পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সেঙ্গল,রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্রের অতিকথা

  • 01 June, 2023
  • 1 Comment(s)
  • 1338 view(s)
  • লিখেছেন : সুমন কল্যাণ মৌলিক
নতুন সংসদ ভবনের উদ্ধোধনের সময় থেকেই আমরা সেঙ্গল শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। নানান কথা শোনা যাচ্ছে, তার কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে এবং এই শব্দের সঙ্গে হিন্দু রাষ্ট্রের কি সম্পর্ক? ইতিহাস কী বলে?

 

নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনকে ঘিরে চলমান বিতর্কের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে রাজদণ্ড ( কারো কারো মতে ন্যায়দন্ড) সেঙ্গেলকে মহামহিম ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থানে বসানো সংক্রান্ত বিবাদ।এই বিবাদের উপাদান হিসাবে রয়েছে সেঙ্গেলের অতীত ইতিহাস,ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এই বিশেষ প্রতীকটির গুরুত্ব এবং অবশ্যই হিন্দু হৃদয় সম্রাট নরেন্দ্র মোদির প্রকল্পিত স্বপ্নের ভারতবর্ষের তুঙ্গ মুহূর্তে এই প্রতীকটির পুনরায় স্থাপন জনিত মাহাত্ম্য। এই নিবন্ধে সেঙ্গল সম্পর্কে প্রচারিত তথ্যসমূহকে প্রমাণের কষ্টিপাথরে যেমন যাচাই করার চেষ্টা হয়েছে তেমনি আজকের ভারতবর্ষে মহাসমারোহে এবং যাগযজ্ঞের মাধ্যমে সেঙ্গলকে প্রতিষ্ঠা করার যে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে তাকেও খুঁজে দেখার প্রয়াস রয়েছে।

সেঙ্গল: হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি ও গোদি মিডিয়ার আখ্যান

প্রথমে একটা কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেঙ্গল নামক এই রাজদণ্ডটি এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল-- এ রকম তত্ত্ব এতদিনের ইতিহাস চর্চায় একদম অনালোচিত ছিল। সহজ কথায় বললে সেঙ্গল সম্পর্কে যে সমস্ত তথ্য  আলোচিত হচ্ছে তা এইসময়ের ' অর্জন '। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা তথ্যগুলো পয়েন্টের এক এক করে সাজিয়ে নেওয়া জরুরী।

* সেঙ্গল কথাটি তামিল শব্দ ' সেম্মাই' থেকে এসেছে যার অর্থ ন্যায়পরায়ণতা। পাঁচ ফুট লম্বা এই দন্ডটির মাথায় আছে ' নন্দী' যা হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী ন্যায়ের প্রতীক।

* দক্ষিণ ভারতে চোল রাজত্বে ক্ষমতার হাত বদলের সময় ( রাজ্যাভিষেকের সময়) এই দন্ডটি ব্যবহার করা হত।

* গল্পটা হল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যখন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন হিসাবে নির্দিষ্ট হল তখন লর্ড মাউন্টব্যাটন জওহরলাল নেহেরুকে জিজ্ঞাসা করেন কিভাবে ও কোন প্রতীকের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করা হবে! উত্তর খুঁজে না পেয়ে নেহেরু প্রবীণ কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর সঙ্গে পরামর্শ করেন।গোপালাচারী তাঁকে চোল সাম্রাজ্যে প্রচলিত এই সেঙ্গল নামক রাজদন্ডটির কথা বলেন।

* নেহেরু সম্মতির পর রাজাগোপালাচারী তৎকালীন মাদ্রাসা প্রেসিডেন্সির থিরুভাদুথুয়ারি অধিনাম সম্প্রদায়ের নেতাদের একটি নতুন সেঙ্গল তৈরি করার কথা বলেন। অধিনামরা চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন সেঙ্গল বানানোর বরাত দেন স্বর্ণকার ভুমিদি বাঙ্গারু চেট্টিকে।

