ছেলেকে ফোন করেছিল, বলেছিল- চলে আয়। এখানে এসে যা হোক একটা কাজ জুটিয়ে নিস। বিবর জানিয়েছিল- এমনই ভাবছে। বলেছিল- কিছু না হোক ভ্যান রিকশাতো চালাতে পারবো।
ছেলের কথা ভেবে অভিরামের মাথা ঝুঁকে পড়েছিল। এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়ে, শেষে কিনা বাঁচার জন্য ভ্যান রিকশা! শিক্ষার মূল্য কী রইল?
অবিরাম একজন দিনমজুর। দুই সন্তানের বাবা। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে এক চাষী পরিবারে। সুতরাং কষ্ট করতে হয়। কষ্ট করতে হলেও সুখে আছে মেয়ে। ছেলে বোম্বের একটা কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করে। দায়বোধ আছে ছেলের। বাবা মার খোঁজখবর রাখে। প্রতি মাসে টাকা পাঠায় বাবা মা-এর জন্য। বাবাকে দিনমজুরের কাজ করতে নিষেধ করে। ছেলের মানবিক বোধের গল্প করে অভিরাম, কথার প্রেক্ষিতে, প্রিয়জনদের সঙ্গে। তবে গত এক বছর পয়সা একটু কম পাঠাচ্ছে বিবর, কেননা... অভিরাম দাদু হয়েছে। অবশ্য ছেলে যে অঙ্কেরই টাকা পাঠাক, অভিরাম সে টাকা ব্যাঙ্কে রাখে। দরকার হয় না ছেলের পাঠানো টাকায় হাত দেওয়ার। কারণ, অভিরাম এখনো রোজ সকালে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে হাবড়ার এক নাম্বার রেলগেটের দিনমজুরের বাজারে যায়। বিক্রি হতে। বিক্রি হয়ও। চলে যায় সে পয়সায় টোনাটুনির সংসার।
সন্ধ্যার কিছু আগে অভিরাম স্ত্রী কেয়াকে নিয়ে হরিসভায় যায়। যাওয়ার পথে ছোট্ট বাজার, বিলপাড়ের রমেশের চায়ের দোকানে চা বিস্কুট খায়। অভিরাম এই বাজারের সমস্ত দোকানদার শুধু নয় বাজারে আসা সমস্ত মানুষের সঙ্গে ওর সম্পর্ক আছে। সুতরাং চা খেতে খেতে অভিরাম গল্প জুড়ে দেয় পাশের মানুষেদের সঙ্গে।
আজও অভিরাম চা খেতে খেতে গল্প জুড়ে দিল। মাণিক বললো, জানো অভিরামদা মুসুরির ডাল এখন ১৪০ টাকা। তেলের দামও একই অনুপাতে বেড়েছে। সব মুদি মালের দাম বেড়েছে। সবজির বাজারেতো আগুন, হাত দেওয়ার উপায় নেই। একমাত্র আলুটার যা কম দাম আছে। অথচ, আমাদের মজুরি সেই কবে থেকে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
অভিরাম বললো- আমরা যারা দিনমজুরের কাজ করি, কিংবা রিকশা চালাই দর্জির কাজ করি বা এমন কোন কাজ যেমন কাঠমিস্ত্রি রাজমিস্ত্রি এদের ভাগ্য সব সময় দুরবস্থাকে ছুঁয়ে যায়। আমাদের মানিয়ে নিতে হয়। আট ক্লাস পর্যন্ত পড়ে বাবার হাত ধরতে হয়েছিল সংসারে কাঁধ বাঁধাতে। কাজ করতে হতো অন্যের, মানে দিনমজুরের। সেই যে ঝুড়িকোদাল কাঁধে উঠলো, এখনো একইভাবে বয়ে বেড়াই। যদিও পারিশ্রমিক সেভাবে বাড়েনি, যেভাবে সরকারি কর্মীদের মাইনে বেড়েছে। গত ত্রিশ বছরে সরকারি কর্মীদের মাইনে দশগুণ হয়েছে। সে তুলনায় আমরা অত্যন্ত রুগ্ন মাত্রায় আছি। কথাগুলো বলতে বলতে অভিরাম হরিসভার দিকে পা বাড়ায়।
