পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ফতোয়া

  • 12 October, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 332 view(s)
  • লিখেছেন : নির্মলেন্দু কুণ্ডু
পুজো শেষ হয়েছে, কিন্তু পুজোর রেশ এখনও আছে। এবারের সহমনের গল্পে থাকলো সেইরকম একটু ছোঁয়া। আজকের সহমনের গল্প ফতোয়া লিখলেন নির্মলেন্দু কুণ্ডু।
—"কী বলছো মা? ওকে আবার এ' বাড়িতে আনতে চাও কেন? না,না,তা হবে না৷ তোমার না থাক,আমার তো একটা প্রেস্টিজ আছে পাড়ায়!"
 
ছেলের আপত্তিতে আরো একবার থমকে দাঁড়ান সুমনা দেবী৷ তাঁর একে একে মনে পড়ে যায় পুরনো কিছু স্মৃতির কোলাজ৷
 
দুই ছেলে-মেয়েকে রেখে ওদের বাবা যখন মারা যান,সুমনা দেবী তখন শক্ত হাতে সামলেছিলেন সব কিছু৷ ছোট ছেলেকে মানুষ করা,সংসার সামলানো,ওদের বাবার পেনশন-প্রভিডেন্ট ফান্ডের খোঁজখবর নেওয়া—সবই করেছেন৷ অবশ্য ওঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেছে ওঁর মেয়ে সুমি৷ বরাবরের মেধাবিনী সুমি ছিল বিচক্ষণ৷ তাই বুঝেছিল সব দায়ভার মার কাঁধে ফেলে দিলে চলবে না৷ তাই ক্লাস টুয়েলভ থেকেই নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি দুয়েকটা টিউশন করে পড়ার খরচ তুলতো ও৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাতে রাজী হতে হয়েছিল সুমনাদেবীকে৷ কিন্তু প্রাইভেট টিউশনের ক্ষেত্রেও সবাই এখন স্কুল-টিচারকেই খোঁজে৷ তাই সুমিকে প্রায়ই বাড়ি থেকে বের কিছুটা দূরে পড়াতে যেতে হত৷ সেদিন ছিল মহাপঞ্চমী ৷ছাত্রকে পড়িয়ে আর পুজোর ছুটির পড়া দিয়ে বেরোতে একটু রাতই হয়ে গিয়েছিল সুমির৷ বিশ্বাসপাড়া থেকে তাদের বাড়ি যেতে একটা মাঠ পেরোতে হত৷ মাঠেই হত তাদের গ্রামের একমাত্র পুজো৷ আয়োজন করতো ক্লাবের কিছু ছেলে৷ তবে ওদের খাজনার চাইতে বাজনা ছিল বেশি৷ দায়সারাভাবে পুজো সেরে মদ-জুয়ার আড্ডা বসানোই ছিল ওদের প্রধান লক্ষ্য৷ সেবারও তাই হয়েছিল৷ ওরা তখন প্যান্ডেল করছিল৷ হঠাৎ ওদের চোখ পড়লো সুমির দিকে৷ তাড়াতাড়ি করে জায়গাটা পেরোতে চেয়েছিল সুমি৷ কিন্তু অতগুলো নরপশুর সঙ্গে ও একা পারবে কীভাবে!
 
ঘটনার পর সালিশি সভা বসেছিল পাড়ায়৷ এরকম অশুচি মেয়েকে পাড়ায় রাখা উচিৎ নয় বলে রায় দিল মাতব্বরেরা৷ কেউ কেউ ডে কেয়ার হোমের ঠিকানাও দিল৷ অসহায় সুমনাদেবীর সব অন্যায় দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায়ও ছিলনা৷ নইলে এ' অবস্থায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় দাঁড়াতেন তিনি৷ তার চেয়ে বরং ওসব হোমে থাকলে তিনি গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতে পারবেন৷
 
প্রথম কয়েক বছর সেভাবেই চলছিল৷ সুমি বারবার বলতো ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার কথা৷ কিন্তু ফতোয়ার কথা ভেবে সুমনাদেবী আর রা কাটতেন না৷ এ বছর উনি চাইলেন মেয়েটাকে ঘরে আনবেন৷ ইতিমধ্যে ছেলে বড় হয়েছে,চাকরি করছে,সেই সূত্রেই শহরে উঠে এসছেন তাঁরা৷ তাই সেই ফতোয়া আর নেই৷ কিন্তু ছেলেকে কথাটা জানাতেই ছেলে দু' কথা শুনিয়ে দিল৷
 
সেদিন মহাষষ্ঠী৷দেবী দুর্গার বোধন৷ মা উমা ফিরে আসছেন ঘরে৷ অথচ তাঁর উমা এবারও আসতে পারলো না ঘরে৷ বোধহয় আর পারবেও না! নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগলেন সুমনাদেবী৷
 
0 Comments

Post Comment