* রুপো দিয়ে তৈরি ও সোনার জলে মোড়া এই দন্ডটি ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে অধিনামের এক তামিল পুরোহিত প্রথমে দন্ডটি লর্ড মাউন্টব্যাটনের হাতে তুলে দেন।তারপর সেটা তার থেকে ফেরত নিয়ে গঙ্গাজলে ' পবিত্র ' করে জওহরলাল নেহেরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।এইভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

* নেহেরু বা ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এই ' পবিত্র ' সেঙ্গলকে যথাযথ মর্যাদা দেয় নি তাই তার স্থান হয় এলাহাবাদ মিউজিয়ামের একটা কোণে।এমনও অভিযোগ রয়েছে যে নেহেরু না কি ওয়াকিং স্টিক হিসাবে এই রাজদণ্ডটি ব্যবহার করতেন।

* নতুন ভারতের এই অমৃতকালে নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার সেঙ্গলের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্য যথাযথ ভাবে উপলব্ধি করে তাকে গণতন্ত্রের বেদী অর্থাৎ নতুন সংসদ ভবনে স্পিকারের আসনের পাশে স্থাপিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই স্থাপনাকালে সমস্ত ধর্মীয় প্রথা মেনে যাতে রাজদণ্ডটি বসানো যায় তারজন্য অধিনামের একত্রিশ জন সদস্যকে চার্টাড প্লেনে চেন্নাই থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে এবং যে স্বর্ণকারের টিম ঐ সেঙ্গলটি তৈরি করেছিলেন তাদের দুজন সদস্যও এই সমারোহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন।

 

সেঙ্গল: তথ্য ও প্রমাণের আলোকে

 

সেঙ্গল সংক্রান্ত বিতর্কে মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন গল্পের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা এক ' তথ্যমালা '। আমরা এই পর্বে এই তথ্যমালার সত্যাসত্য নিরুপণ করার চেষ্টা করব। তবে তার আগে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনাক্রমটা আরেকবার দেখে নেব।লর্ড মাউন্টব্যাটনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত বিলটি পাশ হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই তা রাজকীয় সন্মতি লাভ করে।এরপর ঘটে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে সংবিধান সভায় ক্ষমতা হস্তান্তর।

একথা সবার জানা ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে দেশজোড়া দাঙ্গা,ক্ষমতা হস্তান্তরের একাধিক পরিকল্পনা, দেশভাগের যন্ত্রণা -- কোনটাই প্রাচীন ও মধ্যযুগের ঘটনা নয়।এই সময়টাকে নিয়ে অজস্র বই,প্রতিবেদনে, ডকুমেন্টারি রয়েছে।সেঙ্গল বিতর্কে এই কথাটা কেউ বলছেন না যে সেঙ্গল বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না,প্রশ্নটা হল অমিত শাহ যে কথাটা বলছেন অর্থাৎ ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেঙ্গল সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজদন্ড হিসাবে ব্যবহার হয়েছিল  না কি সেইসময় জওহরলাল নেহেরুকে বিভিন্ন ধর্মগুরুরা যে সমস্ত আশীর্বাদ বা উপহার দিয়েছিল, সেঙ্গল তাদের মধ্যে একটি মাত্র!

১৯৪৭ সালের ২৫ আগস্ট টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় কালীন বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।প্রতিবেদক লিখেছেন যে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেবার আগে জওহরলাল নেহেরু বিভিন্ন ধর্মগুরু ও ধর্মীয় সম্প্রদায় দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।একটা অনুষ্ঠানের উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গার ধর্মগুরুরা বাঁশি ও ভেরি বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে জওহরলাল নেহেরুর ব্যক্তিগত বাসস্থানের দিকে যাচ্ছিল।সেই প্রতিবেদনে আরো অনেক কিছুর সঙ্গে সেঙ্গল নামক রাজদণ্ডটির উল্লেখ আছে-- "One sannyasi carried a scepter of gold, five feet long,two inches thick.He sprinkled Nehru with holy water from Tanjore and drew a streak in sacred ash across Nehru's forehead. Then he wrspped Nehru in the pithabharam and handed him the golden scepter"।

