অনিমেষ মাথা নিচু করে জেব্রাক্রসিং পার করে হাঁটতে থাকে । সিগন্যাল এখনো লাল । মনে মাথায় তার আপাতত খিদে ছাপিয়ে যাচ্ছে লোনলিনেসকে । এভাবে শুরু করলে বাংলা সাহিত্যের বেস্টসেলার ইত্যাদির দিকে এগোনো । কারণ হাউজ এক অদ্ভুত আস্তাবল । সে ঋত্বিককে সেলিব্রিটি বানায় তার মদাসক্ত হেরে যাওয়া ইমেজ তৈরি করে । সে জিততে পারেনি যারা কেবল তাদেরই কথা বলে । ভাষার প্রতিটি মোচড়ে ছুঁড়ে দ্যায় এনজিও মার্কা আতুপুতু বিস্কুট । তাই এই গল্পটা গল্প নয় । কারণ গল্পে যারা বিশ্বাস করে তারা শাহীনবাগকেও গল্পই ভাবে । ভাবতে চায় । অনিমেষের কথা বলছিলাম । বলা মাত্র মনে এলো ওর ঘরে দ্যাখা সেই হারমোনিয়ামটা যার সা আর ধা জায়গাদুটো বাজতোনা । কখনো বাজেনি । তবুও যতটা বাজতো ততটাই যেন রাগ হংসধ্বনি । ইউটিউবে কুমার গান্ধর্ব চালানো মাত্র সে জানতে পারে রোহিত ভেমুলা মারা গ্যাছে । সুইসাইড অথবা রাষ্ট্র দ্বারা হত্যা । গলার সরু দাগটার কথা অনিমেষ অনেকবার ভেবেছিল । বোঝা গেছিল সন্ত কবীর যে পাখিটার একা উড়ে যাওয়ার কথা বলছেন সেজন আসলে রোহিত ভেমুলা । যার শেষ চিঠিতে বলা ছিল কার্ল সেগানের কথা । স্বর্গের উদ্যানের কথা । বাবাসাহেবের অ্যানাইহিলেশনের তত্ত্ব । কসমসের অতল শূন্যতায় হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনিমেষ না বুঝলেও সেদিন সে রেওয়াজ করেনি । কোনো বিলায়েত খান এমন করেছেন বলে শোনা যায়না । অথচ শ্রীপর্ণার কাছে গেলে সে চুপ করে থাকে । ঘাসের উপরে মাথাটা আলতো করে রাখে রাখতে রাখতে ভাবে গাছেদের যদি জ্বর আসে তবে তারা কোন রাগ শোনে । এবং আনন্দভৈরবী বাজে । সে শ্রীপর্ণাকে বলে স্বপ্নে দ্যাখা সেই সাদা ঘোড়াটার কথা যার পাশে বসে রোহিত ভেমুলা ওই ওই গাছটার ডালে দড়িটা লাগাতে যাচ্ছে । শ্রীপর্ণা ওর হাতের সবুজ হয়ে আসা শিরায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে সোসাইটি কিভাবে কালেক্টভলি ট্রমার কৃষ্ণপক্ষে ঢেকে যাচ্ছে । এভাবে অনিমেষ ভাবতে শুরু করে সে নিজেই রোহিত ভেমুলা । তার নিজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে দেখতে পায় নিজেরই গলায় দড়ির সরু দাগ । আত্মহত্যাপ্রবণতা এসব ভারী ভারী কথা ক্রমশ ওর নিজেরই কাছে হালকা হয়ে আসে । বয়সের গাছপাথর নেই লোকে বলে অথচ শনিবার শনিবার বজরঙ্গবলী মন্দিরে এখন খুব ভিড় হয়। আর মনসা শীতলারা কিঞ্চিত সাইড হয়ে গ্যাছে । মন্দির পেরিয়ে অনিমেষ পোস্টারের দোকানের দিকে যায় । মাটিতে পাতা । ফুটপাতের কারবার । চে গোভেরা থেকে শ্যামাপ্রসাদ সবই আছে । ভেমুলা নেই । আম্বেদকর নেই । রিচার্ড অ্যাটেনবরোর সিনেমাতেও গান্ধী ছিলেন আম্বেদকর ছিলেননা । এবং কোভিড ইত্যাদি বিষয়ে অনিমেষ অনেক ভেবে দেখেছে । মোদ্দা ব্যাপারটা না বুঝলেও মোদ্দা প্রশ্নটা সে বুঝেছে ; খিদে পেলে খাবে কি ? স্যানিটাইজার ?
খিদে নিয়ে শ্রীপর্ণার কাছে প্রশ্ন নেই উত্তর আছে । যদিও অনিমেষ জিজ্ঞেস করে দ্যাখেনি । গোলাপ না খিদে একথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে পিছিয়ে এসেছে কারণ মার্ক্স অথবা সিমোন দ্য বোভেয়া যেকোন একজনও কোথাও কি বলেছিলেন ভালোবাসা এটাই ইটসেল্ফ বিপ্লব । জিহাদ । প্রেমের থেকে বড় কোন রাজনৈতিক ডিসকোর্স নেই । শ্রীপর্ণা বলেছিল । অনিমেষের মনে আছে ।
পাঠকের বোরডম যদি আসে তবেই এই লেখা সার্থক । কারণ এই লেখা স্বয়ং চাইছেনা আপনি এই লেখা পড়ুন । লেখক অনিমেষ শ্রীপর্ণা কেউ চাইছেনা । আমরা চাইছি আপনি সেই ট্যাক্সিওয়ালার সঙ্গে কথা বলুন যে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার অথচ ভাবছে ধর্মের ষাঁড় এলে ধূলাগড়ের বদলা নেওয়া যাবে .........