পকেটের ফোনটা বেজে ওঠে অভিরামের। রিসিভ করল। ছেলে বিবর-এর ফোন।
ভালো-মন্দ খোঁজখবর নেওয়া শেষে বিবর জানালো- বাবা, বাড়ি ফিরবো স্থির করেছি। যদিও অফিসে কোন অসুবিধা হচ্ছে না, তবে, যে কলোনিতে ভাড়া থাকি সেখানে বাংলাদেশী বলে অমানবিক আচরণ করছে ওই রাজ্যের প্রশাসন। তোমরা দুশ্চিন্তা করবে না, দিন কয়েকের মধ্যেই আমরা ফিরে আসবো।
অভিরাম ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হরিসভায় কেয়ার পাশে গিয়ে বসলো। কিছু সময় নাম-গান শোনার পর, কেয়ার কানেকানে বললো- বাড়ি চলো কথা আছে। অভিরাম উঠে পড়ল।পেছন পেছন কেয়া।
কিছু সময়ের মধ্যে অভিরাম ও কেয়া নিজেদের ঘরে এসে পৌঁছালো। পথ চলার নীরবতাকে ঘরে ফিরে ভাঙলো কেয়া, বললো- তোমার কি বিবরের জন্য মন খারাপ হচ্ছে? অভিরাম কোন উত্তর করে না। কেয়া পুনরায় বলল- আমার তো মনে মনে আনন্দই হচ্ছে। দাদু ভাইকে কাছে পাবো। একমাত্র ছেলে ও বৌমার সঙ্গে আনন্দে দিন কাটাবো। বাকি জীবনটা এই আনন্দে কাটাতে পারলে মন্দ কি? অভিরাম এবার মুখ খুলল, বললো- আনন্দে থাকবো কথাটা ঠিক, কিন্তু একোন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, নিজেদের দেশের মধ্যেও বাংলাভাষীরা আক্রান্ত হচ্ছে? বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষদের বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি ভাবছি..... আমাদের মাতৃভাষাকে কেন ভিনদেশি ভাষা বলছে, অন্য রাজ্যের প্রশাসন, বিশেষ করে হিন্দি বলয়। কেয়া বলল- আমার মনে হয় এর ভেতর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। বর্তমানেতো দেখতে পাচ্ছি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে। টিভিতে তো দেখছি ভিন রাজ্যে, মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দিয়ে... পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে।
তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের দেশে ধর্মের রাজনীতি চলছে। ভারত হিন্দুদের দেশ, এমন ভাব বিশেষ একটা রাজনৈতিক দলের মধ্যে ফুটে উঠেছে। তাছাড়া তাদের কথাবার্তায় মনে হয়, ভারতবর্ষে থাকা অন্য ধর্মের মানুষদের তারা করুণা করছে।
অভিরাম আছো নাকি? উঠোনে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী নয়ন কাকার প্রশ্ন। অভিরাম ঘর থেকে বেরিয়ে বলে-আছি কাকা আসুন। নয়ন কাকা ঘরে এসে একটা চেয়ারে বসেন। কেয়া ও অভিরাম বসে চৌকিতে। নয়ন কাকা প্রশ্ন করে, তা অভিরাম ছেলে তো বাইরে থাকে, কেমন আছে? ও বম্বে থাকে তো? যা খবর পাচ্ছি, চিন্তার বিষয়।
বিবর ভালো আছে, আবার নেই। কেননা ওর অফিসে কোন সমস্যা নেই যা সমস্যা ওই কলোনিতে। মানে যেখানে বিবর ভাড়া থাকে। মহারাষ্ট্রের পুলিশ রাতের বেলায় কলোনিতে হানা দিচ্ছে, বলছে- মারাঠি ভাষায় কথা বলতে। যদিও বিবর মারাঠি তরতরিয়ে বলতে পারে কিন্তু বৌমা পারে না।