এই সময়কার আরেকটি গ্রন্থ ডি.এফ.কারাকার রচিত 'Betrayal in India' তে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যতই স্বাধীনতা এগিয়ে আসছিল ততই নেহেরুর ধর্মগুরুদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার ধূম বাড়ছিল। এই বইতে ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের নিউ দিল্লি গার্ডেনের বাড়িতে উত্তর ভারতের ধর্ম গুরুদের করা এক বিশাল যজ্ঞের কথা বলা হয়েছে।এই যজ্ঞ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে মধ্যরাতে মন্ত্রী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সংবিধান সভায় প্রবেশ করেন।ডোমিনিক লাপিয়ের ও ল্যারি কলিন্সের বহু আলোচিত গ্রন্থ " Freedom at Midnight " এ উল্লেখ করা হয়েছে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর হওয়া সত্বেও নেহেরু আনন্দের সঙ্গে ধর্মগুরুদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।ইয়াসিন খানের 'The great Partition' এ উল্লেখিত পর্যবেক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ -- ' handover of the sceptre took place at a private residence as part of the celebration and not as an official ceremony '।

এই আখ্যানের প্রধান দুই চরিত্র হল জওহরলাল নেহেরু ও চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী।কিন্তু তাদের রচনা ও চিঠিপত্রে সেঙ্গলকে নিয়ে বা ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় রাজদণ্ড হিসাবে তার বিশেষ ভূমিকার উল্লেখ পর্যন্ত নেই। এ ব্যাপারে জওহরলাল নেহেরু নির্বাচিত রচনাবলীর সম্পাদক মাধবন কে পালাত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।প্রথমত ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভারত ছিল এক ডোমিনিয়ন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান লাগু হওয়ার পর ভারত এক সার্বভৌম দেশ হিসাবে পরিগণিত হয়।তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সাংবিধানিক ভাবে এক রাজদণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের গল্পের কোন সারবত্তা নেই। দ্বিতীয়ত  যদি প্রতীক হিসাবে সেঙ্গলকে ব্যবহার করে মাউন্টব্যাটেন জওহরলালকে ক্ষমতা অর্পণ করতেন তাহলে সেসময় এটা দারুণ ভাবে সংবাদপত্রে খবর হত।আর তাছাড়া একটা ধর্মীয় মঠের প্রধান বা তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে…

এমনকি যত সময় যাচ্ছে তত আদৌ কি রাজাগোপালাচারী অধিনামদের সেঙ্গলের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন না কি তামিল ব্রাহ্মণেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই উপহার তুলে দিয়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। দ্রাবিড় আন্দোলনের জনক,ডিএমকে দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাই এর সেঙ্গল বিষয়ক একটি লেখার সন্ধান পাওয়া গেছে যা সেইসময়কার সাপ্তাহিক পত্রিকা ' দ্রাবিড়নাড়ু' (২৪.৮.১৯৪৭) তে প্রকাশিত হয়েছিল। আন্নাদুরাই অধিনামদের প্রশ্ন করেছেন এই সেঙ্গল দেওয়ার কারণ কি? এটা কি উপহার না কি অঞ্জলি না কি লাইসেন্স ফি! এই উপহার নেওয়ার জন্য আন্নাদুরাই পন্ডিত নেহেরুর নিন্দা করেছেন কারণ তার মতে এটা ধর্মীয় পুঁজির ব্যবসা।এই লেখার শেষ পর্বটি অসাধারণ -- "This Sengol sent to pandit Nehru is no gift offering or a symbol of love.Or for that matter,an expression of patriotism.It is a reques…

