখান তোলা শাড়ি পিন্ধ্যা আসি ?
তমাল হেসে ফেলে । বলে - নতুন শাড়ি পরলে লোকে দুঃখ বুঝবে কি করে ।
মহিলাটি ভাতের হাঁড়িতে ভাত রাঁধে। একগলা ঘোমটা টেনে।
তমাল মনেমনে গালাগাল দেয় - ব্লাডি..! ঘোমটা দেয় আবার। সাঁওতাল বৌ কখনো ঘোমটা দিয়ে রাঁধে ! ছবি ন্যাচারাল হচ্ছে না। ক্যামেরা আর মিডিয়া বললে যে লোকে কি ভাবে । ডিসগাস্টিং।
ততক্ষণে লোক জুটে গেছে অনেক। সবাই জেনে গেছে মিডিয়ার লোক । গ্রামের দুঃখ দুর্দশার ছবি তুলতে এসেছে। তাকে ঘিরে ধরেছে সবাই। সবার বাড়ির ছবি তুলতে হবে।
ভাদ্রের রোদ গরম। সকাল থেকে ছবির নেশাতে খাওয়া হয়নি কিছু। সাথে একগুলো লোক। নিজের ফাঁদে পড়ে গেছে নিজেই।
সবার ছবি তুলতে গেলে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে। আর যে ছবি হবে তা কোন শিল্পমূল্য হবেনা। কি করবে বুঝতে পারছে না সে।
তবু বলল - যা ছবি নিয়েছি তাতেই হবে। আমি আপনাদের গ্রাম ঘুরে দেখেছি।
- তা বললে হবেক লায়। সবার ঘরে যাতি হবে বটেক। নালি ছাড়ান নাই।
কতকিছুর ছবি তুলতে হয় তাকে। পানা ভর্তি পুকুর। হ্যান্ডেল ভাঙা টিউবওয়েল । এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা। স্কুলের বাথরুম।
বেলা প্রায় পড়ে আসছে। ফিরতে হবে। খেয়াল করে তার সাথে ক্যামেরা আছে কিন্তু ব্যাগটা নাই। বুকটা ধড়াম করে উঠে। টাকা হাজার খানেক আছে, কিন্তু সাথে দুটো ব্যানকের এটিএম, ভোটার কার্ড। সাথে কয়েকটি দামী লেন্স।
সর্বনাশ ! গোলযোগের মধ্যে কোথায় যে পড়ে গেছে। কার বাড়ি যাবে সে এখন ! কাকে জিজ্ঞেস করবে।
হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ভাবে একটা পুলিশ থানায় ডাইরি করবে গিয়ে। তখুনি দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে ।
- মা ডাকতিছে আপনারে। তাড়াতাড়ি চলেন।
তমালের মাথা গরম হয়ে যায় । আবার মনেহয় ছবি তুলতে ডাকছে কেউ।
সে কথা না বলে হাঁটা দেয়।
মেয়েটি নাছোড় বান্দা ।
- কই যাইত্যাছেন। ঠাকমা বুলিছে আপনাকে লইয়া যাতি। আমি ছাড়ুম না। আরে আপনি পথুম যে ঘরে বসি ছিলেন, সেই ঘরকে আসছি। আপনার বড় রাস্তা উঠাঙ দিবো। সাইকেল আছে। বাস পায়ি যাবেন।
পথ আগলে দাঁড়ায় মেয়েটি। মুখে কথার ফুলঝুরি ।
তমাল অর্জুন গাছের নীচে এসে দেখে। বয়স্ক মহিলার খাটিয়ার পাশে আরেকটা খাটিয়া পাতা। বিছানার চাদর পাতা তাতে।
বাড়িত কর্তা এসে গেছে ততক্ষণে। সেই এগিয়ে এলো ।
- কুয়োপারে জল রেখেছি। একটু হাতমুখ ধুয়ে নিন। মা বলল সকালে আসিছেন গ্রামে। সারাদিন খাননি। আপনার ব্যাগখান ও আছে। ভুলে গেছিলেন মনেহয়।
মোটাচালের ভাত। ভাতের পাশে শাক। লঙ্কা পেঁয়াজ। আর একটা ডিমের ওমলেট।
তমাল গ্রাস তুলছে। কিন্তু গিলতে পারছে না। গলায় কাছে কি যেন আটকে গেছে। কান্না মনে হয় !
গল্পটি প্রদর্শিকা পত্রিকায় প্রকাশিত