- যতই মারাঠি বলুক, ভিন রাজ্যের বাসিন্দা বলে কথা। একটা ভয়তো কাজ করে।
এজন্যই বোধ হয় বিবর চলে আসবে স্থির করেছে। আজিই ফোন করেছিল।
চলে আসাই ভালো। এক জায়গায় পরিবারের সবাই মিলে থাকার একটা আনন্দই আলাদা। নাতিটাকে কাছে পাবে, তাছাড়া ও তো শিক্ষিত ছেলে, এখানে একটা কাজের যোগাড় করে নিতে পারবে।
-কিন্তু নয়ন কাকা, যে জন্য বিবরকে তার কাজ ছেড়ে চলে আসতে হচ্ছে সেই বিষয়টা কি ঠিক? একই দেশের মানুষ হয়েও ভিন্ন রাজ্যে কাজে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হবে এমনকি দাগিয়ে দেওয়া হবে বাংলাদেশী, মানে ভিনদেশী বলে।
-এখানেই তো ভয়। দেশ আবার টুকরো হবার ভয়। আমাদের দেশের রাজনীতি করা মানুষগুলো, ভীষণ স্বার্থপর এবং আত্মকেন্দ্রিক। জনগণের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব নিয়ে এরা জনগণের কথা ভাবে না। এরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তাতে দেশের যত ক্ষতিই হোক। নকশাল পিরিয়ডের কথা মনে আছে তোমার, কিভাবে যুব সমাজের কণ্ঠ রোধ করেছিল তৎকালীন সরকার। রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল। লাশের মিছিল আমরা দেখেছি। অথচ যারা সেদিন নিহত হয়েছিল তারা দেশটাকে সবুজ করতে চেয়েছিল।
-দেশের রাজনৈতিক নেতারা কি চায় কাকা?
-ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তবে দেশের গণতন্ত্রকে এরা খুন করতে চাইছে বিষয়টা স্পষ্ট। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এরা চায় না। যাইহোক সাবধানে থেকো, অনেক রাত হয়েছে, আমি এখন উঠি, বিবরকে জানিয়ে দাও, সময় নষ্ট না করে, ব্যস্ত চলে আসতে।
নয়ন কাকা চলে গেলেন। কেয়া ও অভিরাম রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
অভিরামদের শোবার ঘরের জানালার পাশের কাঁঠাল গাছটাতে পাখিদের বাসা। সকালে সেই পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে অভিরামের। ঘুম থেকে উঠে অভিরাম কিছুটা সময় হাঁটাহাঁটির মধ্যে পুজোর ফুল তোলে। তারপর স্নান সেরে পুজোয় বসে। পুজো শেষে দুটো ডাল ভাত খেয়ে ঝুড়ি কোদাল কাঁধে বেরিয়ে যায় দিনমজুরের বাজারে।
আজ বাজারে মজুরের অনুপাতে তেমন তারতম্য না থাকলেও একজন মানুষকে অভিরামের নতুন মনে হচ্ছে। অভিরাম বিড়ি টানতে টানতে সেই নতুন মুখের কাছে যায়। মুখোমুখি হয়েপ্রশ্ন করে- তোমাকে ভাই নতুন মনে হচ্ছে?
নতুন মুখ বলে- হ্যাঁ দাদা। এখানে শ্রীনগর বাড়ি, উড়িষ্যায় কাজ করতাম, বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে উড়িষ্যা প্রশাসন আমার পুরো পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ফিরতে পেরেছি। ভয়ে উড়িষ্যার কাজটা ছেড়ে এখানে চলে এসেছি।
ওখানে কী কাজ করতে?