অমিত শাহদের সেঙ্গল সংক্রান্ত আরো দুটো বক্তব্য ইতিমধ্যেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বলা হয়েছিল ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সেঙ্গলটি এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সেটা মাদ্রাজ থেকে প্লেনে উড়িয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। ' দি হিন্দু' র ১৯৪৭ সালের ১১ আগস্ট প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে মাদ্রাজ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে ট্রেনে করে এক প্রতিনিধিদল রাজদন্ডটি নিয়ে দিল্লি আসছেন।আরেকটি অভিযোগ ছিল এলাহাবাদ মিউজিয়ামে এই ' পবিত্র ' দন্ডটিকে নেহেরুর ওয়াকিং স্টিক হিসাবে লেবেল করা হয়েছিল। এ বিষয়ে এলাহাবাদ মিউজিয়ামের প্রাক্তন কিউরেটর ডঃ ওনকার আনন্দ রাও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কখনো এই দন্ডটিকে ওয়াকিং স্টিক হিসাবে উল্লেখ করা হয় নি,লেখা ছিল এই স্বর্ন দন্ডটি উপহার হিসাবে জওহরলাল নেহেরু পেয়েছিলেন।

এত ক্ষণের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্টযে সেঙ্গলকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীকী দন্ড হিসাবে ব্যবহার করার সংঘ পরিবার তথা বিজেপি সরকারের দাবি নেহাৎই এক গল্পকথা।এই গল্প ইতিহাস নয় কেননা তা প্রমাণের পরিবর্তে বিশ্বাস নির্ভর। এই ধরণের অনৈতিহাসিক ইতিহাস নির্মাণ  বর্তমান জমানায় কোন নতুন কথা নয়।

 

সেঙ্গল: ভারতের সংবিধানের আলোকে

 

মহাসমারোহে সরকারি প্রচেষ্টায় সেঙ্গল নামক রাজদণ্ডটির পার্লামেন্টে স্থাপন আসলে যে ভিত্তিস্তম্ভগুলোর উপর ভারতীয় সংবিধান প্রতিষ্ঠিত তার উপর এক আঘাত।এই সেঙ্গলের গল্পটা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটিকেই অস্বীকার করছে।ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে বিলটি পাশ হবার পর সংবিধান সভায় ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের পেশ করা একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়-- "..  it should be intimated to the Viceroy that (1) the constituent assembly of India has assumed power for the governance of India and (2) the constituent assembly of India has endorsed the recommendation that Lord Mountbatten be governor general of India from August 15,1947। এই   ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সেঙ্গলের কোন যোগ থাকতে পারে না।

সেঙ্গল নামক রাজদণ্ডটির গল্পের উৎস হল দৈবী শক্তির তত্ত্ব। মাদুরাই এর মীনাক্ষী মন্দিরে এক তৈলচিত্র রয়েছে যার উপজীব্য হল দেবী মীনাক্ষী সেখানকার রাজার হাতে সেঙ্গল তুলে দিচ্ছেন এবং বার্তা দিচ্ছেন দেবীর প্রতিনিধি হয়ে এখন থেকে রাজা প্রজা প্রতিপালন করবেন।এই একই বিষয়ের আরেকটি ম্যূরাল রয়েছে রামনাথপুরমের রামলিঙ্গম বিলাসম প্যালেসে যেখানে দেবী রাজরাজেশ্বরী রাজা সেতুপতির হাতে রাজদণ্ড তুলে দিচ্ছেন। কোন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এই তত্ত্বের কোন স্থান থাকতে পারে না।একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার সেঙ্গল বা যে নামেই এই রাজদণ্ডকে ডাকা হোক না কেন,ভারতে এখনো পর্যন্ত রাজতান্ত্রিক শাসন নয়,গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে শাসিত হওয়া দেশ।এখানে আমরা সবাই নাগরিক এবং যাবতীয় ক্ষমতার উৎস সংবিধান এবং আরো বৃহত্তর অর্থে এ দেশের জনগন।তাই সেঙ্গল কেন পবিত্র ন্যায়দন্ড নয়, দেশের সংসদে তার কেন জায়গা থাকতে পারে না।

 

সেঙ্গল: হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণার আলোকে

 

সংবিধানের যাবতীয় ভাবনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে,ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে পদদলিত করে মহাসমারোহে হিন্দু ধর্মীয় আচরণ বিধি মেনে সেঙ্গল স্থাপন এবং একই সঙ্গে নয়া সংসদ ভবনের প্রায় সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে হিন্দু রাজাদের রাজ্যাভিষেকের সমতুল করে নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের বার্তা দিতে চেয়েছেন।অনেকে বলছেন তামিল জাত্যাভিমানকে উসকে দেবার জন্য সেঙ্গলকে এত গুরুত্ব সহকারে দেখানো হচ্ছে। কথাটা মিথ্যা নয়।একবছর আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চেন্নাইতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন সেঙ্গল পুনরুদ্ধার তামিলদের কাছে এক গর্বের বিষয়।কিন্তু এই বিষয়টাও হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবনার বাইরে নয়।সংঘ পরিবার যে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ভাবনার আলোকে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করতে চায় তার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক দ্রাবিড়ীয় ভাবনায় জারিত পরিচিতি সত্তার আন্দোলন। নির্বাচনী পাটিগণিতেও এই মুহূর্তে বিজেপি মুক্ত দক্ষিণ ভারত এক বাস্তবতা।তাই নানান  ভাবে দক্ষিণকে জয় করার জন্য সেঙ্গলকে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে।

সেঙ্গলকে পার্লামেন্টে স্থাপন এক বহুমুখী বার্তা।একথা আজ দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে সংবিধানের মূল অন্তর্বস্তুকে ধ্বংস করতে না পারলে হিন্দু রাষ্ট্র সম্ভব নয়।তাই আজ সেঙ্গল স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হল তেমনি প্রকল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রের চেহারাটা কেমন হবে তার এক নমুনা প্রদর্শিত হল। আরো বড়ো বিষয় হল সেই রাষ্ট্র যে সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হতে পারে তার ইঙ্গিত। ইতিমধ্যে সংঘের বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্বারা একথা বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে রাষ্ট্রপতি ভিত্তিক কেন্দ্রীভূত শাসনই ভারতের ভবিষ্যৎ, ফেডারেলিজম নয়।সেই ভাবনারই এক মহড়া দেখলাম নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে।কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাটাও ভুললে চলবে না যে ভারত রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে শাসকদের তরফে যে ' নরম' হিন্দুত্বের অনুশীলন চলছে ( উদার,যুক্তিবাদী বলে বিজ্ঞাপিত জওহরলাল নেহেরুও যার শরিক) , ভারতের সংবিধানের মধ্যে যে হিন্দুত্ববাদী ঝোঁক আছে,সংবিধানের মধ্যে যে সমস্ত অসমাধিত ও অস্পষ্ট বিষয় আছে সেগুলোকে ব্যবহার করেই কিন্তু সংঘ পরিবার তথা হিন্দুত্ববাদীদের আজ এত রমরমা।

তথ্যসূত্র: ১) সেঙ্গল ইন পার্লামেন্ট ( টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৫.০৫.২৩)। ২) দি মেনি হোলস ইন দি ইউনিয়ন গভরমেন্টস ক্লেম অ্যারাউন্ড সেঙ্গল( দি ওয়ার,২৬.০৫.২৩) ৩) দি সেঙ্গল ইস এ সিম্বল অফ ডিভাইন রাইটস টু পাওয়ার( দি ওয়ার,২৭.০৫.২৩)।  ৪) হোয়াট ডিএমকে ফাউন্ডার আন্নাদুরাই সেড অ্যাবাউট সেঙ্গল ( ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৯.০৫.২৩) ৫) ফ্যাক্ট চেক: সেঙ্গল ইন মিউজিয়াম ( দি ওয়ার,২৯.০৫.২৩)।

 

1 Comments

Snehashis

02 June, 2023

খুব দরকারি লেখা।সমৃদ্ধ হলাম।

Post Comment