ওখানে ঠিকাদারের আন্ডারে সুপারভাইজার-এর কাজ করতাম।
তা, এখানে এই পরিশ্রমের কাজ তুমি করতে পারবে?
পারতে তো হবেই দাদা।
মনে পড়ে না অভিরামের, কতদিন আগে কাজ না পেয়ে ঘরে ফিরে এসেছিল। যদিও আজ ওর কাজ হয়েছিল কিন্তু শ্রীনগরের পরিযায়ী মানুষটাকে অভিরাম ওর কাজটা দিয়ে দিয়েছে। কেননা অভিরাম জেনেছিল আজ কাজ করে বাজার করলে, তবেই নতুন মুখের পরিবারের মুখে ভাত উঠবে।
অভিরামকে অসময়ে ফিরে আসতে দেখে, কেয়া প্রশ্ন করলো-
কাজ পেলে না?
পেয়েছিলাম, নতুন এক পরিযায়ী শ্রমিককে দিয়ে এসেছি।
তা তোমার কাজ অন্যকে দিলে আমাদের চলবে কি করে?
আজ দিয়েছি বলে তো রোজ দেবো না। ওর সমস্যার কথাটা জেনে, কাজটা ওকে দিতে বাধ্য হলাম।
ঠিক আছে, কাজের বিষয়টা মাথায় রেখো কেনোনা ছেলে বাড়ি ফিরছে। আর শোনো-বিবর ফোন করেছিল ও আজই ট্রেনে উঠবে, বাড়ি ফিরবে।
অভিরামের মনে হলো, একটা দুর্যোগের রাত পশ্চিমবাংলার মাথার উপর আছড়ে পড়তে চলেছে। যা ভারতবর্ষের হাওয়া কলে ধরা পড়েনি। তবে পড়বে খুব শীঘ্রই। একটা আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়বে দেশের কোণায় কোণায়। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজভূমিতে ফিরতে হলে, এই বাংলায় ভিন্ন রাজ্যবাসী কি স্বস্তিতে শান্তিতে থাকতে পারবে? বাঙালি সমাজ কি মানবতা দেখাবে? নাকি তৈরি করবে অমানবিকতার বাতাবরণ? প্রশ্নগুলো অভিরামকে উদ্ভ্রান্ত করে তোলে। অভিরাম একটা বিড়ি ধরায়। ধীর গতিতে পায়চারি করতে থাকে উঠোনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।
দুই)
অভিরাম দুপুরের আহার শেষে অনেকদিন পর আজ বিশ্রাম নিচ্ছে। বিশ্রাম নিলেও মন অস্থির, এক উৎকণ্ঠায় ডুবে আছে। যেন ভূত দেখার মত, এক ভয় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কেননা দলমত নির্বিশেষের মানুষ, পাড়ার সবার প্রিয় বিনয়, সকালে দেখা হলে বলেছিল-কাকু সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে আমার বাড়িতে একবার আসবেন। সামনে আমাদের রাজ্যে এস.আই.আর. আসছে। মানে ভোটার তালিকা সংশোধন। ২০০২এর ভোটার তালিকায় যদি নাম না থাকে, তাহলে নাম কাটা যেতে পারে। রাষ্ট্র চালুনি দিয়ে ছেঁকে ফেলবার একটা পরিকল্পনা করেছে। সে ক্ষেত্রে কি করার আছে বা কি ডকুমেন্ট থাকলে ভোটার তালিকায় নাম থেকে যাবে ওই বিষয়ে কিছু কথা বলব। আসতে ভুল করবেন না।
প্রায় সাতটা বেজে গেছে, অভিরাম বিনয়ের বাড়ির কাছাকাছি। দেখে উঠোন ভরে গেছে মানুষে। সবাই বসে আছে চুপচাপ। অভিরাম শুনতে পেল বিনয় বলছে- আমি সবাইকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে আসতে বলেছি আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি। তবুও আমি আর দশ মিনিট বাদে আপনাদের বলব কেন ডেকেছি।
দশ মিনিট অতিক্রম হতেই বিনয় দাঁড়িয়ে পড়ল, বলতে শুরু করলো- আপনারা হয়তো শুনেছেন আমাদের রাষ্ট্র এস. আই. আর অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে আপনাদের আবার বেনাগরিক করার খেলায় মেতেছে। উদাহরণ স্বরূপ আপনাদের বিহারের কথা বলব। মাত্র ৯৭ দিনে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ নাগরিককে এস. আই. আর মাধ্যমে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম নির্বাচন তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এই বাদ যাওয়া মানুষের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষ। সুতরাং আপনাদের আজ আমি একটা লিফলেট দেবো যাতে লেখা আছে কি কি ডকুমেন্ট বা নথি থাকলে আপনারা এদেশের নাগরিকের মান্যতা পাবেন। আমি অনুভব করছি সামনে আমাদের জন্য একটা ঘন কালো দুর্দিন নেমে আসছে, এজন্যই আজ আপনাদের ডেকেছি। সবাই সাবধানে থাকুন একে একে আসুন কাগজটি নিন। জানুন এস. আই. আর কি? এবং কি কি ডকুমেন্ট আপনাকে রেডি রাখতে হবে বেনাগরিক হওয়া থেকে বাঁচতে।
একে একে সবাই কাগজটা নিয়ে বিনয়কে নমস্কার জানিয়ে ফিরে যাচ্ছে। অভিরাম কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে-
প্রিয় নাগরিক বন্ধু,
নির্বাচন কমিশনের বলা এস. আই. আর-এর বিষয় কিছু কথা।
'এক, যাদের জন্ম ১৯৮৭ সালের পয়লা জুলাইয়ের আগে তাদের জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের প্রমাণ দিতে হবে। দুই, যাদের জন্ম ১৯৮৭ সালের পয়লা জুলাই থেকে ২০০৪-এর ২ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের বাবা অথবা মায়ের জন্মস্থানের প্রমাণ দিতে হবে। তিন, আর ২০০৪-এর ডিসেম্বরের পর জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের উভয়ের জন্মস্থান ও তারিখের প্রমাণ দিতে হবে। এর সাথে দিতে হবে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ১১টি পরিচয়পত্রের যেকোনো একটি প্রমাণ। কি কি সেই ১১টি পরিচয় পত্র?
১. কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারি কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হলে তার পরিচয় পত্র।
২. ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাইয়ের আগের নামের কোন সরকারি নথি। যেমন ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এল.আই.সি।
৩. জন্ম শংসাপত্র।
৪. বৈধ পাসপোর্ট।
৫. কোনও রাজ্য বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া শিক্ষার শংসাপত্র।
৬. এলাকায় স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র।
৭. তপশিলি জাতি উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র।
৮. জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকায় নাম।
৯. বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্র।
১০. রাজ্য সরকারের তৈরি করা পারিবারিক রেজিস্টার।
১১. সরকারের দেওয়া জমি বা বাড়ির নথি (দলিল বা পর্চা)।'
কাগজটি ভাঁজ করতে করতে বাড়ির পথে পা বাড়ালো অভিরাম। দরজায় কড়া নাড়তেই খুলে গেল। স্ত্রী কেয়া বলল কি ব্যাপার তোমাকে কেমন লাগছে, কি হয়েছে? অভিরাম পকেট থেকে কাগজটা বের করে কেয়ার হাতে দিয়ে বসে পড়ল ঘরের চৌকিটার কোনায়। মাথা ঝুঁকে বসে আছে অভিরাম, স্ত্রী পড়ে চলেছে রাষ্ট্রের নির্দয়তা। একসময় পড়া শেষ হলে কেয়া বলল এই ডকুমেন্টগুলোর কোন কাগজ কি আমাদের আছে? অভিরাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল- আমার মনে হচ্ছে আবার উদ্বাস্তু জীবনের দগদগে ঘা-এর যন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে।